ঢাকা ১১:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১ মণ ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে না ১ কেজি গরুর মাংস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৯:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০১৯
  • ২৫২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এ বছরের বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান নিয়ে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কৃষকরা বিপাকে পড়েছে। ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তারা চরমভাবে হতাশ। ১ মণ ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে না ১ কেজি গরুর মাংস। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারের বোরো মৌসুমে কোটালীপাড়া উপজেলায় ১ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। এ উপজেলার লোকসংখ্যা অনুযায়ী চাহিদা ৬১ হাজার ৫৯৪ মেট্রিকটন। অপরদিকে এ উপজেলায় সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা হবে মাত্র ৮২৪ মেট্রিকটন।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১ লাখ মেট্রিকটন ধান কৃষকদের মজুদ থাকবে। উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রিমূল্য কম থাকায় এই ধান নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়েছে।

অনেক কৃষকের ঘরে আবার গত বছরের উৎপাদিত ধান রয়ে গেছে। দাম কম থাকার কারণে এ সব ধান কৃষকরা গত বছর বিক্রি করেনি। তাই এসব কৃষকরা সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। উপজেলার পূর্ণবর্তী গ্রামের কৃষক অলিউল্লাহ হাওলাদার বলেন, আমি এ বছর ২৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। প্রায় ১২ শ মণ ধান আমার উৎপাদন হয়েছে। আমার পরিবারে বছরে ১ শ মণ ধান খাবার জন্য প্রয়োজন হয়। বাকি ধান আমি বিক্রি করব। বর্তমানে বাজারে ৫ শ টাকা করে মোটা ধান বিক্রি হয়।

আমার প্রতিমণ ধান উৎপাদন করতে ৬ শ থেকে ৭ শ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাজারে যে দাম আছে সেই দামে ধান বিক্রি করলে প্রতিমণ ধানে দেড় থেকে ২ শ টাকা লস হবে।

কুরপালা গ্রামের চয়ন হাওলাদার বলেন, গত শুক্রবার ঘাঘর বাজারে গিয়ে ৫ শ টাকা করে মোটা ধান বিক্রি করেছি। বাড়িতে মেহমান থাকায় গরুর মাংস কিনতে হয়েছে ৫৫০ টাকা করে। এখানে এখন ১ মণ ধান বিক্রি করলে ১ কেজি গরুর মাংস কেনা যায় না। শুনেছি সরকার ১০৪০ টাকা করে ধান ক্রয় করবে। এই দামে ধান বিক্রি করতে পারলে আমরা লাভবান হব। উদীচী কোটালীপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক রতন সেন কংকন বলেন, ব্যক্তিজীবনে আমিও একজন কৃষক। আমি মনে করি আগামীতে কৃষকরা যদি রপ্তানিমুখী ধান চাষ করে তাহলে তারা অনেকটাই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। এ জন্য সরকারকে রপ্তানিমুখী ধান চাষে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

অপরদিকে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমির পরিচালক কৃষিবিদ মাহামুদুন্নবী বলেন, কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ ও ভর্তুকি বাড়িয়ে দিলে কৃষকদের ধান চাষসহ অন্যান্য চাষে খরচ কম হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলায় এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমাদের হিসেব অনুযায়ী এ উপজেলায় এ বছর ১ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। সরকারিভাবে ধান ক্রয় ও চাহিদাকৃত ধান বাদে কৃষকদের ঘরে প্রায় ১ লাখ মেট্রিকটন ধান মজুদ থেকে যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

১ মণ ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে না ১ কেজি গরুর মাংস

আপডেট টাইম : ০৪:৪৯:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এ বছরের বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান নিয়ে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কৃষকরা বিপাকে পড়েছে। ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তারা চরমভাবে হতাশ। ১ মণ ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে না ১ কেজি গরুর মাংস। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারের বোরো মৌসুমে কোটালীপাড়া উপজেলায় ১ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। এ উপজেলার লোকসংখ্যা অনুযায়ী চাহিদা ৬১ হাজার ৫৯৪ মেট্রিকটন। অপরদিকে এ উপজেলায় সরকারিভাবে ধান ক্রয় করা হবে মাত্র ৮২৪ মেট্রিকটন।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১ লাখ মেট্রিকটন ধান কৃষকদের মজুদ থাকবে। উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রিমূল্য কম থাকায় এই ধান নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়েছে।

অনেক কৃষকের ঘরে আবার গত বছরের উৎপাদিত ধান রয়ে গেছে। দাম কম থাকার কারণে এ সব ধান কৃষকরা গত বছর বিক্রি করেনি। তাই এসব কৃষকরা সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। উপজেলার পূর্ণবর্তী গ্রামের কৃষক অলিউল্লাহ হাওলাদার বলেন, আমি এ বছর ২৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। প্রায় ১২ শ মণ ধান আমার উৎপাদন হয়েছে। আমার পরিবারে বছরে ১ শ মণ ধান খাবার জন্য প্রয়োজন হয়। বাকি ধান আমি বিক্রি করব। বর্তমানে বাজারে ৫ শ টাকা করে মোটা ধান বিক্রি হয়।

আমার প্রতিমণ ধান উৎপাদন করতে ৬ শ থেকে ৭ শ টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে বাজারে যে দাম আছে সেই দামে ধান বিক্রি করলে প্রতিমণ ধানে দেড় থেকে ২ শ টাকা লস হবে।

কুরপালা গ্রামের চয়ন হাওলাদার বলেন, গত শুক্রবার ঘাঘর বাজারে গিয়ে ৫ শ টাকা করে মোটা ধান বিক্রি করেছি। বাড়িতে মেহমান থাকায় গরুর মাংস কিনতে হয়েছে ৫৫০ টাকা করে। এখানে এখন ১ মণ ধান বিক্রি করলে ১ কেজি গরুর মাংস কেনা যায় না। শুনেছি সরকার ১০৪০ টাকা করে ধান ক্রয় করবে। এই দামে ধান বিক্রি করতে পারলে আমরা লাভবান হব। উদীচী কোটালীপাড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক রতন সেন কংকন বলেন, ব্যক্তিজীবনে আমিও একজন কৃষক। আমি মনে করি আগামীতে কৃষকরা যদি রপ্তানিমুখী ধান চাষ করে তাহলে তারা অনেকটাই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। এ জন্য সরকারকে রপ্তানিমুখী ধান চাষে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

অপরদিকে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমির পরিচালক কৃষিবিদ মাহামুদুন্নবী বলেন, কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ ও ভর্তুকি বাড়িয়ে দিলে কৃষকদের ধান চাষসহ অন্যান্য চাষে খরচ কম হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলায় এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমাদের হিসেব অনুযায়ী এ উপজেলায় এ বছর ১ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। সরকারিভাবে ধান ক্রয় ও চাহিদাকৃত ধান বাদে কৃষকদের ঘরে প্রায় ১ লাখ মেট্রিকটন ধান মজুদ থেকে যাবে।