ঢাকা ১০:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবার কবুতরের মাধ্যমে ঢাকায় ইয়াবা পাচার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:২৭:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৯
  • ২৯১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চলমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে বেকায়দায় আছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তাই তারা মাদক পাচারের জন্য একের পর এক অভিনব পন্থা খুঁজে বের করছে। এবার কবুতরের মাধ্যমে ইয়াবা পাচারের পন্থা বেছে নিয়েছে তারা।

প্রাচীন কালে কবুতরের মাধ্যমে চিঠি আদান-প্রদান করা হত। প্রেরিত চিঠি একটি চোঙার মধ্যে রেখে সেটি কবুতরের পুচ্ছের ওপরে মাঝখানের পালকে বেঁধে রাখা হত। সেই পন্থায় কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ইয়াবা পাঠাচ্ছে পাচারকারীরা। কবুতরকে যেখান থেকেই ছেড়ে দেয়া হোক, কবুতর নিজের বাসস্থানে ফিরে যাবেই৷ এ তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে কবুতরের পুচ্ছের ওপরে মাঝখানের পালকে ইয়াবার প্যাকেট বেঁধে কক্সবাজার থেকে উড়িয়ে দেয়া হয়। আর ঢাকায় নির্ধারিত এলাকায় পৌঁছে যায় তা তিন থেকে চার দিনের মধ্যে।

একেকটি কবুতরের দুই পায়ে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রামের মতো করে ইয়াবা বড়ি নিয়ে আসা যায় বলে জানিয়েছেন এই পাচারে জড়িত একজন। একেকটি ইয়াবা বড়ির ওজন ০.১ থেকে ০.২ গ্রাম। এই হিসাবে ২৫০ থেকে ৫০০টি বড়ি বয়ে নিতে পারে একেকটি কবুতর।

চলতি শতকের শুরু থেকেই মাদকের তালিকায় ইয়াবার নাম যুক্ত হয়। আর এখন মাদকাসক্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশই এই বড়িতে আসক্ত বলে তথ্য মিলেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ার পর গত বছরের মে মাস থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে সন্দেহভাজন তিন শতাধিক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে।

তবে এত প্রাণহানির পরও ইয়াবার কারবার বন্ধ হয়নি। রাজধানীতে যেসব এলাকায় ইয়াবা কেনাবেচা হতো, বেশ কিছু ক্ষেত্রে এলাকার নাম পাল্টেছে মাত্র। আর নতুন নতুন এবং অভিনব পদ্ধতিতে এই মাদক পাচার করে এনে আসক্তদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে ইয়াবার চালান আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। আর কক্সবাজার হয়েই তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই জেলাটিকেও রেখেছে নজরদারিতে। ফলে সনাতন পদ্ধতি ছেড়ে পাচারকারীরাও নতুন নতুন কৌশল করতে ব্যস্ত। কেবল কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নয়, ঢাকাতেও চালান পাঠাতে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় বড়ি পাঠাতে কবুতর ব্যবহার করা হয়।

ইয়াবা পাচারের এই অভিনব উপায়ের তথ্য জেনে পুলিশও বিষয়টি নিয়ে মাঠে নেমেছে। একজন কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।

গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে, ইয়াবা পাচারে ব্যবহার করা হয় গিরিবাজ নামে এক জাতের কবুতর। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রেসার কবুতরে রূপ দেয়া হয় এই পাখিকে। এছাড়া প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার জন্য ব্যবহার করা হয় থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের হুমা জাতের কবুতর। ছয় মাস প্রশিক্ষণ দিলে এসব কবুতর এক থেকে দেড়শো কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, কক্সবাজারের উখিয়ায় হোয়্যাইককং নামের স্থানে রেসার কবুতরের আধিক্য বেশি। তবে গত ছয় মাস আগেও এখানে কবুতরের আনাগোনা এখনকার চাইতে কম ছিল। বর্তমানে হোয়্যাইককং থেকে ঢাকার উদ্দেশে ইয়াবাসহ কবুতর পাঠানো হয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার সদরের কালুর দোকান এলাকা, কক্সবাজার বিমানবন্দর সংলগ্ন বাহারছড়া, কলাতলী, দড়িয়ানগর, বাংলাবাজার এলাকাতেও রেসার কবুতরের আনাগোনা আছে। কবুতর দিয়ে ইয়াবা পাচারের বিষয়টি তদন্তে একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

এবার কবুতরের মাধ্যমে ঢাকায় ইয়াবা পাচার

আপডেট টাইম : ০৪:২৭:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চলমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে বেকায়দায় আছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তাই তারা মাদক পাচারের জন্য একের পর এক অভিনব পন্থা খুঁজে বের করছে। এবার কবুতরের মাধ্যমে ইয়াবা পাচারের পন্থা বেছে নিয়েছে তারা।

প্রাচীন কালে কবুতরের মাধ্যমে চিঠি আদান-প্রদান করা হত। প্রেরিত চিঠি একটি চোঙার মধ্যে রেখে সেটি কবুতরের পুচ্ছের ওপরে মাঝখানের পালকে বেঁধে রাখা হত। সেই পন্থায় কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ইয়াবা পাঠাচ্ছে পাচারকারীরা। কবুতরকে যেখান থেকেই ছেড়ে দেয়া হোক, কবুতর নিজের বাসস্থানে ফিরে যাবেই৷ এ তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে কবুতরের পুচ্ছের ওপরে মাঝখানের পালকে ইয়াবার প্যাকেট বেঁধে কক্সবাজার থেকে উড়িয়ে দেয়া হয়। আর ঢাকায় নির্ধারিত এলাকায় পৌঁছে যায় তা তিন থেকে চার দিনের মধ্যে।

একেকটি কবুতরের দুই পায়ে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রামের মতো করে ইয়াবা বড়ি নিয়ে আসা যায় বলে জানিয়েছেন এই পাচারে জড়িত একজন। একেকটি ইয়াবা বড়ির ওজন ০.১ থেকে ০.২ গ্রাম। এই হিসাবে ২৫০ থেকে ৫০০টি বড়ি বয়ে নিতে পারে একেকটি কবুতর।

চলতি শতকের শুরু থেকেই মাদকের তালিকায় ইয়াবার নাম যুক্ত হয়। আর এখন মাদকাসক্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশই এই বড়িতে আসক্ত বলে তথ্য মিলেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ার পর গত বছরের মে মাস থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে সন্দেহভাজন তিন শতাধিক মাদক কারবারি নিহত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে।

তবে এত প্রাণহানির পরও ইয়াবার কারবার বন্ধ হয়নি। রাজধানীতে যেসব এলাকায় ইয়াবা কেনাবেচা হতো, বেশ কিছু ক্ষেত্রে এলাকার নাম পাল্টেছে মাত্র। আর নতুন নতুন এবং অভিনব পদ্ধতিতে এই মাদক পাচার করে এনে আসক্তদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে ইয়াবার চালান আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। আর কক্সবাজার হয়েই তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই জেলাটিকেও রেখেছে নজরদারিতে। ফলে সনাতন পদ্ধতি ছেড়ে পাচারকারীরাও নতুন নতুন কৌশল করতে ব্যস্ত। কেবল কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নয়, ঢাকাতেও চালান পাঠাতে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় বড়ি পাঠাতে কবুতর ব্যবহার করা হয়।

ইয়াবা পাচারের এই অভিনব উপায়ের তথ্য জেনে পুলিশও বিষয়টি নিয়ে মাঠে নেমেছে। একজন কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।

গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে, ইয়াবা পাচারে ব্যবহার করা হয় গিরিবাজ নামে এক জাতের কবুতর। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রেসার কবুতরে রূপ দেয়া হয় এই পাখিকে। এছাড়া প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার জন্য ব্যবহার করা হয় থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের হুমা জাতের কবুতর। ছয় মাস প্রশিক্ষণ দিলে এসব কবুতর এক থেকে দেড়শো কিলোমিটার দূর থেকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা বলেন, কক্সবাজারের উখিয়ায় হোয়্যাইককং নামের স্থানে রেসার কবুতরের আধিক্য বেশি। তবে গত ছয় মাস আগেও এখানে কবুতরের আনাগোনা এখনকার চাইতে কম ছিল। বর্তমানে হোয়্যাইককং থেকে ঢাকার উদ্দেশে ইয়াবাসহ কবুতর পাঠানো হয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার সদরের কালুর দোকান এলাকা, কক্সবাজার বিমানবন্দর সংলগ্ন বাহারছড়া, কলাতলী, দড়িয়ানগর, বাংলাবাজার এলাকাতেও রেসার কবুতরের আনাগোনা আছে। কবুতর দিয়ে ইয়াবা পাচারের বিষয়টি তদন্তে একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।