ইতিহাসের কাঠগড়ায় ফের ওয়ান ইলেভেন

পীর হাবিবুর রহমান:

ওইতিহাসের কাঠগড়ায় সেই ওয়ান ইলেভেন। ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বক্তব্য ঘিরে পেন্ডুলামের বাক্সটি ওপেন হয়েছে। সারা দেশেই সরকারি দলের কর্মীদের দায়ের করা মামলা সতর্কতায় যাচ্ছে। এখানেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হচ্ছে না। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার একুশের আলোচনা সভায় মাহফুজ আনামকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ডেইলি স্টারসহ দেশের দু’টি পত্রিকা সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ডিজিএফআইয়ের লিখে দেয়া মিথ্যে সংবাদ ছাপিয়ে রাজনীতি থেকে তাকে এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। ডেইলি স্টার সম্পাদক তাকে দুর্নীতিবাজ বানানোর বহু চেষ্টা করেছেন যদিও তাদের পিতৃতুল্য বিশ্বব্যাংকও তা বানাতে পারেননি।

সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে মাহফুজ আনাম নিজেই বলেছেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ডিজিএফআইয়ের সরবরাহ করা দুর্নীতির খবর যাচাই-বাছাই না করে প্রকাশ করে নীতিগত দিক থেকে তিনি ভুল করেছেন।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেইলি স্টার সম্পাদককে উদ্দেশ করে বলেছেন, ডিজিএফআই তথ্য দিয়েছে আর আপনি সুবোধ বালকের মতো লিখে দিলেন, এটা কোনো পাগল বিশ্বাস করবে? তার জন্য আমাদেরসহ দেশের জনগণকে খেসারত দিতে হয়েছে। অথচ তিনি ভুল স্বীকার করে পদত্যাগ করার সাহস দেখাতে পারেননি। তাই শুধু ভুল স্বীকার নয়, এতটুকু আত্মমর্যাদা থাকলে নিশ্চয়ই তিনি পদত্যাগ করতেন। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা উদাহরণ টেনে বলেন, মাত্র কিছুদিন আগে বিবিসিতে এক বৃটিশ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটা নিউজ ছাপা হয়। পরবর্তীতে তদন্তে নিউজটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় সংস্থাটি শুধু ক্ষমাই চাননি, মহাপরিচালক রিপোর্টারসহ ওই রিপোর্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই পদত্যাগ করে চলে যান।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আমার মতো অনেকেই মনে করতে পারেন তিনি চাইছেন রহস্যময় ওয়ান ইলেভেনের আগমন, এর নেপথ্য কুশিলব, দেশি-বিদেশি শক্তি এবং সেই সময়কার ঘটনা প্রবাহ জাতির সামনে উন্মোচিত হোক। সেই কারণেই ইতিহাসের কাঠগড়ায় আজ ওয়ান ইলেভেনকে টেনে আনা হয়েছে। আমরা যদি পেছনে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাই ২০০৬ সালে মেয়াদপূর্তি শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘিরে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়া বিএনপির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে রাখার একগুঁয়েমি দাম্ভিক আচরণ, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের গ্রহণযোগ্য ভোটার তালিকা ও তত্ত্ব্াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন যখন সহিংস রূপ নিয়ে গোটা বাংলাদেশকে অচল অবরুদ্ধ করে দেয় ঠিক সেই সময়ে ২২ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন বাতিল করে বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে দিয়ে জরুরি অবস্থাই জারি হয়নি, সেনা সমর্থিত তত্ত্ব্াবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। সেই পরিবর্তনকে আওয়ামী লীগসহ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ স্বাগত জানিয়েছিল। সেই সময় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্টিমরুলার রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ওপর কঠোরভাবে নেমে এলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ বিদ্রোহ করেননি, প্রতিবাদ করেননি। ওয়ান ইলেভেনের নেপথ্যে যেসব বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিকদের জোর তত্পরতা ছিল বল তাদের কোর্ট থেকেও এক সময় সরে যায়। রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, নির্বাচনী ও সাংবিধানিক ব্যাপক সংস্কারে স্বপ্ন দেখিয়ে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করলেও ওয়ান ইলেভেন সরকার পরবর্তীতে অপরিকল্পিতভাবে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী থেকে তৃণমূলকর্মী ও ব্যবসায়ীদের ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে ধরে ধরে কারাগারেই পুরেনি, দেশ ছাড়াই করেনি, তাদের সামাজিক মান-সম্মানই লুণ্ঠন করেনি, এমনকি স্ত্রী-সন্তানদেরকে নাজেহাল করে জনমত দূরে ঠেলে দেয়। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে বাধাদান ও গ্রেফতারের দিন টেনে-হিঁচড়ে যেভাবে আদালতে নিয়ে গেছে টিভির পর্দায় সেই দৃশ্য দেখে মানুষের আবেগ সহানুভূতি তার দিকেই ঝুঁকেছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া দেশের কোনো রাজনৈতিক নেতা, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, চিকিত্সক কেউ প্রতিবাদ করেননি। ওয়ান ইলেভেনের চ্যালেঞ্জটাকে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা সাহসিকতার সঙ্গে পাল্টা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে যে পথ নিয়েছিলেন সেই পথেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ঘিরে ক্যাম্পাস প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছিল। ছাত্র সমাজ রুখে দাঁড়িয়েছিল। সেই দিনের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রতি তার দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মরহুম জিল্লুর রহমান অশীতিপর বৃদ্ধ হয়েও আনুগত্য দেখাতে ভুলেননি। অন্যদিকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি মরহুম খন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছাড়া কেউ সাহসী ভূমিকা রাখেননি। দুর্নীতির কলঙ্ক মাথায় নিয়ে কেউ জেলে, কেউ বিদেশে পলাতক জীবন নিয়েছিলেন। আর কেউ কেউ ভয়ে ওই সরকারের নেপথ্য শক্তির সঙ্গে আঁঁতাত করেছিলেন। আর অন্যদিকে দুই দলেরই ছোট-বড় অসংখ্য নেতা সংস্কারের দাবি তুলে শেখা হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের চেহারা উন্মোচিত করেছিলেন। সংস্কারবাদী হিসেবে চিহ্নিত সেইসব নেতাকর্মীর কেউ কেউ পরবর্তীতে দলে ঠাঁই না পেলেও অনেকেই পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের অনেকেই মন্ত্রী, এমপি, নেতা হয়েছেন। ওয়ান ইলেভেন সাধারণ মানুষের মন জয় করেছিল স্বপ্ন দেখিয়ে। সেই স্বপ্ন ছিল দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন, সেটি প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্রায়নের পথে রাজনীতিক ও নির্বাচনী সংস্কার। নির্বাচনী সংস্কারের দাবিটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলও জানিয়ে এসেছিল। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের দিকে তাকিয়ে আমরা দেশের মানুষ অনেকেই স্বপ্ন দেখেছিলাম সংস্কারের পথেই একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই জনগণের দ্বারা জনগণের সরকার নির্বাচিত হয়ে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দানই নয়, আইনের শাসন এক কথায় সুশাসন নিশ্চিত করে আদর্শিক রাজনীতির দুয়ার উন্মুক্ত করা। জনগণের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে আসা ওয়ান ইলেভেন সরকার নিজেদের স্বেচ্ছাচারী উন্ন্যাসিক আচরণের কারণে নিজেরাই পরাস্ত হয়নি, পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা মানুষের বুক ভরা আশা ভেঙে দিয়ে সমাজে তাদের সততা ও দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। সেই সময় ওয়ান ইলেভেনের কোনো কোনো কুশীলবের বিরুদ্ধে মাঠ পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দু হাতে লুটপাটের অভিযোগও উঠেছিল। এমনকি ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামা লীগ ক্ষমতায় আসার পর মহান সংসদে দাঁড়িয়ে দলের অনেক নেতা মইনুদ্দিন, ফখরুদ্দিনগণের সীমাহীন বাড়াবাড়ির বিচার দাবি করলেও তা পাননি। উল্টো সরকারের আনুকূল্যে কেউ কেউ বহাল তবিয়তেই থাকেননি কেউ বা সরকারি কূটনৈতিক চাকরি নিয়ে সুখের জীবন-যাপন করেছেন।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজের প্রজ্ঞা সাহস আর নেতৃত্বের দৃঢ়তায় ঘরে-বাইরের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করলেও দৃশ্যমান হয়েছে ওয়ান ইলেভেনের কার্যকর বেনিফিসিয়ারি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রশক্তি। ওয়ান ইলেভেনের সময় ও তার পরে চড়া মাশুল দিতে হয়েছে বিএনপি ও তার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। তাই প্রধানমন্ত্রী যখন দুই নেত্রীকে মাইনাসের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দুই সম্পাদকের বিরুদ্ধে আনছেন তখন বিএনপি তার পাশে না দাঁড়িয়ে ওই দুই সম্পাদকের পক্ষেই সাফাই গাইছেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ওয়ান ইলেভেন যেমন দুই নেত্রীকে মাইনাস করতে চেয়েছিল এই সরকার তেমনি খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে দিতে চাচ্ছেন। তাই তারা প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়াননি।

ওয়ান ইলেভেনে যৌথবাহিনী ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে জোর করে যে শত শত কোটি টাকা আদায় করেছিল তাও সরকার ফিরিয়ে দেয়নি। ওয়ান ইলেভেনের দৃশ্যপট যদি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মাথায় নিয়ে চিন্তা করা হয় তাহলে দেখা যাবে মাহফুজ আনাম ভুল স্বীকার করলেও একটি কথা সত্য বলেছেন। সেদিন ডেইলি নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির ছাড়া সবাই তার পথ নিয়েছিলেন। নামের প্রথম অক্ষর ‘এস’ দিয়ে লেখা যায় এমন আট জনের সাংবাদিক গ্রুপ সেদিন নিয়মিত গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নৈশভোজ করতেন। সেইদিন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ শেরাটনেই সভা করুন আর ক্যান্টনমেন্টে চায়ের দাওয়াত করুন সম্পাদকরা কতটা দৃষ্টি কাড়বেন কতটা কাছে যাবেন সেই প্রতিযোগিতাই করেছেন। এমনকি জেনারেল মইন উ আহমেদ সেই সময় বিশ্বে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়ায় পর্যাপ্ত চাল আমদানি করতে না পারার কারণে আলু খাওয়ার ওপর চাপ বাড়িয়েছিলেন। সম্পাদকদের চা-চক্রে সব খাবার ছিল আলুর মেনুতে তৈরি। সেই আলুর প্রশংসায় সিনিয়র সাংবাদিকরা ধন্য ধন্য করেছেন। অনেক সম্পাদক জুনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে ছুটে যেতেন, তাদের অনেককেই সরকার প্রধানসহ মন্ত্রীদের আশেপাশে পাওয়া যায়। মাহফুজ আনাম অনেক বিদ্যান, প্রধানমন্ত্রীর সমলোচনা করা শিখেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুন্দর করে কথা বলা রপ্ত করেছেন। কিন্তু কার সঙ্গে পর্দায় যেতে হয় সেটি শেখেননি বলে ভুল স্বীকার করে ধরাটা খেয়েছেন। ভুল করে থাকলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বীকার করবেন, তার পাঠক ও মানুষের কাছে বলবেন। ক্ষমা চাইলেও যার বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করেছেন কিংবা যাদেরকে খবর পরিবেশন করেছেন তাদের কাছেই চাইবেন। টকশোতে কেন চাইতে গেলেন? তার বিরুদ্ধে মামলার আইনি পদক্ষেপ আইনগতভাবেই তিনি নিবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মাহফুজ আনামসহ তার ঘরানার দুই সম্পাদকের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন সেই ব্যাপারে তার ব্যাখ্যা ও বক্তব্য আমরা চাইতেই পারি এবং সরকারের কাছে ষড়যন্ত্রের যে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে সেগুলো প্রকাশের দাবি রাখতে পারি। ওয়ান ইলেভেনের সরকারকে সমর্থন ও তার কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয়ার ঘোষণা নিপীড়নের মুখে পড়ে কথিত আওয়ামী লীগ দিয়েছিল। এখন প্রশ্ন ওয়ান ইলেভেনের দেয়া সরকারের নির্বাচনে গণরায় নিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেই সংসদে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ বিচারের দাবি তুলেছিলেন। সেদিন সংসদে বিরোধী দল বিএনপিও এই দাবি তুলেছিল কিন্তু বিচার হয়নি। আজ এত বছর পর একজন মাহফুজ আনামকে ঘিরে ইতিহাসের বহুল বিতর্কিত ওয়ান ইলেভেনকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসায় মানুষের কৌতূহল-সরকার আসলে কি চায়? মিথ্যে সংবাদ পরিবেশনের জন্য ভুল স্বীকার করায় শুধু মাহফুজ আনামের বিচার নাকি একই অপরাধে অভিযুক্ত সেই সময়ের অন্যসব সম্পাদক ও দায়িত্বশীলদেরও বিচার? যদি ওয়ান ইলেভেন ঘিরে সম্পাদকদেরই বিচার হয় তাহলে প্রশ্ন যদি সংবিধান লঙ্ঘনেরই হয় তাহলে মউনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনসহ সেই সময়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখা সামরিক-বেসামরিক এবং তাদের সঙ্গে রাতের অন্ধকারে বৈঠক করা রাজনৈতিক নেতাদের কি হবে? কি হবে ফখরুদ্দিন সরকারের উপদেষ্টাদের? কিইবা হবে শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার আগেই ধানমন্ডির একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার বৈঠক করেছিলেন? যারা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এমনকি তত্কালীন আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী সাংগঠনিক সম্পাদকের বাড়িতে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে ২৩ নেতা বৈঠক করেছিলেন তাদের কি হবে? তাদের অনেকেই সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতা। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ক্ষমা করে দিলেও ভুলিনি। তার নিশ্চয়ই তথ্য-উপাত্তসহ সকল ঘটনা হাতের মুঠোয় রয়েছে। এমনকি মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে সম্পাদক পরিষদ যে বিবৃতি দিয়েছেন তার জবাবে শেখ হাসিনা যুুক্তিনির্ভর জবাব দিয়ে জানতে চেয়েছেন তাকে যখন গ্রেফতার করা হয়েছিল তখন এরা কোথায় ছিলেন? এমনকি ওয়ান ইলেভেনে শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে যেসব সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী বিবৃতিতে সই দিতে চাননি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারাও অনেকে বেনিফিশিয়ারি হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হূদয় রক্তাক্ত একাত্তর কেটেছে বন্দীদশায়। পঁচাত্তরে তার পরিবারকে হত্যা করা হয়েছিল নৃশংসভাবে। জীবনে ২১ বারের ওপর তার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছে। একুশের গ্রেনেড হামলায় প্রকাশ্য দিবালোকে জনতার মঞ্চ থেকে তাকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। হূদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে তিনি অভিযোগ করেছেন-ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো ২০ বছর ধরে তার বিরুদ্ধে কুত্সা রটিয়ে যাচ্ছে। যদি তাই সত্য হয় ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরসঙ্গী যারা করেছেন তারা কারা? তারা নিশ্চয়ই বিএনপির কেউ নন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকেন। ওয়ান ইলেভেন নিয়ে একটি নির্মোহ গ্রহণযোগ্য জাতীয় কমিশন গঠন করে এর পোস্টমর্টেম হওয়া দরকার। হয় সবাইকে ক্ষমা, না হয় তদন্তের মাধ্যমে নেপথ্যে কুশীলব থেকে শুরু করে যারা সংবিধান আইন লঙ্ঘন করেছেন, জুলুম নির্যাতন করেছেন, দুর্নীতি করেছেন তাদের পুরস্কৃত নয়, তিরস্কৃত নয় আইনের আওতায় এনে বিচার করা যেতে পারে। কিন্তু মনে রাখা দরকার ওয়ান ইলেভেনের ব্যর্থতা রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদেরই নাজেহাল কারেনি সমাজের শুভ চিন্তার মানুষ ও রাজনীতিবিদদেরও প্রশ্নবিদ্ধ করে গেছে। কোনো কোনো রাজনীতিবিদের সারা জীবনের অর্জন কবর দিয়েছে। সামরিক-বেসামরিক দেশপ্রেমিক অনেককে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তেমনি দুই নেত্রীর রাজনৈতিক কর্তৃত্বের জায়গাটিকেও নিরঙ্কুশ করেছে। সবচেয়ে দু:খজনক হলেও সত্য ওয়ান ইলেভেনে অনেকের সঙ্গে বাড়াবাড়ি আচরণ করা হলেও কাউকে কাউকে চিহ্নিত করতে ভুল করা হয়নি। কিন্তু একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতাকর্মী, আমলা ও ব্যবসায়ীদের জন্য ওয়ান ইলেভেন কোনো শিক্ষাই নিয়ে আসেনি। তাদের উন্ন্যাসিকতাই বলে দেয় ওয়ান ইলেভেনে বড় শিক্ষাই হচ্ছে দেশের জনগণ দুই নেত্রীর সঙ্গে বাকি রাজনীতিবিদগণ তাদের করুণাশ্রিত মাত্র। এদেশে একদলীয় শাসন জনগণ মানেনি, সামরিক শাসন কল্যাণ বয়ে আনেনি, সেনা সমর্থিত সুশীলের শাসন গর্দভের শাসনে পরিণত হয়েছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা উত্তম বলে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

লেখক:প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি ডটকম

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর