সবচেয়ে বড় অর্জন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্বীকৃতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিদায়ী ২০১৭ সালের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এ অন্তর্ভুক্ত  হওয়া।

কীভাবে কখন এই অর্জন হলো: ২০১৭ সাল ৩০ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনের ৩৯তম অধিবেশন চলছিল। সে সময় এই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, প্যারিসে বাংলাদেশের দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেনসহ আরো অনেকে।

এই অধিবেশনের শেষ দিন ইউনেস্কোর মহাপরিচালক মিজ বোকোভা ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রার’ সংক্রান্ত নথিতে স্বাক্ষর করেন। এই স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে এই বড় অর্জনের ঘোষণা আসে। ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী এই সুখবরটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে অবহিত করেন। বাংলাদেশ নামে একটি দেশ যেন এক উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছায়। আর এই গৌরবের অধিকার যেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে দেশের আপামর মানুষ। এই বার্তা পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ গেয়ে ওঠে, একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা, সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার ।

জানা গেছে, এই অর্জনের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০০৯ সালের ১২ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ সর্ব প্রথম শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনে প্রস্তাব দেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ‘ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব ইউনেস্কোতে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আর সে লক্ষ্যে ২৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি সার সংক্ষেপ পাঠান।

এই সার সংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী ৩০ মার্চ অনুমোদন দেন। এরপর থেকে এই ঐতিহাসিক ভাষণটি ইউনেস্কোর অন্য একটি প্রোগ্রাম ‘ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রার’-এ অন্তর্ভুক্তির জন্য অধিকতর উপযোগী বলে মনে করা হয়। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি কোরিয়ান ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন বিএনসিইউকে চিঠির মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিত ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ সম্পর্কিত এক কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানায়।

২০১১ সালে ১১ থেকে ১৪ মার্চ সেই কর্মশালায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই ভাষণের ওপর তৈরি করা একটি খসড়া প্রস্তাব পাঠানো হয়। ২০১৩ সালে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে অনুষ্ঠিত হয় পরবর্তী কর্মশালা। সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মনোনয়ন দেয় হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হককে। তিনি বাংলাদেশের প্রস্তাবটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুযায়ী সম্পন্ন করেন। পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ২০১৬ সালে ৪ থেকে ১৫ এপ্রিল প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ১৯৯তম নির্বাহী বোর্ড সভা চলাকালে শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন ও শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ অনুমোদন দেন।

একই সঙ্গে প্রস্তাবটি বাংলাদেশের দূতাবাসের সে সময়কার রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম আর ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডের বাংলাদশের প্রতিনিধি ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেন। ইউনেস্কোর মহাপরিচালক মিজ ইরিনা বোকোভার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রাখেন। আর এই যোগাযোগ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাঙালি জাতির এ অসামান্য সাফল্য অর্জনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় এর অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। কারণ তিনিই প্রথম শিক্ষামন্ত্রীকে এ ব্যাপারে যেমন উৎসাহ যুগিয়েছেন, তেমনি প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাস নাহিদ ২০০৯ সাল থেকেই বিএনসিইউর চেয়ারম্যান হিসেবে ইউনেস্কোর কার্যক্রমের সঙ্গে সংপৃক্ত ছিলেন। আর ৩৮ ও ৩৯তম সাধারণ সম্মেলনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুবাদে ইউনেস্কোর মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। আর সেই যোগাযোগের মাহেন্দ্রক্ষণটি এসে ধরা দেয় ইউনেস্কোর ৩৯তম অধিবেশেনের একেবারে শেষ দিন।

সূত্রঃ মানবকণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর