ঢাকা ০৫:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুইস ব্যাংকের জব্দ হওয়া অর্থ ফেরত আনতে মুসা বিন শমসেরের অনুরোধ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০০:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯
  • ২৫৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুইস ব্যাংকের জব্দ হওয়া সাড়ে ১২.৫ বিলিয়ান মার্কিন বা ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ঢাকা ফেরত আনতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সহায়তা চেয়েছেন অস্ত্র ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, সেজন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠান ড্যাটকো’র প্যাডে চিঠি দিয়েছেন তিনি।

গত সপ্তাহে পাঠানো দুই পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে মুসা বিন শমসের অর্থমন্ত্রীর কাছে একটা লেটার অফ ক্যায়ারেন্স চেয়েছেন, যাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে সৌদি আরবের অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাসকীর চিঠিও নিজের চিঠির সাথে সংযুক্ত করেছেন তিনি।

চিঠিতে খাসকি দাবি করেন-সুইস ব্যাংকে জব্দ হওয়া অর্থ তার ও মুসা বিন শমসের যৌথ ব্যবসা থেকে আসা অর্থ; যা বেশ কয়েক বছর আগে সুইস ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছিল।

এদিকে গত মার্চ মাসে অর্থমন্ত্রী ভারতীয় ইউনাইটেড নিউজ এজেন্সির এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি মিডিয়ার বদৌলতে মুসা বিন শমসেরের অর্থ সুইচ ব্যাংকে আছে বলে শুনেছি। এতো বেশি পরিমাণ অর্থ সুইচ ব্যাংকে থাকলে তা আনতে পারলে অবশ্যই বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে। এজন্য দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।

২০১৫ সালের জুন মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্পদ বিবরণী নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবীর মাধ্যমে সম্পদের হিসাব জমা দেন মুসা বিন শমসের।

দুদুক জানায়, মুসার জমা দেওয়া হিসাব অনুযায়ী সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ান ডলার জমা রয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা হিসাবে)।

সম্পদ বিবরণীতে তিনি জানিয়েছিলেন, সুইস ব্যাংকে তার এ পরিমাণ অর্থ ‘ফ্রিজ’ (সাময়িক জব্দ) অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও সুইস ব্যাংকের ভল্টে ৯০ মিলিয়ান ডলার দামের (বাংলাদেশি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) অলংকার জমা আছে। দেশে তার সম্পদের মধ্যে গুলশান ও বনানীতে দু’টো বাড়ি, সাভার ও গাজীপুরে ১২০০ বিঘা জমি রয়েছে।

সম্পদ বিবরণীতে সুইস ব্যাংকে জমা অর্থের বিষয়ে মুসা জানিয়েছেন, সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ান ডলার আয় করেছেন অস্ত্র এবং ক্রুড ওয়েলের ব্যবসা থেকে। তবে সুইস ব্যাংকে তার যে হিসাব রয়েছে, সেটি যৌথ অ্যাকাউন্ট।

যৌথ অ্যাকাউন্টকারীদের সঙ্গে ‘ডিড অব এগ্রিমেন্ট’ থাকার কারণে ওই অ্যাকাউন্টে অন্যদের কী পরিমাণ অর্থ রয়েছে এবং ওই অ্যাকাউন্টের অংশীদার কতজন, সে বিষয়ে উল্লেখ করা যাবে না বলে দুদককে জানিয়েছিলেন মুসা। এ কারণে সুইস ব্যাংকে কেবল তার নিজের অংশের তথ্যই দুদকের কাছে জমা দিয়েছিলেন।

দুদুক মনে করে সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, মিসর, সিরিয়া ও পাকিস্তানসহ অনেক দেশের সরকারি প্রতিরক্ষা ক্রয় সংক্রান্ত পাওনা পরিশোধের অর্থ ওই সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রায় ৪০ জন ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর বহর নিয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সুইস ব্যাংকে জব্দকৃত তার অর্থ অবমুক্ত হলে এসব অর্থ পদ্মাসেতু নির্মাণসহ মানবকল্যাণে ব্যয় করবেন।

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে মুসা দাবি করেন, বাংলাদেশ থেকে তার কোনো অর্থই সুইস ব্যাংকে জমা হয়নি। ৪২ বছর বিদেশে বৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমেই তিনি ১২ বিলিয়ান ডলার উপার্জন করেছেন, যা সুইস ব্যাংকে তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।

মুসা বিন শমসের ৭০ দশক থেকে দেশে ম্যানপাওয়ার ব্যবসা করে অনেক অর্থের মালিক হয়। পরবর্তীতে তিনি ব্যবসায়ীক কারণে যুক্তরাজ্যে চলে যান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

