বাংলাদেশে উগ্রবাদীরা রাজনৈতিক অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে

ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়াশিংটনে গবেষণা সংস্থা হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো লিসা কার্টিজ বলেছেন, বাংলাদেশে উগ্রবাদীরা রাজনৈতিক অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে। বাংলাদেশে সম্প্রতি দুজন বিদেশী নাগরিককে গুলি করে হত্যা, তার আগে ব্লগারদের হত্যাকান্ড এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে টেলিফোনে সাক্ষাৎকারটি নেন রোকেয়া হায়দার। লিসা কার্টিজ বলেন, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে বর্তমানে যে ধরনের মেরুকরণের সৃষ্টি হয়েছে সেটাই এর মূল কারণ।
বাংলাদেশে চলতি বছরের শুরুতে এবং গত বছর ব্লগার লেখকদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। গত সপ্তাহেই দেশের দুই প্রান্তে দুজন বিদেশী নাগরিক- ঢাকায় একজন ইতালিয়ান ও রংপুরে একজন জাপানিকে উগ্রপন্থিরা গুলি করে মেরে ফেলেছে। এবং আইসিস এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে দাবি করছে। বর্তমান ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে তার বিশ্লেষণ কি? এই প্রশ্নের জবাবে লিসা কার্টিজ বলেন, বাংলাদেশে একটা হুমকি দানা বেঁধে উঠছে। এবং আমি মনে করি যে, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মধ্যে বর্তমানে যে ধরনের মেরুকরণের সৃষ্টি হয়েছে সেটাই এর মূল কারণ। এবং উগ্রবাদীরা সেই পরিস্থিতির এবং রাজনৈতিক অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে। আইসিসের কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সে বিষয়ে তার ধারণা কি? তিনি বলেন, আমি মনে করি এই মুহূর্তে সঠিকভাবে এটা বলা সম্ভব নয় যে আইসিসের কোন সংশ্লিষ্টতা আছে কি নেই। স্থানীয় মানুষজন আইসিসের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করছে কিনা, অথবা আইসিস সে দেশে কোনভাবে কাজ শুরু করেছে কিনা তাও বলা যায় না। তবে এই আশঙ্কা রয়েছে যে বাংলাদেশে উগ্রবাদ বেড়ে চলেছে এবং সরকারকে অবশ্যই তার মোকাবিলা করতে হবে। এসব হত্যার তদন্ত করতে হবে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র এই তদন্ত কাজে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে, এবং এক্ষেত্রে বাইরের একটা যোগাযোগ থাকতে পারে, তাই যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত। শুধু কি রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলেই উগ্রবাদ বেড়ে চলেছে, নাকি বাইরের কোন প্রভাব এর কারণ? হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কার্টিজের বক্তব্য, আমি মনে করি ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদা এবং আইসিস উভয়েই হয়তো শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি রক্ষণশীলদের ক্ষোভের মধ্যে একটা সুযোগ দেখতে পাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামির মতো দলের ক্ষুব্ধ মনোভাব তাদের মতো বাইরের দলকে বাংলাদেশে প্রবেশে সম্ভবত একটা সুযোগ করে দিচ্ছে। এই হামলা দক্ষিণ এশিয়ায় আল-কায়েদা ও আইসিসের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতারও প্রতিফলন হতে পারে। লিসা কার্টিজ মনে করেন, বাংলাদেশ বর্তমানের এই হামলা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে। বাংলাদেশ অবশ্যই সেই ২০০৫ সালে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের জেএমবির মতো উগ্রবাদী গ্রুপ যারা একই সঙ্গে পরপর কয়েক শ বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়, তার মোকাবিলা করতে এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। তবে আমি মনে করি কোন রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়া পূর্ণ তদন্ত করতে হবে। কারা এর সঙ্গে জড়িত। কারা তাদের উৎসাহ যোগাচ্ছে। কার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। কারা তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। সুষ্ঠুভাবে সবকিছু অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ জানতে পারবে কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, কি করতে হবে। লিসা কার্টিজ আরও বলেন, আমি অবশ্যই উল্লেখ করবো যে বাংলাদেশ একটি মধ্যপন্থি মুসলিম গণতান্ত্রিক দেশ। অন্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে অধিক সংখ্যায় মহিলারা যোগ দিচ্ছেন। তাই আমি অবশ্যই মনে করি যে বাংলাদেশ তার চলতি সমস্যা, হুমকি কাটিয়ে উঠতে পারবে, তার সেই সঙ্গতি আছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর