ঢাকা ১২:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেসব সত্য চেপে গেলেন আব্দুন নূর তুষার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০৯:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯
  • ২৬১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাশরাফি ডাক্তারদের সাথে যে ফাটা কেস্টগিরি দেখিয়েছেন তা নিয়ে আব্দুন নূর তুষার একটা লেখা লিখেছেন। ইতোমধ্যে সেই লেখা ভাইরাল। যেহেতু তুষার নিজে ডাক্তারি পড়েছেন সেই জায়গা থেকে তিনি এই ঘটনায় ডাক্তারদের পক্ষ নিবেন সেইটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি এখন পেশায় সাংবাদিক। তার কাছ থেকে চিকিৎসাব্যবস্থার পুরো চিত্রটা আসলে ভাল হতো।

তিনি ডাক্তারির সাথে মাশরাফিদের ক্রিকেট খেলার তুলনা করেছেন নানান ‘নাই নাই’ দিক থেকে। যেটুকু আছে সেইটুকুর সদ্ব্যবহার না হওয়াটার কারণ হিসেবে তিনি ‘নাই নাই’ থিওরি আওড়াইছেন পুরা লেখাটাতেই। অস্বীকার করার কোন কারণ নাই তিনি যেসব জিনিস তুলে এনেছেন তার সবটুকুই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রশ্ন আসে তিনি কি কি এড়িয়ে গেলেনঃ

১। আন্ডারস্টাফিং-এর যে সমস্যা সেইটা কোন সেক্টরে নাই? ডাক্তার সংখ্যা সীমিত বলে একজন ডাক্তার আরও বেশি অনুপস্থিত থাকবে? মফস্বল এলাকায় এদের দিনের কতটুকু সময় প্রাইভেট প্র‍্যাক্টিস করে কাটে সেইটা তুষার এড়িয়ে গেছেন বেশ চতুরতার সাথে।

২। রিসোর্স লিমিটেশন-নিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন তিনি। যার সবকিছু সত্য। কিন্তু তিনি এড়িয়ে গেছেন এইসব জরুরী ইকুয়েপমেন্টস সরকারী হাসপাতালে নিশ্চিত করার জন্য ডাক্তারদের ভূমিকা কতখানি পালিত হয়েছে? কতখানি চাপ তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়েছেন এইসব সরবরাহ করার জন্য? অনেক তুচ্ছ তুচ্ছ ঘটনাতেই আমরা ডাক্তাদের কর্মবিরতিতে যেতে দেখি। নানান দাবি আদায় করতে দেখি। কোনদিন শুনিনাই ডাক্তাররা সাধারণ রোগীর সেবা সরকারী হাসপাতালেই যাতে অনেকখানি নিশ্চিত করা যায় তার জন্য কিছু চেয়ে কর্মবিরতি কিংবা প্রতিবাদে গেছেন। দশকের পর দশক শুধু শুনেই আসছি এই নাই সেই নাই। এইধারা অব্যাহত থাকলে রোগীকে প্রাইভেট হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে পাঠানো সোজা হয় সেটাও আমরা জানি। কিন্তু তুষার সাহেব সেটা এড়িয়ে গেছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-ডিজি অফিসের কথা বলেছেন উনি অনেকবার। সেইখানে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য বানানো পদগুলিতে শুধু রাজনৈতিক নেতা কিংবা আমলা থাকেন না। অনেক ডাক্তারও থাকেন। সারাদিন দলবাজি ছাড়া কি করেন তারা? কেন এইসব কেনাকাটাকে অগ্রতালিকায় আনেন না তারা? বরং সেগুলো না করে নিজেরা চিকিৎসাসেবা নিতে এরা স্কয়ারের মত দামী হাসপাতালে ভীড় করে। তিনি এই সত্যগুলোও এড়িয়ে গেছেন।

৩। তিনি মাশরাফিদের ভাল খেললে গাড়িবাড়ি দেওয়া হয় বলেছেন। কিন্তু খারাপ খেললে যে দল থেকে বাদ পড়তে হয়। অসাদাচরণের জন্য বহিষ্কার হতে হয় সেইগুলা এড়িয়ে গেছেন। সরকারী ডাক্তারদের বেলায় এইসব অনুশীলন আছে? খারাপ পারফরম্যান্স দেখানো ডাক্তারদের কতজনের চাকরি গেছে এ পর্যন্ত?

৪। খাতা নেই কলম নেই। সরকার কিছু দেয়না। এইসব পেটি অভিযোগ তিনি তার লেখায় এনেছেন। অথচ বাস্তবতা হলো মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভরা তাদের কোম্পানির ওষুধ (বিশেষ করে এন্টিবায়োটিক) লেখার বিনিময়ে প্যাড থেকে শুরু করে বিদেশ ভ্রমণ, ঘরের এসি-ফ্রীজ এমন কিছু নেই যে ডাক্তারদের দেন না। যুগের পর যুগ এই অনুশীলন চলছে৷ এইসব উপঢৌকন যদি একজন আমলা নিত তাহলে সেইটাকে ঘুষ বলা হতো। কিন্তু ডাক্তারদের জন্য এইগুলা নিয়মে পরিণত হয়েছে। কেউ কিছু বলার নেই। দেখার নেই। কিন্তু এইসব অপ্রিয় সত্য তুষার সাহেব সামনে আনবেন না।

এমন কোন ফার্মেসি বোধহয় নেই যেইখানে ফিজিশিয়ান স্যাম্পল বিক্রি হয়না। অথচ এইগুলা ডাক্তারদের দেওয়া হয় রোগীদের দেবার জন্য। গুণাবলী বোঝার জন্য। কয়জন ডাক্তার আছে যারা অসহায় গরীব রোগীদের বিনামূল্যে এইসব স্যাম্পল দেন? বরং তাদের মাধ্যমে বেআইনি ভাবে সেগুলো ফার্মেসীতে চলে যায়।

ডায়াগনিস্টক সেন্টারের কমিশনের কথা নাহয় বাদই দিলাম। কিন্তু এইসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করার কথা কথা তুষার সাহেব সামনে আনবেন না।

মাশরাফির এ্যাপ্রোচে সমস্যা আছে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু এইরকম বেয়াড়া সিস্টেম যেখানে কোন চেকার নাই সেইখানে এমপিরা আর কি করতে পারে? এইটুকু উদাহরণও এই দেশে নাই বলেই যে যা খুশি তাই করছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

যেসব সত্য চেপে গেলেন আব্দুন নূর তুষার

আপডেট টাইম : ০১:০৯:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাশরাফি ডাক্তারদের সাথে যে ফাটা কেস্টগিরি দেখিয়েছেন তা নিয়ে আব্দুন নূর তুষার একটা লেখা লিখেছেন। ইতোমধ্যে সেই লেখা ভাইরাল। যেহেতু তুষার নিজে ডাক্তারি পড়েছেন সেই জায়গা থেকে তিনি এই ঘটনায় ডাক্তারদের পক্ষ নিবেন সেইটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি এখন পেশায় সাংবাদিক। তার কাছ থেকে চিকিৎসাব্যবস্থার পুরো চিত্রটা আসলে ভাল হতো।

তিনি ডাক্তারির সাথে মাশরাফিদের ক্রিকেট খেলার তুলনা করেছেন নানান ‘নাই নাই’ দিক থেকে। যেটুকু আছে সেইটুকুর সদ্ব্যবহার না হওয়াটার কারণ হিসেবে তিনি ‘নাই নাই’ থিওরি আওড়াইছেন পুরা লেখাটাতেই। অস্বীকার করার কোন কারণ নাই তিনি যেসব জিনিস তুলে এনেছেন তার সবটুকুই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রশ্ন আসে তিনি কি কি এড়িয়ে গেলেনঃ

১। আন্ডারস্টাফিং-এর যে সমস্যা সেইটা কোন সেক্টরে নাই? ডাক্তার সংখ্যা সীমিত বলে একজন ডাক্তার আরও বেশি অনুপস্থিত থাকবে? মফস্বল এলাকায় এদের দিনের কতটুকু সময় প্রাইভেট প্র‍্যাক্টিস করে কাটে সেইটা তুষার এড়িয়ে গেছেন বেশ চতুরতার সাথে।

২। রিসোর্স লিমিটেশন-নিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন তিনি। যার সবকিছু সত্য। কিন্তু তিনি এড়িয়ে গেছেন এইসব জরুরী ইকুয়েপমেন্টস সরকারী হাসপাতালে নিশ্চিত করার জন্য ডাক্তারদের ভূমিকা কতখানি পালিত হয়েছে? কতখানি চাপ তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়েছেন এইসব সরবরাহ করার জন্য? অনেক তুচ্ছ তুচ্ছ ঘটনাতেই আমরা ডাক্তাদের কর্মবিরতিতে যেতে দেখি। নানান দাবি আদায় করতে দেখি। কোনদিন শুনিনাই ডাক্তাররা সাধারণ রোগীর সেবা সরকারী হাসপাতালেই যাতে অনেকখানি নিশ্চিত করা যায় তার জন্য কিছু চেয়ে কর্মবিরতি কিংবা প্রতিবাদে গেছেন। দশকের পর দশক শুধু শুনেই আসছি এই নাই সেই নাই। এইধারা অব্যাহত থাকলে রোগীকে প্রাইভেট হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে পাঠানো সোজা হয় সেটাও আমরা জানি। কিন্তু তুষার সাহেব সেটা এড়িয়ে গেছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়-ডিজি অফিসের কথা বলেছেন উনি অনেকবার। সেইখানে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগ্রহণের জন্য বানানো পদগুলিতে শুধু রাজনৈতিক নেতা কিংবা আমলা থাকেন না। অনেক ডাক্তারও থাকেন। সারাদিন দলবাজি ছাড়া কি করেন তারা? কেন এইসব কেনাকাটাকে অগ্রতালিকায় আনেন না তারা? বরং সেগুলো না করে নিজেরা চিকিৎসাসেবা নিতে এরা স্কয়ারের মত দামী হাসপাতালে ভীড় করে। তিনি এই সত্যগুলোও এড়িয়ে গেছেন।

৩। তিনি মাশরাফিদের ভাল খেললে গাড়িবাড়ি দেওয়া হয় বলেছেন। কিন্তু খারাপ খেললে যে দল থেকে বাদ পড়তে হয়। অসাদাচরণের জন্য বহিষ্কার হতে হয় সেইগুলা এড়িয়ে গেছেন। সরকারী ডাক্তারদের বেলায় এইসব অনুশীলন আছে? খারাপ পারফরম্যান্স দেখানো ডাক্তারদের কতজনের চাকরি গেছে এ পর্যন্ত?

৪। খাতা নেই কলম নেই। সরকার কিছু দেয়না। এইসব পেটি অভিযোগ তিনি তার লেখায় এনেছেন। অথচ বাস্তবতা হলো মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভরা তাদের কোম্পানির ওষুধ (বিশেষ করে এন্টিবায়োটিক) লেখার বিনিময়ে প্যাড থেকে শুরু করে বিদেশ ভ্রমণ, ঘরের এসি-ফ্রীজ এমন কিছু নেই যে ডাক্তারদের দেন না। যুগের পর যুগ এই অনুশীলন চলছে৷ এইসব উপঢৌকন যদি একজন আমলা নিত তাহলে সেইটাকে ঘুষ বলা হতো। কিন্তু ডাক্তারদের জন্য এইগুলা নিয়মে পরিণত হয়েছে। কেউ কিছু বলার নেই। দেখার নেই। কিন্তু এইসব অপ্রিয় সত্য তুষার সাহেব সামনে আনবেন না।

এমন কোন ফার্মেসি বোধহয় নেই যেইখানে ফিজিশিয়ান স্যাম্পল বিক্রি হয়না। অথচ এইগুলা ডাক্তারদের দেওয়া হয় রোগীদের দেবার জন্য। গুণাবলী বোঝার জন্য। কয়জন ডাক্তার আছে যারা অসহায় গরীব রোগীদের বিনামূল্যে এইসব স্যাম্পল দেন? বরং তাদের মাধ্যমে বেআইনি ভাবে সেগুলো ফার্মেসীতে চলে যায়।

ডায়াগনিস্টক সেন্টারের কমিশনের কথা নাহয় বাদই দিলাম। কিন্তু এইসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করার কথা কথা তুষার সাহেব সামনে আনবেন না।

মাশরাফির এ্যাপ্রোচে সমস্যা আছে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু এইরকম বেয়াড়া সিস্টেম যেখানে কোন চেকার নাই সেইখানে এমপিরা আর কি করতে পারে? এইটুকু উদাহরণও এই দেশে নাই বলেই যে যা খুশি তাই করছে।