সব প্রকল্পই অনিশ্চিত

বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিজমিতে সেচ দেয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত দুই লাখ ৫০ হাজার টন ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয় প্রায় এক যুগ আগে। উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প নামের এ প্রকল্পটি তখন থেকেই অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারও ১০ বছর আগে ১৯৮৮ সাল থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাবিতে এ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কৃষক পর্যায় থেকে আন্দোলন চলে আসছে। প্রকল্পটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে বিভিন্ন ফোরামে। সব ক্ষেত্রেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পক্ষে মত এসেছে। সর্বশেষ গত ৩০ ডিসেম্বর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাবিতে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বরে কৃষক সমাবেশ করে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও ছিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু এত কিছুর পরও আলোর মুখ দেখছে না ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ প্রকল্পটি।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন প্রকৌশলী জানান, প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য কয়েক মাস আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছিল। এটির প্রাথমিক যাচাই-বাছাইও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ২০১০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিশদ পরিকল্পনার ভিত্তিতে ব্যয় হিসাব করা হয়নি উল্লেখ করে, ‘বাস্তবায়ন পর্যায়ে নকশা ও ব্যয় পরিবর্তনের অহেতুক জটিলতা তৈরি হবে’ এমন অভিমত দেয়া হয়েছে। এ কারণে প্রকল্পটির বিশদ পরিকল্পনা ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি প্রস্তুতের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া প্রকল্পটির পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকায় একনেকে দেয়া হয়নি বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত প্রকল্প প্রস্তাবনাটি পানিসম্পদ হয়ে আবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা বিভাগে ফেরত পাঠানো হয়। পাউবো কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, এসব শর্তাবলি ছাড়াই শত শত প্রকল্প একনেক থেকে উতরে যাচ্ছে।
পাউবোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রকল্পটির পরিবেশগত ছাড়পত্র ও ডিটেইলড ডিজাইন চাওয়া হয়েছে। পরিবেশগত ছাড়পত্র নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ডিটেইলড ডিজাইন তৈরি বেশ ব্যয়বহুল। ডিপিপি (বিশদ প্রকল্প প্রস্তাব) অনুমোদন না হলে এ ডিজাইন তৈরি সম্ভব নয়। ডিপিপি অনুমোদন হলে ডিটেইলড ডিজাইন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও তারা জানান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাকিস্তান আমলেই পদ্মা থেকে পানি তুলে বিস্তীর্ণ বরেন্দ্র ভূমিতে সেচ দিয়ে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পটির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। দেশ স্বাধীনের পর প্রকল্পের এ ধারণাটি অনেক বছর আলোচনার বাইরে ছিল। কিন্তু ১৯৮৫ সালে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পের ধারণা থেকেই বরেন্দ্র কৃষি উন্নয়ন (বর্তমানে বিএমডিএ) নামের প্রকল্পটি চালু করে কৃষি মন্ত্রণালয়। তবে বরেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় ভূ-উপরিস্থ পানি উত্তোলনের পরিবর্তে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে সেচের ব্যবস্থা করা হয়। বরেন্দ্রের পানির বেশি দাম, গভীর নলকূপে পানি উত্তোলনের ফলে পানির স্তর নিুগামী হওয়া ছাড়াও ফসল উৎপাদন খরচ বেশি হওয়া সর্বোপরি পরিবেশগত প্রতিকূলতার সৃষ্টি হওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্পের দাবি তোলে জোরেশোরে। ১৯৮৮ সালে এ প্রকল্পের দাবিতে কৃষক পর্যায়ে আন্দোলন শুরু হয়।
জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থসহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে জাপানের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা জাইকা ওই বছরই একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। এতে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের পক্ষে অভিমত দেয়া হয়। কিন্তু তৎকালীন সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের অভাবে প্রকল্পটিতে অর্থায়নের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়িত হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বরেন্দ্র প্রকল্পের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে গভীর নলকূপ ও যন্ত্রাংশ আমদানির প্রয়োজন হতো না। আর কৃষকদের এত বিপুলপরিমাণ টাকা দিয়েও সেচের পানি কিনতে হতো না। কৃষকরা কৃষিবান্ধব সেচ পেত সহজেই। এতে এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক উপকৃত হতেন। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য আমরা পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছেও গিয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর