হাওর বার্তা ডেস্কঃ বুথফেরত জরিপ (এক্সিট পোল) বলছে ফের ক্ষমতায় ফিরছেন নরেন্দ্র মোদি। আর উত্তরপ্রদেশেও ফলাফল মোটামুটি ভালো হবে বলেই আশা করা হচ্ছে। কিন্তু খুশি নয় নয়াবন। মোদি জিতলে হয়ত ভারত ছেড়েই চলে যাবেন উত্তরপ্রদেশের এই গ্রামের বাসিন্দারা।
নয়াবনে বেশির ভাগই সংখ্যালঘু পরিবারের বাস। তবে একসময় হিন্দুরাও তাঁদের বাড়িতে আসতেন, কথা বলতেন, একে অপরের সুখ-দুঃখের সাথী ছিলেন। কিন্তু সেই দিন আর নেই।
রয়টার্সে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট বলছে, বিজেপি আমলে ভেদাভেদ এত চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এই গ্রামের মানুষ রীতিমত সন্ত্রস্ত।
গুলফম আলি নামে ওই গ্রামের এক বাসিন্দা সাংবাদিককে জানিয়েছেন, ‘একটা সময় দুঃখে কিংবা আনন্দে হিন্দু-মুসলিমরা একে অপরের পাশে থাকতেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে কিংবা কারও মৃত্যুতে একে অপরের বাড়ি যেতেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু আজ এক গ্রামে থেকেও যেন আলাদা ভাবে বাঁচতে হচ্ছে।’
২০১৪-তে ক্ষমতায় আসেন মোদী। উত্তরপ্রদেশও চলে যায় বিজেপির হাতে। ২০১৭-তে মুখ্যমন্ত্রী হন যোগী আদিত্যনাথ।
ওই ব্যক্তির অভিযোগ, মোদী আর যোগী উভয়ে মিলেই হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করতে চাইছে। তাঁরা ওই গ্রামে থাকতে চাইলেও আর উপায় নেই।
গত দু’বছরে গ্রাম ছেড়েছে অন্তত এক ডজন মুসলিম পরিবার। এবার বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাকিরাও চলে যাবে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তিনি। কারণ এত ভেদাভেদ নিয়ে তাদের পক্ষে গ্রামে বাস করা সম্ভব হচ্ছে না।
এই গ্রামেও উঠেছে গোহত্যার অভিযোগ। কোনও কোনও হিন্দু নাকি বলেছেন, এখানে গোহত্যা করা হয়। এই অভিযোগে একবার এখানকার রাস্তা অবরোধ করা হয়, গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এখানেই সংঘর্ষ চলাকালীন গুলিতে মৃত্যু হয় এক পুলিশ অফিসারের।
ধর্মীয় হিংসা নতুন নয় নয়াবনে। ১৯৭৭-এ সেখানে মসজিদ ভাঙার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেসব ভুলে গিয়েছিল সবাই। আনন্দেই ছিল ‘রাম’ ও ‘রহিম’।
২০১৭ থেকে বদলে যায় পরিস্থিতি। প্রথমে আজানের মাইক বাজানো বন্ধ করতে বলা হয়। সেটাও মেনে নেন মুসলিমরা। হিন্দুরা গ্রাম জুড়ে মুসলিম-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে।
গ্রামবাসীরা জানান, হঠাতই বদলে যায় হিন্দুদের চেহারা। কেউ অসুস্থ হলেও আর প্রতিবেশীদের সাহায্য পাওয়া যায় না।
গোহত্যাকারী সন্দেহে জেলে ঢোকানো হয়েছিল ওই এলাকার বাসিন্দা শরফুদ্দিন সইফিকে। কিছুদিন জেলে রাখার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়, কারণ পুলিশ তার কোনও দোষে খুঁজে পায়নি।