অনিশ্চয়তায় খালেদার মুক্তি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল রাজনৈতিক সমঝোতার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সাড়ে পাঁচ বছর সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির মধ্যে। দুই পক্ষেরই তাতে ছিল রাজনৈতিক হিসাব-নিকেশ। ক্ষমতাসীনরা চাইছিল বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা যেন একাদশ জাতীয় সংসদে আসেন। বিএনপির দিক থেকে প্রত্যাশা ছিল দুর্নীতি মামলায় কারান্তরীণ দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসা।

সূত্র বলছে, দুই পক্ষের আলোচনায় এগিয়েও ছিল অনেকটা। খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিনিময়ে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় সংসদের শপথ-এমন সমীকরণই নির্দিষ্ট হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পথ তো আর একরৈখিক নয়। নানা কারণেই ভেস্তে যেতে পারে সমঝোতার পথ। গেলও ভেস্তে। আর তাতে অনিশ্চয়তার মেঘে চাপা পড়ে গেল প্যারোল কিংবা জামিনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্ন।

দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের কারাদ-হয়েছে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে আছেন। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে একটি ভবনে রাখা হয়েছে তাকে। চেয়ারপারসনকে ছাড়াই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হয়েছে বিএনপিকে। ডায়াবেটিস, হাঁটুতে ব্যথাসহ বয়সজনিত নানা সমস্যায় আক্রান্ত ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য অনেক আগে থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপি। সম্প্রতি এ দাবি আরও জোরালো হয়।

এ প্রেক্ষাপটে সরকারের তরফ থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসার জন্য বলা হয়। যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন সেখানে চিকিৎসা নিতে রাজি হচ্ছিলেন না। তবে এপ্রিলের শুরুতেই নাটকীয়ভাবে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিতে রাজি হন তিনি। তাতেই রাজনৈতিক মহলে পষ্ট হয় সমঝোতার বিষয়টি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে নানা সময়ে নানা প্রসঙ্গে কথাও বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিবার আবেদন করলে সরকার ভেবে দেখবে এমন ইঙ্গিত তারা দেন। বিএনপি মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে কথা বলেন। দলের চেয়ারপারসনের প্যারোলের বিষয়টি পারিবারিক সিদ্ধান্ত এমন কথাও বলেন তিনি। পষ্টই রাজনৈতিক সমঝোতার ইঙ্গিত। কিন্তু ১৪ এপ্রিলের পর সমীকরণ পাল্টাতে থাকে।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান বিএনপির তিন শীর্ষনেতা। সেখানে প্যারোল ও বিএনপির নির্বাচিত এমপিদের বিষয়ে কথা উঠলে খালেদা জিয়া প্রশ্ন তোলেন, আত্মমর্যাদা খুইয়ে তিনি কেন প্যারোল নেবেন? এমপিদের সংসদে যাওয়ার বিষয়েও অনীহা প্রকাশ করেন তিনি। এর পাঁচ দিন পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ জানান, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোল ও নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ কোনো সিদ্ধান্ত বিএনপি নেয়নি। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ শপথ নিলে দল থেকে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ হুঁশিয়ারির মাঝেই গত ২৫ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও-৩ থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেই শপথ নেন। এর জেরে তাকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। জাহিদুরের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বিএনপি থেকে নির্বাচিত আরও চারজন সংসদ সদস্য শপথ নিচ্ছেন বলে প্রবল গুঞ্জন ওঠে। হারুন অর রশীদ, উকিল আবদুর সাত্তার ও আমিনুল ইসলাম-জনগণের চাপে শপথের আগ্রহের কথাও জানান। এ ছাড়া মোশাররফ হোসেন তার এলাকায় সুষ্ঠু ভোট হয়েছে গণমাধ্যমে এমনটাই জানান। চার এমপিই বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা এখনো আশা করছেন, শেষমুহূর্ত হলেও বিএনপি থেকে তাদের শপথ নেওয়ার জন্য বলা হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত না হলেও তারা শপথ নিতে প্রস্তুত।

বিএনপির নির্বাচিত এমপিদের শপথ বিষয়ক রাজনৈতিক ডামাডোলে অনেকটাই ঢাকা পড়ে গেছে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্যারোল কিংবা জামিনে মুক্তির বিষয়টা। খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিলেও রাজনৈতিক দরকষাকষিতে আপাতত ব্যাকফুটে বিএনপি নেতারা। এ মুহূর্তে দলের চার নির্বাচিত এমপিকে সংসদে যাওয়া ঠেকাতেই মনোযোগী তারা। কারণ ডেডলাইন ৩০ এপ্রিল শেষ হতে আর বাকি একদিন।

সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, চিকিৎসার পাশাপাশি বিএনপি প্রধানের বিএসএমএমইউতে আনার আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া যাতে সহজ হয়। আলাপ-আলোচনার সে পথ অনেকটা অগ্রগতিও হয়েছিল। কিন্তু সমঝোতার সুযোগ নিতে বিএনপি এবারও ব্যর্থ হলো। সূত্রটি জানায়, চিকিৎসা শেষে তাই খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে। তবে এবার আর পুরনো ঢাকার নির্জন কারাগারে নয়, কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগার কিংবা কাসিমপুর কারাগার যে কোনো একটিতে পাঠানো হবে তাকে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর