ঢাকা ০৬:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষকের সোনালী হাসি হাটে মলিন হয়ে যাচ্ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:১১:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৯
  • ২৮২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সরকারের নির্দেশ থাকার পরও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সরকারিভাবে ধান-চাল কেনা শুরু হয়নি। এ কারণে ধানের দাম কমে যাচ্ছে। সংসারের প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হয়ে কৃষকরা কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী গত ২৫ এপ্রিল থেকে ধান ও চাল কেনা শুরু হওয়ার কথা। ধানের ভালো ফলন হলেও বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে কৃষকের সোনালী হাসি মলিন হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোছা. রুম্মান আক্তার বলেন, এ বছর পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নে ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদন হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৬২ টন। এক্ষেত্রে হাইব্রিড জাতের ১৩ হাজার ২৬৩ টন এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের ৪৫ হাজার ৬৯৫ টন রয়েছে। তবে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চালের আকারে হাইব্রিড প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৭৫ টন এবং উচ্চ ফলনশীল ৩ দশমিক ৯২ টন।

খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ীতে ২৬ টাকা কেজি দরে ৪৩৩ টন ধান এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে চার হাজার ৩৭৪ টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৫ এপ্রিল থেকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ও চালকল মালিকদের কাছ থেকে চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ফুলবাড়ীতে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ধান ও চাল কেনা শুরু না হওয়ায় ধানের দাম কমে গেছে।

উপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের চোকিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন সরকার বলেন, বোরো ধান আবাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আবওয়া ভালো ছিল। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু হাট-বাজারে ধানের দাম নেই।

কাঁটাবাড়ি গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ১১ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন তিনি। ৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ধান তোলার পর বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে হিসাব মিলছে না তার। সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু না হওয়ায় তিনি বাজারে ৭৫ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ধান বিক্রি করেছেন ৭০০-৭৫০ টাকা দরে। অথচ সরকারের কাছে ওই ধান বিক্রি করতে পারলে প্রতিমণ ৭২৪ টাকা করে পেতেন।

খাদ্যগুদামে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু না করার কথা স্বীকার করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. গোলাম মওলা বলেন, কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত ধান সরাসরি খাদ্যগুদামে বিক্রি করতে পারেন সেজন্য উপজেলা কৃষি দপ্তরের মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকায় তারাই থাকবেন যাদের কৃষি দফতরের কৃষি উপকরণ কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। কৃষি দফতরের তৈরিকৃত তালিকায় নাম থাকা কৃষকদের মধ্যে থেকে লটারির মাধ্যমে ৮৩২ জন কৃষককে বেছে নেওয়া হবে।

যারা সরকারি গুদামে ধান দিতে পারবেন। কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করতে দেরির জন্য ধান সংগ্রহ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। তবে ৩১ আগস্টের মধ্যে যে পরিমাণ ধান ও চাল কেনার নির্দেশ আছে, সে পরিমাণ কেনা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

কৃষকের সোনালী হাসি হাটে মলিন হয়ে যাচ্ছে

আপডেট টাইম : ০১:১১:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সরকারের নির্দেশ থাকার পরও দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সরকারিভাবে ধান-চাল কেনা শুরু হয়নি। এ কারণে ধানের দাম কমে যাচ্ছে। সংসারের প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হয়ে কৃষকরা কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী গত ২৫ এপ্রিল থেকে ধান ও চাল কেনা শুরু হওয়ার কথা। ধানের ভালো ফলন হলেও বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে কৃষকের সোনালী হাসি মলিন হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোছা. রুম্মান আক্তার বলেন, এ বছর পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নে ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদন হয়েছে ৫৮ হাজার ৯৬২ টন। এক্ষেত্রে হাইব্রিড জাতের ১৩ হাজার ২৬৩ টন এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের ৪৫ হাজার ৬৯৫ টন রয়েছে। তবে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চালের আকারে হাইব্রিড প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৭৫ টন এবং উচ্চ ফলনশীল ৩ দশমিক ৯২ টন।

খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ীতে ২৬ টাকা কেজি দরে ৪৩৩ টন ধান এবং ৩৬ টাকা কেজি দরে চার হাজার ৩৭৪ টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৫ এপ্রিল থেকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান ও চালকল মালিকদের কাছ থেকে চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ফুলবাড়ীতে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ধান ও চাল কেনা শুরু না হওয়ায় ধানের দাম কমে গেছে।

উপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের চোকিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন সরকার বলেন, বোরো ধান আবাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আবওয়া ভালো ছিল। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু হাট-বাজারে ধানের দাম নেই।

কাঁটাবাড়ি গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ১১ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন তিনি। ৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ধান তোলার পর বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে হিসাব মিলছে না তার। সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু না হওয়ায় তিনি বাজারে ৭৫ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ধান বিক্রি করেছেন ৭০০-৭৫০ টাকা দরে। অথচ সরকারের কাছে ওই ধান বিক্রি করতে পারলে প্রতিমণ ৭২৪ টাকা করে পেতেন।

খাদ্যগুদামে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু না করার কথা স্বীকার করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. গোলাম মওলা বলেন, কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত ধান সরাসরি খাদ্যগুদামে বিক্রি করতে পারেন সেজন্য উপজেলা কৃষি দপ্তরের মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকায় তারাই থাকবেন যাদের কৃষি দফতরের কৃষি উপকরণ কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। কৃষি দফতরের তৈরিকৃত তালিকায় নাম থাকা কৃষকদের মধ্যে থেকে লটারির মাধ্যমে ৮৩২ জন কৃষককে বেছে নেওয়া হবে।

যারা সরকারি গুদামে ধান দিতে পারবেন। কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করতে দেরির জন্য ধান সংগ্রহ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। তবে ৩১ আগস্টের মধ্যে যে পরিমাণ ধান ও চাল কেনার নির্দেশ আছে, সে পরিমাণ কেনা হবে।