করিমগঞ্জে হামলার পর উল্টো মামলা : আসামি ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রও

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  করিমগঞ্জে কয়েকটি নিরীহ দরিদ্র পরিবারের ওপর প্রভাবশালী একটি মহল হামলা চালিয়ে নারী-পুরুষকে নির্বিচারে আহত করে। ভাংচুর করা হয় বাড়িঘর। লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হয় ওই দরিদ্র পরিবারগুলোর ঘরের আসবাবপত্র, চালডাল, গ্যাসের চুলা। আহত হয়েও তাদের রক্ষা নেই। উল্টো এখন তাদের বিরুদ্ধেই মামলার খড়গ ঝুলছে। মামলা করেছে হামলা ও লুটপাটকারীরাই। মামলায় আসামি করা হয়েছে আহত হওয়া পরিবারগুলোর ১৯ জনের নামে। এর মধ্যে নাদিম (১০) নামের চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রকেও আসামি করা হয়েছে। আর এ মামলা নিয়েছে করিমগঞ্জ থানা। আহত হওয়া পরিবারের সদস্যরা আজ শুক্রবার সকালে জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র নাদিমও উপস্থিত ছিল। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে করিমগঞ্জ উপজেলার উরদিঘী মরিচখালি গ্রামের বাসিন্দা তাওহিদুল ইসলাম খোকন জানান, একই গ্রামের মহিউদ্দিন খান মলাই (৬৫), জলাই খান (৬৩) ও সেলিমদের (৩৫) সঙ্গে জমিজমা নিয়ে তাদের মামলা ছিল। সেই কারণে প্রায়ই হামলাকারীরা তাওহীদ ও তার পরিবারের লোকদের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এর জের ধরে গত ২৮ জুন ভোর ৫টার দিকে মহিউদ্দিন খান, জলাই খান, সেলিম ও সেলিমের চাচাশশুর জামাল নেতৃত্বে কতিপয় ব্যক্তি রামদা, ছোরা ও রডসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে খোকনদের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা তাওহিদুল ইসলাম খোকন, খোকনের মা সুফিয়া, হবি মিয়া, নজরুল, মতিউর রহমান, সামছুন্নাহার, ছালেক, জুয়েনা, আক্কাছ ও হাবিবুর রহানের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়াগায় রামদা ছোরা ও রড দিয়ে আঘাত করেন। হামলাকারীরা আহতদের দুটি ঘর ভেঙে পাশের বর্ষার পানিতে ফেলে দেন। শুধু তাই নয় হামলাকারীরা আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে দেয়নি। পরে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসী তাদের হামলাকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করে জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় তাওহিদুল ইসলাম খোকন বাদী হয়ে ১ জুলাই করিমগঞ্জ থানায় মহিউদ্দিন খান, জলাই খান ও সেলিমসহ ১৩ ব্যক্তির নামে মামলা করেছেন। অন্যদিকে হামলাকারীরা উল্টো মিথ্যা হামলার ঘটনা সাজিয়েছেন এবং আহত পরিবারের ১৯ জনকে আসামি করে সেলিম সরকার বাদী হয়ে করিমগঞ্জ থানায় একই দিনে পৃথক মামলা করেন। এ মামলায় তাওহীদুল ইসলামের ভাতিজা ও আহত মতিউর রহমানের ছেলে স্থানীয় রোজফ্লাওয়ার কিন্ডার গার্টেন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র আহমেদ নাদিমকেও (১০) আসামি করা হয়েছে। এ মামলা করিমগঞ্জ থানা রেকর্ডও করে। গত বুধবার নাদিমসহ মামলার ১২ আসামি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তাওহীদুল ইসলামের মা মাথায় দায়ের কোপে আহত ছফুরা খাতুন, শিশু আসামি আহমেদ নাদিম, নাদিমের আহত মা সুফিয়া খাতুন, আবু সাঈদ প্রমুখ। দুটি মামলারই তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে এসআই মাহাবুল ইসলামকে। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রর বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করার বিষয়ে এসআই মাহাবুলকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, মামলার বাদী এজহারে নাদিমের বয়স ২০ বছর উল্লেখ করেছে। সে হিসেবেই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু নাদিম যে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তা আমার জানা ছিল না। তদন্তে প্রমাণ হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর