হাওর বার্তা ডেস্কঃ এ মসজিদটি এ অঞ্চলের ইতিহাসের এক বিরল নিদর্শন। মসজিদটির নাম ‘শহীদী মসজিদ” এ নামকরণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কৌতূহলের অন্ত নেই। মূল শহরের প্রাণকেন্দ্রে মসজিদটির অবস্থান। শহীদী মসজিদের ইতিহাস খুব পুরনো না হলেও এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। মসজিদটিকে আধুনিকরূপে নির্মাণের ক্ষেত্রে যিনি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি হলেন হযরত মাওলানা আতাহার আলী (রহঃ)। মাওলানা আতাহার আলী পুরান থানার এ মসজিদে আসেন ১৯৩৮ সালে। মসজিদের নির্মাণ সমাপ্তির পর তিনি ১৩৬৪ বাংলা সনের ৮ই কার্তিক মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এক অভূতপূর্ব বিশাল সুউচ্চ পাঁচতলা মিনারের ভিত্তি স্থাপন করেন। এরপরই মসজিদটি ঐতিহাসিক মসজিদে রূপান্তরিত হয় এবং নামকরণ করা হয় “শহীদী মসজিদ” নামে।
শহীদী মসজিদের প্রতিষ্ঠার পেছনে একটি রক্তস্নাত ঘটনা এতদ্ঞ্চলের মুসলিম সমপ্রদায়কে এখনো আলোড়িত এবং উদ্বেলিত করে তুলে। খুব একটা বেশি দিন আগের কথা নয়।
১৯৪০ সালের ঘটনা। প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা আতহার আলীর হাতে সবে মসজিদটির সংস্কার শুরু হয়েছে। প্রথানুযায়ী হিন্দু সমপ্রদায় প্রতিবছরের মতো সে বছরও এ মসজিদের সামনের সদর রাস্তা দিয়ে দূর্গাপূজা শেষে তাদের বিগ্রহ মিছিল বাজনা বাজিয়ে নিতে চায়। মুসলিম সমপ্রদায় এতে বাদ সাধে। তাদের দাবি, অন্তত এ পথে বিগ্রহ নেয়া হলেও মসজিদের সামনে এসে বাদ্য-বাজনা বাজানো চলবেনা।
কিন্ত’ উভয়ই নিজস্ব অবস্থানে অটল থাকে। কোন ছাড় দিতে নারাজ। নির্দিষ্ট সময় যতোই এগিয়ে আসতে থাকলো ততোই উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বৃটিশ সরকার এলাকায় গুর্খা সৈন্য মোতায়েন করে। রাত ৮টায় চরম মুহুর্ত ঘনিয়ে আসে এবং সৈন্যদের গুলিতে লুটিয়ে পড়েন ৪ জন মসজিদের মুসল্লি এ বিয়োগান্ত ঘটনার খবর সারাদেশে মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন মুসলিম ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। বিশিষ্ট আলেমগণ নিহতদের ইসলামের নামে শহীদ বলে আখ্যায়িত করেন।
সেই থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পুরানথানার এ মসজিদটি শহীদী মসজিদ নামে প্রতিষ্ঠা পায়। এই ঘটনায় যারা শহীদ হন তারা হলেন-আছির উদ্দিন, মানিক মিয়া, কালার বাপ ও নেহাল মিয়া। শহীদী মসজিদটি ক্রমশই প্রসারতা, খ্যাতি ও মর্যাদা লাভ করছে।