সুইস ব্যাংকের জব্দ হওয়া অর্থ ফেরত আনতে মুসা বিন শমসেরের অনুরোধ

আপডেট টাইম : ০১:০০:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুইস ব্যাংকের জব্দ হওয়া সাড়ে ১২.৫ বিলিয়ান মার্কিন বা ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ঢাকা ফেরত আনতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সহায়তা চেয়েছেন অস্ত্র ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, সেজন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠান ড্যাটকো’র প্যাডে চিঠি দিয়েছেন তিনি।

গত সপ্তাহে পাঠানো দুই পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে মুসা বিন শমসের অর্থমন্ত্রীর কাছে একটা লেটার অফ ক্যায়ারেন্স চেয়েছেন, যাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে সৌদি আরবের অস্ত্র ব্যবসায়ী আদনান খাসকীর চিঠিও নিজের চিঠির সাথে সংযুক্ত করেছেন তিনি।

চিঠিতে খাসকি দাবি করেন-সুইস ব্যাংকে জব্দ হওয়া অর্থ তার ও মুসা বিন শমসের যৌথ ব্যবসা থেকে আসা অর্থ; যা বেশ কয়েক বছর আগে সুইস ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছিল।

এদিকে গত মার্চ মাসে অর্থমন্ত্রী ভারতীয় ইউনাইটেড নিউজ এজেন্সির এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি মিডিয়ার বদৌলতে মুসা বিন শমসেরের অর্থ সুইচ ব্যাংকে আছে বলে শুনেছি। এতো বেশি পরিমাণ অর্থ সুইচ ব্যাংকে থাকলে তা আনতে পারলে অবশ্যই বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে। এজন্য দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে।

২০১৫ সালের জুন মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্পদ বিবরণী নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবীর মাধ্যমে সম্পদের হিসাব জমা দেন মুসা বিন শমসের।

দুদুক জানায়, মুসার জমা দেওয়া হিসাব অনুযায়ী সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ান ডলার জমা রয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা হিসাবে)।

সম্পদ বিবরণীতে তিনি জানিয়েছিলেন, সুইস ব্যাংকে তার এ পরিমাণ অর্থ ‘ফ্রিজ’ (সাময়িক জব্দ) অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও সুইস ব্যাংকের ভল্টে ৯০ মিলিয়ান ডলার দামের (বাংলাদেশি প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) অলংকার জমা আছে। দেশে তার সম্পদের মধ্যে গুলশান ও বনানীতে দু’টো বাড়ি, সাভার ও গাজীপুরে ১২০০ বিঘা জমি রয়েছে।

সম্পদ বিবরণীতে সুইস ব্যাংকে জমা অর্থের বিষয়ে মুসা জানিয়েছেন, সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ান ডলার আয় করেছেন অস্ত্র এবং ক্রুড ওয়েলের ব্যবসা থেকে। তবে সুইস ব্যাংকে তার যে হিসাব রয়েছে, সেটি যৌথ অ্যাকাউন্ট।

যৌথ অ্যাকাউন্টকারীদের সঙ্গে ‘ডিড অব এগ্রিমেন্ট’ থাকার কারণে ওই অ্যাকাউন্টে অন্যদের কী পরিমাণ অর্থ রয়েছে এবং ওই অ্যাকাউন্টের অংশীদার কতজন, সে বিষয়ে উল্লেখ করা যাবে না বলে দুদককে জানিয়েছিলেন মুসা। এ কারণে সুইস ব্যাংকে কেবল তার নিজের অংশের তথ্যই দুদকের কাছে জমা দিয়েছিলেন।

দুদুক মনে করে সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, মিসর, সিরিয়া ও পাকিস্তানসহ অনেক দেশের সরকারি প্রতিরক্ষা ক্রয় সংক্রান্ত পাওনা পরিশোধের অর্থ ওই সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর প্রায় ৪০ জন ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর বহর নিয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সুইস ব্যাংকে জব্দকৃত তার অর্থ অবমুক্ত হলে এসব অর্থ পদ্মাসেতু নির্মাণসহ মানবকল্যাণে ব্যয় করবেন।

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে মুসা দাবি করেন, বাংলাদেশ থেকে তার কোনো অর্থই সুইস ব্যাংকে জমা হয়নি। ৪২ বছর বিদেশে বৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমেই তিনি ১২ বিলিয়ান ডলার উপার্জন করেছেন, যা সুইস ব্যাংকে তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।

মুসা বিন শমসের ৭০ দশক থেকে দেশে ম্যানপাওয়ার ব্যবসা করে অনেক অর্থের মালিক হয়। পরবর্তীতে তিনি ব্যবসায়ীক কারণে যুক্তরাজ্যে চলে যান।