স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও স্বীকৃতি মেলেনি দক্ষিণাঞ্চলের বধ্যভূমিগুলোর

৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান সেনা বাহিনী দেশীয় দোষরদের নিয়ে বরিশার্লেঅগৈলঝাড়া, গৌরনদীসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নি সংযোগ আর গণহত্যার চরম উন্মাদনায় মেতে উঠেছিলো। তাদের হিংস্রতার ছোঁবল ছিলো সভ্যতা বিবর্জিত। পাক বাহিনীর বর্বরতা থেকে রেহাই পায়নি মায়ের কোলের ছোট শিশুটিও। বাঙালীর ইতিহাসকে মুছে ফেলতে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে বিভিন্ন স্থানে লাশ ফেলে তার। পরে স্থানীয়রা ওই লাশগুলোকে একত্রিত করে বিভিন্ন স্থানে গনকবর দেয়। গনকবরের স্মৃতি রক্ষার্থে বরিশাল জেলার বিভিন্নস্থানে কিছু গনকবর ইতোমধ্যেই সরকারিভাবে চিহ্নিত হলেও অধিকাংশ বধ্যভূমিগুলো সরকারীভাবে চিহ্নিত না হওয়ায় স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরে এখন তা স্বজন হারানোদের কাছে দুঃসহ স্মৃতি হয়েই রয়ে গেছে। বধ্যভূমিতে তাদের প্রিয়জনের গণকবরগুলো পরে রয়েছে অযতœ আর চরম অবহেলায়।

মুক্তিযোদ্ধা গবেষকদের মতে, আগৈলঝাড়া উপজেলায় বেসরকারী হিসেবে ৬টি বধ্যভূমির কথা জানা গেছে। তবে এর বাইরেও বেশ কিছু স্থানে পাক বাহিনী গুলি করে হত্যা করে আরও কয়েকটি জায়গায় বেশ কিছু লোকজন। সরকারী স্বীকৃতি না পাওয়া বধ্যভূমিগুলো হলো- দক্ষিনাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের পাত্তর বাড়ির পাশের কেতনার বিল, (পাত্তর, একটি বংশ), রাংতা গ্রামের কেতনার বিল। এখানে গনহত্যার শিকার হয় প্রায় সহস্রাধিক নিরীহ লোক। রাজিহার গ্রামের খ্রিস্টান পল্লীর বধ্যভূমি। এখানে খ্রিষ্ট সম্প্রদায়ের হালদার বংশের ৭জনকে একসাথে রশি দিয়ে বেঁধে নির্বিচারে হত্যা করে পাক বাহিনী। দুটি বধ্যরূমির মেলেনি সরকারী স্বীকৃতি

গৈলা ইউনিয়নের কাঠিরা ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ সংলগ্ন আরেকটি বধ্যভুমি। এখানে হত্যা করা হয় অর্ধশতাধিক লোককে। সেখানে ব্যাক্তি উদ্যোগে একটি স্মৃতি ফলক নির্মান করা হয়, মেলেনি সরকারী স্বীকৃতি। ওই ইউনিয়নের পতিহার গ্রামের বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) গণহত্যা করা হয়েছিলো ২০জনকে। দক্ষিণ শিহিপাশা গ্রামের বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) ৩০ জন গণহত্যার শিকার হয়।

তৎকালীন গৌরনদী থানার অংশ হিসেবে শুধু আগৈলঝাড়াই নয় পাক বাহিনী নৃশংসতার ছোঁবল পরে গৌরনদীতেও। গৗরনদী উপজেলায় রয়েছে ৪টি বধ্যভূমি। এগুলো হলো- কলেজ সংলগ্ন হাতেম পিয়নের বাড়ির ঘাটলার বধ্যভূমি (অচিহ্নিত) প্রায় ৫ শতাধিক, গয়নাঘাটা পুল এলাকার বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) তিন শতাধিক, পালরদী নদীর তীরবর্তী বর্তমান সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) প্রায় তিন শতাধিক, বাটাজোর হরহর মৌজার মরার ভিটার বধ্যভূমিতে (অচিহ্নিত) প্রায় দু’শতাধিক ব্যক্তিকে গণহত্যা করা হলেও রাষ্ট্রিয় উদ্যোগে কোন স্মৃতিসৌধ নির্মান তো দুরের কথা সরকারী স্বীকৃতিটুকুও মেলেনি একাত্তরে গণহত্যার স্বাক্ষী এসকল বধ্যভূমির।

বরিশাল জেলার মধ্যে সর্বশেষ পাক হানাদার মুক্ত হয় গৌরনদী। ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর মেজর ডিসি দাসের মাধ্যমে সরকারি গৌরনদী কলেজে স্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থানরত পাক সেনারা এদিন মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে।

এর পূর্বে কলেজের পশ্চিম দিক থেকে মুজিব বাহিনী ও পূর্বদিক থেকে নিজাম বাহিনী আক্রমন করেন। দীর্ঘ ২৮ দিন যুদ্ধের পর পাক সেনারা পরাস্ত হয়। মুজিব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কৃষক নেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের জেষ্ঠ পুত্র আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তার চাচাতো ভাই আ. রকিব সেরনিয়াবাত, কসবার ফজলুর রহমান হাওলাদার, বিল্বগ্রামের মেজর শাহ আলম তালুকদার ছিলেন তার সহযোগী। নিজাম বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন আকন।

জেলার মধ্যে সর্বশেষ পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিলো গৌরনদী। সরকারি গৌরনদী কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পে অবস্থানরত পাক সেনারা ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর মেজর ডিসি দাসের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর কাছে আতœসমর্পন করেছিলো। এরপূর্বে কলেজের পশ্চিম দিক থেকে মুজিব বাহিনী ও পূর্বদিক থেকে নিজাম বাহিনী আক্রমন করেন। দীর্ঘ ২৮ দিন যুদ্ধের পর পাক সেনারা পরাস্ত হয়। মুজিব বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কৃষক নেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। তার চাচাতো ভাই আ. রকিব সেরনিয়াবাত, কসবার ফজলুর রহমান হাওলাদার, বিল্বগ্রামের মেজর শাহ আলম তালুকদার ছিলেন তার সহযোগী। নিজাম বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন আকন।

স্বাধীন দেশের সর্বশেষ পাক হানাদার মুক্ত গৌরনদীতে ১৯৭৫ সালের ৭ মে তৎকালীন মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সৌধ নির্মানের জন্য ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ’১৫এর ১৫ আগস্ট কালো রাতে রব সেরনিয়াবাত ঘাতকের বুলেটে শহীদ হন। ফলে সেই থেকে থমকে আছে স্মৃতি সৌধ নির্মানের উদ্যোগ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুজীব বাহিনীর বরিশাল জেলা প্রধান আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি জানান, জাতির প্রত্যাশা পুরনের চেয়ে গ্লানি বেশী। যে গ্লানি নিয়ে আজো আমরা লড়াই করি। এখনও অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। অথচ জীবন বাচাতে পালিয়ে থাকা ব্যাক্তিরাও টাকার বিনিময়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে ভাতাসহ রাষ্ট্রিয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছে। যা জাতির জন্য কলংজনক। তিনি আরো জানান, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সরকার কর্তৃক গঠিত পাকিস্তানের জাতীয় শান্তি কমিটির প্রভাবশালী ১০৪ জন সদস্যের মধ্যে বরিশালের রয়েছে ৩১ জন। আর এই ৩১ জন সদস্যকে নিয়ে ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল বরিশালে প্রথম গঠিত হয় স্বাধীনতা বিরোধী জেলা শান্তি কমিটি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর