রোহিঙ্গাদের দেশে ঢুকতে দেয়ার সমালোচনায় করেছেন ড. কামাল হোসেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেশে ঢুকতে দেয়ার সমালোচনা করেছেন ড. কামাল হোসেন। আর যেন কোনো অনুপ্রবেশ না ঘটে সে জন্য জনগণকে গিয়ে সীমান্ত পাহারা দেয়ারও আহ্বান জানান গণফোরাম সভাপতি। কামাল হোসেন বলেন, ‘চলেন আমরা হাজার হাজারে লোক গিয়ে বর্ডার পাহারা দিই। একটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রে হাজার হাজার লোক পাঠাবে, আমার দৈনিন্দন আগ্রাসনের শিকার হতে থাকব, নিষ্ক্রিয় থাকব, কিছুই করতে পারব না এটা বিশ্বাস করা যায় না, মেনে নেওয়া যায় না।’

আজ শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জাতিগত নিধন: প্রসঙ্গ রোহিঙ্গা মানবাধিকার লঙ্ঘন’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন কামাল হোসেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে করা ‘ফিজিক্যাল অ্যারাঞ্জমেন্ট’ চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়া শুরু না হওয়ারও সমালোচনা করেছেন তিনি।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর সেনা অভিযানের মুখে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। শুরুতে বিজিবি এই জনগোষ্ঠীকে ঢুকতে না দিলেও রাখাইন রাজ্যের করুণ পরিস্থিতি জানতে পারার পর সীমান্ত খুলে দেয়।

রোহিঙ্গা সমস্যাটি এরই মধ্যে জাতিসংঘে তুলে ধরেছে বাংলাদেশ এবং সেখানে বাংলাদেশের তোলা দুটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

সবশেষ ২৩ নভেম্বর মিয়ানমার ও বাংলাদেশ যে চুক্তি সই করেছিল, সেখানে দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর লক্ষ্য ঠিক করেছিল দুই দেশ। আর গত ১৫ জানুয়ারি সই হয় ফিজিক্যাল অ্যারাঞ্জমেন্ট চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় আপাতত সপ্তাহে দেড় হাজার রোহিঙ্গা ফিরে যাবে বলে জানালেও কবে থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হবে, সে বিষয়ে কিছু জানায়নি বাংলাদেশ সরকার। তবে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে ২৩ জানুয়ারি থেকে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা জানানো হয়েছিল।

এর মধ্যে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নানা শর্ত দিচ্ছে আর এই চুক্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভও করেছে।

কামাল হোসেন বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবনে যে চুক্তি হয়েছে সেটা আমলাতান্ত্রিক কায়দায় হয়েছে। চুক্তি কার্যকর করতে কয়েক মাস লাগবে, এটা অ্যাবসার্ড। বরং এ থেকে উত্তরণের জন্য আসুন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াই আর বার্মাকে (মিয়ানমার) বলি, আমরা এত দুর্বল না।’ রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক আাদালতে যেতেও সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন গণফোরাম নেতা।

বলেন, ‘মিয়ানমার যেভাবে রোহিঙ্গাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে, তাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ পুরোপুরি লঙ্ঘিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’ ‘আমাদের সার্বভৌমত্বের উপর আক্রমণের মত ভূমি দখল হয়ে যাচ্ছে। আরও লোকজন আসছে এটাকে কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না? এটা রুখতেও আন্তর্জাতিক কোর্টে যাওয়া দরকার।’ ‘বর্ডারকে শক্ত অবস্থান নেওয়া দরকার, আর একজনও যেন না আসে।

নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে আমাদের শক্তি কি এতই কম?’। ‘রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে রেখে মানুষ হিসেবে তাদের প্রাপ্য সব অধিকার দেওয়া অসম্ভব মন্তব্য করে কামাল হোসেন বলেন, ‘তাদের স্থায়ীভাবে রাখতে গেলে তাদের মানবাধিকার রক্ষা হবে না। তাই এ বিষয়ে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার না করে ঐক্যবদ্ধভাবে এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। আন্তর্জাতিকভাবে তাদের আরও চাপ প্রয়োগ করতে হবে।’

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সস্টিটিউট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ বি এম বায়েজিদ। আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এম আমীর-উল-ইসলামও এ সময় বক্তব্য রাখেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর