আল্লাহ মুমিনের যেমন আমল পছন্দ করেন

ঈমান ও আমলের প্রশিক্ষণকাল ছিল পবিত্র রমজান। রমজানে মুমিন পুণ্যের অনুশীলন করে এবং বছরের অন্য দিনগুলোতে সে অনুসারে আমল করে। যে ব্যক্তি নেক আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারে প্রকৃতপক্ষে সে-ই রমজানের শিক্ষা ধারণ করতে পেরেছে।

ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক কেন

মুমিন কোনো আমল শুরু করার পর তা ত্যাগ করে না।

কেননা তা ত্যাগ করার অর্থ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করা।১. আল্লাহ ধারাবাহিক আমল পছন্দ করেন : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ ওই আমলকে ভালোবাসেন যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা পরিমাণে কম হয়। তিনি (সা.) কোনো আমল করলে তা নিয়মিতভাবে করতেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৩৬৮)

২. নবীজি (সা.) ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেন : আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত উল্লিখিত হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো আমল করলে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেন।

শুধু নবীজি (সা.) নয়, বরং তাঁর পরিবার ও সাহাবিরাও আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবারবর্গ (ও সাহাবিরা) যে আমল করতেন তা ধারাবাহিকভাবে সর্বদাই করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭১২)৩. মুমিনের ইবাদত মৃত্যু পর্যন্ত : ইবাদত হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যম। আর এটাই মুমিনজীবনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

তাই মৃত্যু পর্যন্ত মুমিন ইবাদতের প্রতি যত্নশীল থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কোরো মৃত্যু আসার আগ পর্যন্ত।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৯৯)৪. আমল ছেড়ে দেওয়া নিন্দনীয় : কোনো আমল শুরু করার পর তা  ত্যাগ করা নিন্দনীয়। আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল আস (রা.) বলেন, আমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হে আবদুল্লাহ! অমুক ব্যক্তির মতো হয়ো না। সে তাহাজ্জুদ আদায় করত, অতঃপর তাহাজ্জুদ ত্যাগ করেছে।

৫. শৈথিল্য শয়তানকে প্রলুব্ধ করে : আমল শুরু করার পর কেউ তাতে শৈথিল্য প্রদর্শন করলে শয়তান প্রলুব্ধ হয় এবং ব্যক্তি শয়তানের শিকারে পরিণত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদেরকে সেই ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শোনাও, যাকে আমি দিয়েছিলাম নিদর্শন, অতঃপর সে তাকে বর্জন করে, পরে শয়তান তার পেছনে লাগে। আর সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭৫)

যেভাবে ধারাবাহিকতা রক্ষা পায়

প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, তিন কাজের মাধ্যমে মুমিন আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারে। তা হলো—

১. আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা : মুমিন নিজের ওপর আস্থা না রেখে আল্লাহর ওপর আস্থা রাখবে এবং আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করবে। পবিত্র কোরআনে দোয়া শেখানো হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবেন না এবং তোমার কাছে থেকে আমাদেরকে করুণা দান করো। নিশ্চয়ই তুমি মহাদাতা।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করতেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমত প্রার্থী। কাজেই আমাকে এক পলকের জন্যও আমার নিজের কাছে সোপর্দ করবেন না এবং আমার সব কিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দিন। আর আপনিই একমাত্র ইলাহ। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫০৯০)

২. সর্বোচ্চ চেষ্টা করা : আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার পাশাপাশি মুমিন তার সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু অব্যাহত রাখবে। কেননা যে ব্যক্তি নেক কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় চেষ্টা করবে, তার জন্য আল্লাহর অঙ্গীকার হলো ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)

৩. পুণ্যবানদের সান্নিধ্য গ্রহণ করা : প্রবাদ রয়েছে, সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ। অর্থাৎ পুণ্যবানদের সান্নিধ্য মানুষকে পুণ্যের কাজে উদ্বুদ্ধ করে। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে মানুষকে আল্লাহওয়ালা ও নেককার মানুষের সান্নিধ্য গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও এবং যারা রুকু করে তাদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৩)

রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই কিছু লোক আছে, যারা কল্যাণের চাবিকাঠি এবং অকল্যাণের দ্বার রুদ্ধকারী। পক্ষান্তরে এমন কিছু লোক আছে, যারা অকল্যাণের দ্বার উন্মোচনকারী এবং কল্যাণের পথ রুদ্ধকারী। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩৭)

৪. ইবাদতে ভারসাম্য রক্ষা করা : ইবাদতের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আমল নির্বাচনে নিজের সামর্থ্য বিবেচনা করা ও ভারসাম্য রক্ষা করা আবশ্যক। রাসুল (সা.) বলেছেন, হে মানুষ, যত আমল তোমরা স্থায়ীভাবে করতে সক্ষম তত আমল‌ করবে। কেননা আল্লাহ তাআলা তোমাদের ইবাদতের সওয়াব দিতে ক্লান্ত হবেন না; বরং তোমরাই ইবাদত-বন্দেগি করতে করতে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়বে। আর অল্প হলেও আল্লাহর কাছে স্থায়ী আমল‌ই সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭১২)

ধারাবাহিকতা রক্ষার পুরস্কার জান্নাত

কোনো নেক আমল শুরু করার পর তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা, বিশেষত ঈমান ও আমলের ওপর দৃঢ়তার পুরস্কার জান্নাত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচলিত থাকে, তাদের কাছে অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলে, তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার জন্য আনন্দিত হও। আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমরা ফরমায়েশ করো। এটা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।’ (সুরা : ত হা-মিম-সাজদা, আয়াত : ৩০-৩২)

আল্লাহ সবাইকে আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষার তাওফিক দিন। আমিন।

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর