হাওর বার্তা ডেস্কঃ মুসলমানদের নির্যাতনের অংশ হিসেবে এবার একে একে মুসলিম উপাসনালয় মসজিদ গুঁড়িয়ে দিতে শুরু করেছে চীন। তবে এ নিয়ে প্রতিক্রীয়া দেখাতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের এক ছাত্র গত মঙ্গলবার চীনের ঝেঝিয়াং প্রদেশের কেরিয়া আইতিকা মসজিদের ব্যাপারে জানতে চেয়ে টুইট বার্তায় লেখেন, ‘এই মসজিদটি কোথায় গেল?’
শতবর্ষ পুরনো ওই মসজিদ চীনের জাতীয় স্থাপনার মধ্যে অন্যতম এবং ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারিভাবে মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা থাকলেও গত বছরের শেষের দিকে রাজ্য পরিষদের সম্মতিতেই ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মসজিদটি ভেঙে ফেলার সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে। এমনকি স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতেও দেখা যাচ্ছে, সেই জায়গা থেকে মসজিদটি অদৃশ্য হয়ে গেছে। এমনকি কার্গিলিক নামের আরেকটি মসজিদও ভেঙে ফেলা হয়েছে।
গত বুধবার হোয়াইট হাউসের ডেমোক্রেটিক একজন সিনেটর জনসম্মুখে দাবি করেন, ঝেঝিয়াং প্রদেশে মুসলিমদের নির্যাতন থেকে শুরু করে বন্দিশিবিরে ধরে রাখার ব্যাপারে চীন যা শুরু করেছে, সে ব্যাপারে মার্কিন সরকারের দৃশ্যত কিছু করার দরকার। এর অংশ হিসেবে চীনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদদের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেতে পারে। এছাড়া চীনকে নজরদারি করার যন্ত্রের যোগান বন্ধ এবং চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে মার্কিন কোম্পানিগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করা দরকার। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের অযুহাত থাকা উচিত নয় বলেও মনে করেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে ঝেঝিয়াং প্রদেশের বন্দিশিবিরের ছবি প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় উইঘুর মুসলমানদের ছবি তুলে রাখে সে দেশের পুলিশ। এছাড়া তাদের যোগাযোগের ওপর নজরদারি করা হয় এবং ধর্মীয় বিধান পালনের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়। এমনকি মসজিদে সর্বোচ্চ নজরদারি করা হয় এবং কিন্ডারগার্টেনের শিশুদের জিজ্ঞাসা করা হয়, তাদের বাবা-মা বাড়িতে ধর্মীয় বিধান মেনে চলে কিনা সে ব্যাপারে।
চীনে উইঘুর মুসলমানদের নির্যাতনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল মোটামুটি ওয়াকিবহাল। তবে এখন পর্যন্ত চীনের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মহল কার্যত কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। অন্যদিকে বরাবরই উইঘুর মুসলমানদের নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে চীন। চীনের দাবি, সে দেশে উইঘুরদের জন্য প্রশিক্ষণ শিবির করা হয়েছে; কোনো ধরনের বন্দিশিবির নেই।
মার্কিন সরকারের রাজ্য, বাণিজ্য ও কোষাগার বিভাগকে এক চিঠিতে সিনেটররা জানান, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ কিংবা অন্যান্য সামগ্রী প্রদান করা মার্কিন সংস্থাগুলোর তালিকা তৈরির জন্য। কারণ, সেসব সহায়তা নিয়েই নজরদারি ও গণহারে ধরপাকড় করে চীন। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে ‘হাইকভিশন’ ও ‘দাহুয়া’ নামক চীনের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ওই সিনেটররা জানতে চান, প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মার্কিন কোনো প্রতিষ্ঠান চীনে গণহারে নজরদারি থেকে শুরু করে ধরপাকড়ের প্রযুক্তি সরবরাহে সহযোগিতা করছে কিনা?
এদিকে গত সপ্তাহে ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি হুয়াওয়ে’কে সহায়তার জন্য মার্কিন সরকারকে রাজি করানোর চেষ্টা করে। অথচ গত বছরের ঠিক এই সময় হুয়াওয়ের সঙ্গে যৌথভাবে এমআইটি ঘোষণা দেয়, তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে মুখমণ্ডল চিহ্নিত করার কাজ করছে। ওই একই সময় সেন্সনেটস এর শেয়ারহোল্ডার সেন্সটাইম ঘোষণা দেয়, তাদের কাছে ২৫ লাখ মানুষের তথ্য রয়েছে। এমনকি ৬৫ লাখ মানুষ গত ২৪ ঘণ্টায় কোথায় অবস্থান করেছে, সেটাও তাদের জানা।
তবে সে ব্যাপারে মুখ খোলেনি এমআইটি। সেন্সনেটস এর শেয়ারহোল্ডার হওয়ার কারণে এ ব্যাপারে এমআইটির জানার কথা। আর এমআইটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে হুয়াওয়ে দায় এড়াতে পারে না। পরে প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, সেই প্রযুক্তি নেটপোসা দিয়েছে। যার কার্যালয় সিলিক্যান ভ্যালি ও বোস্টনে রয়েছে। আর ওই প্রতিষ্ঠানটি মার্কিন বিনিয়োগে চলে। এমনকি মাইক্রোসফটের সঙ্গেও পার্টনারশিপ রয়েছে সেন্সনেটের।
এই সপ্তাহে ২৪ জন সিনেটর এবং ১৯ জন প্রতিনিধি মার্কিন প্রশাসনের কাছে জানতে চান, ঝেঝিয়াং প্রদেশে নজরদারির জন্য চীনের কোম্পানিকে মার্কিন কোম্পানি কেন প্রযুক্তি সরবরাহ করছে এবং যৌথভাবে কেন বড় ধরনের তথ্য জোগাড় করছে? এছাড়া মার্কিন সামগ্রী ব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে?