জাতীয় পার্থীকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে নতুন প্রার্থীতার আভাস

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন ময়মনসিংহ-৪। বিভাগীয় নগরীর জেলা সদরের মূল কেন্দ্রস্থল এ আসনের হিসাব-নিকাশ বেশ জটিল। বিগত সংসদ নির্বাচনে জোটগত কারণে এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এ কারণেই এ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ।

তবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি কোনোভাবেই ছাড় দিতে নারাজ ক্ষমতাসীনরা। এ নিয়ে চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির স্নায়ুযুদ্ধ। দেখার বিষয় হলো এবারো জোটগত নির্বাচন হলে শেষতক কার লাভ হবে? যদিও এ বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়।

সূত্রমতে, জেলা সদরের এ গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে নৌকা, লাঙ্গল বা ধানের শীষের কে হবেন কাণ্ডারী- এ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও দুই দলের দুই শীর্ষ চিকিৎসক নেতা নিজ নিজ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠ গরম করছেন। ফলে পেশাজীবী সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতার একই আসনে মনোনয়ন যুদ্ধ নির্বাচনী মাঠে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তারা হলেন ড্যাব মহাসচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও স্বাচিব মহাসচিব ডা. এম.এ আজিজ।

জানা যায়, নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে স্নায়ুযুদ্ধ থাকলেও ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিনা ভোটে নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পত্নী বেগম রওশন এরশাদ। মহাজোট ঠিক থাকলে আগামী নির্বাচনেও তিনি কোনোভাবেই এই আসন হাতছাড়া করতে চান না বলে দলটির একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেন, ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য উর্বর ভূমি। আর মূল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় সদর থেকে। এখানে নিজ দলের এমপি থাকা সংগঠনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। গতবার এ আসনটি ছাড় দেয়া হলেও এবার আমরা আশা করছি। তবে শেষতক মনোনয়ন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে সিদ্ধান্তই মাথা পেতে নেব দলীয় নেতাকর্মীরা।

সূত্রমতে, আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান বেগম রওশন এরশাদ। এর বাইরে নৌকার মনোনয়ন চাইছেন ধর্মমন্ত্রীপুত্র মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিতুর রহমান শান্ত, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা, সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, স্বাচিপ মহাসচিব ডা. এম.এ আজিজ, শিল্পপতি আমিনুল হক শামীম। তবে নেত্রী চাইলে আবারো এ আসনে নৌকার কাণ্ডারী হতে পারেন ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। যদিও বয়সের ভারে তিনি বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছেন।

মনোনয়ন বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জোম হোসেন বাবুল বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী রোডম্যাপে আছে। নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে ইতোমধ্যে নেত্রী নির্দেশনাও দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আমরা উঠান বৈঠক করছি, উন্নয়ন প্রচার করছি। তবে মনোনয়ন বিষয়ে নেত্রীই সিদ্ধান্ত দেবেন।

অপরদিকে দলীয় অন্তঃকলহে বিপর্যস্ত বিএনপি থেকে বিগত নির্বাচনে এ আসনটিতে মনোনয়ন পেয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। কিন্তু এবার তিনি নিজ জন্মস্থান মুক্তাগাছা থেকেই নির্বাচন করার আভাস দিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি এলাকায় যাওয়া-আসা বাড়িয়েছেন বলেও তার সুহৃদদের দাবি।

ফলে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে আগামী নির্বাচনে এ আসনে শক্তিমান প্রার্থী হয়ে আসছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন চাইছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পরীক্ষিত সাবেক ছাত্রনেতা আবু ওয়াহাব আকন্দ, শহর বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কাজী রানা এবং সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কোতোয়ালি বিএনপির সভাপতি কামরুল ইসলাম মো. ওয়ালিদ। ভোট রাজনীতিতে তিনি ইতোমধ্যে বেশ জায়গা করে নিয়েছেন বলেও অনুসারীদের দাবি।

এ বিষয়ে নগরীর ঐতিহ্যবাহী নাসিরাবাদ কলেজের সাবেক ভিপি কামরুল ইসলাম মো. ওয়ালিদ বলেন, দলীয় মনোনয়নে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করছি। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নেই নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করছি। দলীয় মনোনয়ন পেলে এ আসনটি বিএনপির ঘরে উঠবে বলে আশা করছি।

সূত্রমতে, কোনো কারণে ডা. জাহিদ এ আসনে নির্বাচন না করলে মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ। দলের দুঃসময়ে দীর্ঘ সময় ধরে দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকায় দলীয় পরিমণ্ডল ও সাধারণ ভোটারদের মনে ইতোমধ্যে পরীক্ষিত নেতা হিসেবে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন বলেও অনুসারীদের ভাষ্য।

এ ছাড়াও এ আসনে বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসেন খান দুলু সংস্কারপন্থির অভিযোগে দীর্ঘ সময় ধরে দল থেকে ছিটকে পড়লেও একাদশ নির্বাচন ধানের শীষ নিয়ে করতে ইতোমধ্যে উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি। যদিও দলীয় অঙ্গনে তার অবস্থান খুবই নড়বড়ে।

মনোনয়ন প্রশ্নে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, ছাত্রদলে জন্মলগ্ন থেকেই দলের জন্য কাজ করছি। দুঃসময়েও নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। আগামীদিনে দল চাইলে যে কোনো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। আশা করছি তৃণমূলের নিরীক্ষণে দল মূল্যায়ন করবে।

অপর একটি সূত্র জানায়, কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পেয়েই ময়মনসিংহ-৪ আসনে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। ইতোমধ্যে তিনি ময়মনসিংহবাসীকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন নগরীর দেয়ালে দেয়ালে। যা চূড়ান্ত নির্বাচনী প্রস্তুতি বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

এ সব বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ড্যাব মহাসচিব ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, মনোনয়ন বিষয়ে নেত্রীর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। দলের জন্য কাজ করছি। দলই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।

সূত্রমতে, এ আসনে বাম দলগুলো এখনো প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে না পারলেও মনোনয়ন পেতে আওয়াজ তুলছেন অনেকেই। তবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ইতোমধ্যে নিজেদের ঘরোয়া মিটিংয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দলটির একাধিক সূত্র। একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু।

ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে জেলা কমিটির সভাপতি তপন সাহা চৌধুরী, কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) থেকে জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত ও জেলা কমিটির মনিরা বেগম অনু মনোনয়ন চাইবেন।

অপরদিকে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে মনোনয়ন চাইছেন ইসলামী ঐক্যজোট থেকে মাওলানা মুফতি শরীফুর রহমান এবং জমিয়তে ইসলাম বাংলাদেশ থেকে মুফতি মাহাবুল্লাহর নাম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন বলেও দলীয় পরিমণ্ডলে আওয়াজ রয়েছে।

সূত্রঃ মানবকণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর