অসৎ কাজে থেকে বিরত রাখার জন্য নিষেধে তাবলিগের দ্বিবিধ পদ্ধতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কোরআন মজিদ ও হাদিসের নির্দেশনা সামনে রাখলে দেখা যায়, যেসব লোক আপনার দায়িত্বে ও অধীন রয়েছে, যেমন স্ত্রী-পুত্র-কন্যা ও চাকুরে তাদের পাপ, অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য যথাসাধ্য সম্ভাব্য সব উপায়ে চেষ্টা চালানো ফরজ। কিন্তু যারা আপনার অধীন নয়, তাদের পাপ-অপরাধ থেকে ফেরানো সবার পক্ষে ফরজ নয়; তা বরং ফরজে কেফায়া। তেমন লোকদের অসৎ কাজে নিষেধের তাবলিগ করার দুটি পদ্ধতি রয়েছে১. বিশেষ সম্বোধন ২. ব্যাপক সম্বোধন।

বিশেষ সম্বোধন কোনো লোক যদি এমন হয় যে, তার সঙ্গে আপনার এমন খোলামেলা সম্পর্ক যে, আপনি যদি তাকে কোনো গোনাহ-পাপকাজে লিপ্ত দেখে সতর্ক করেন, তা হলে সে অসন্তুষ্ট না হয়ে বরং খুশি হবে এবং আপনার সতর্ক করার দরুন আপনি তার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন বলে মনে করবে। তেমন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পাপকর্মে জড়িত দেখলে তাকে সরাসরি বিশেষ সম্বোধনের মাধ্যমে অপরাধ থেকে বাধাদান আপনার জন্য ফরজ হিসেবে গণ্য হবে।

কিন্তু কারও সঙ্গে যদি তেমন খোলামেলা সম্পর্ক না থাকে কিংবা অজানা-অচেনা হয়; তা হলে তেমন লোককে বিশেষ সম্বোধনের দ্বারা পাপ থেকে বাধাদান ফরজও নয়, উচিতও নয়। এমন লোক বাহ্যিকভাবে যদি ধার্মিক হয়, তাহলে আপনার দাওয়াতে তার মধ্যে অসন্তোষের জন্ম নেবে এবং আপনার প্রতি তার অন্তরে ক্রোধ ও শত্রুতা জন্ম নেবে এবং সে তার পাপকর্মের ভুল ব্যাখ্যাও দিতে শুরু করবে।

যদি লোকটি বাহ্যিকভাবে ধার্মিক না হয় এবং ধার্মিকদের প্রতি তার অন্তরে কিছুটা সম্মানবোধ থাকে তা হলে আপনার তাবলিগে তারও কিছুটা অসন্তোষ জন্ম নেবে; কিন্তু অন্তরে কিছুটা সম্মানবোধ থাকায় মুখে সে কিছু বলবে না; কিন্তু তার অন্তর থেকে ধার্মিকদের প্রভাব চলে যাবে এবং সে আগামীতে ধার্মিকদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে।

কেননা তার অন্তরের বক্তব্য হবে, ‘এরা শুধু কথায় কথায়, পদে পদে ভুল ধরে, বারণ করে!’ আর যদি লোকটি ধর্ম-কর্ম থেকে এমন দূরে হয় যে, তার অন্তরে ধর্ম ও ধার্মিক লোকদের ব্যাপারে কোনো সম্মানবোধ ও প্রভাব না থাকে; তা হলে সে আপনার তাবলিগ শুনে তাৎক্ষণিক এমন কুফরি কথা বলে উঠবে যে, তার ঈমানটুকুই চলে যাবে। যেমন কাউকে আপনি দাড়ি রাখার তাবলিগ করলেন, এতে সে বলে উঠল, ‘যাও এটা তো মৌলবিদের কাজ!’ কিংবা বলে উঠল, ‘আরে দাড়ি রাখলে তো চেহারাটা ছাগলের মতো হয়ে যায়!’ তা হলে সে তাৎক্ষণিক কাফের হয়ে গেল এবং আপনি তার কুফরির কারণ হয়ে যাবেন!

সাধারণ সম্বোধন অসৎ কাজে নিষেধে তাবলিগের দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে, লোকজনের একত্র অনুষ্ঠানে সমাজে ছড়িয়ে পড়া পাপ-অন্যায়কর্মের ক্ষতি, অপকারিতা, পরিণাম ভালো করে বয়ান করে দেবে। তবে ওই ব্যাপক সম্বোধনেও এ বিষয়টির প্রতি যতবান থাকা অত্যন্ত জরুরি, যেন বক্তব্য উপস্থাপন এমন কঠোর ও সমালোচনাকেন্দ্রিক না হয় যে, শ্রোতাদের মনে ঘৃণার জন্ম হয় এবং তারা অপমান বোধ করে। বরং উপস্থাপন ও সম্বোধন মহব্বত, স্নেহ ও আবেগঘন অন্তরে হওয়া চাই। তার কারণ অন্তরের দরদমাখা কথায় প্রভাব অধিক হয়ে থাকে।

তাবলিগ ও শাস্তি অসৎ কাজে নিষেধের তাবলিগ করতে গিয়ে যদি কখনও সাজা-শাস্তি, শাসনের প্রয়োজন দেখা দেয়, তা হলে কি তেমন প্রয়োজনে কাউকে শাস্তি দেওয়া জায়েজ হবে? তার জবাব হচ্ছে, পাপকাজ থেকে বিরত রাখার জন্য যে-কেউ যাকে ইচ্ছা, তেমন শাস্তি প্রদান জায়েজ হবে না। যে কারণে প্রচলিত তাবলিগ জামাতেও তেমন শাস্তির কোনো ব্যবস্থা নেই।

তবে ‘ফরজে আইন’ তাবলিগের ক্ষেত্রে যাদের দায়-দায়িত্ব নিজের ওপর বর্তায় তাদের ‘তা’জির’ প্রকৃতির সাধারণ কিছু সমীচীন শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। উদাহরণত, মা-বাবার পক্ষে নিজ নাবালক সন্তানকে, স্বামীর পক্ষে স্ত্রীকে, শিক্ষকের পক্ষে ছাত্রকে এবং শায়খ বা পীরের পক্ষে মুরিদকে। যেমন অবস্থা বুঝে কিছু বকাঝকা, শরিয়তের সীমার ভেতরে থেকে হালকা প্রহার ইত্যাদি। এতেও আবার শর্ত হচ্ছে, নিয়ত একান্ত বিশুদ্ধ হতে হবে। একমাত্র মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা উদ্দেশ্য হতে হবে।

এমনটি হতে পারবে না যে, তার প্রতি ক্রোধান্বিত অন্য কোনো কারণে; অথচ শরিয়তের তেমন বৈধতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করা হচ্ছে এমনটি যেন না হয়। ওইসব সম্পর্ক ও স্বজন ব্যতীত অন্য কারও পক্ষে তাবলিগ করতে গিয়ে অপরাধী বা অভিযুক্তকে, কোনো ধরনের শাস্তিদান জায়েজ নেই। আর শাস্তি যদি ইসলামি শরিয়তের ‘হুদুদ’ তথা দ-বিধি প্রকৃতির হয়, তা হলে তেমন শাস্তিদান রাষ্ট্র ও প্রশাসন ব্যতীত কারও পক্ষেই জায়েজ নেই।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর