ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর একনেকে ১০ হাজার কোটি টাকার ৮ প্রকল্প অনুমোদন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনা পরিস্থিতিতে উন্নয়নে প্রকল্পে ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এরই মধ্যে প্রকল্পের আওতায় নতুন গাড়ি কেনা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় আপ্যায়ন, বিদেশ ভ্রমণ ও অন্য যেকোনো কেনাকাটায় সাশ্রয়ী হতে হবে। তবে এর মধ্যে কিছু অর্থ সাশ্রয়ও হচ্ছে। যেমন জুমের মাধ্যমে মিটিং হওয়ায় আপ্যায়নসহ অনেক খরচ কমে গেছে। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠক পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

যত্রতত্র সেতু নির্মাণ না করার নির্দেশ দিয়ে একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন এমন একটি পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, জনপ্রতিনিধিরা সবাই ঘরে ঘরে সেতু চান। কিন্তু এতে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দুই দিক থেকেই ক্ষতি হয়। তাই এখন থেকে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।

ভ‚মি ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জমির মালিকানা নিষ্কণ্টক হতে হবে। এ জন্য ভ‚মি ব্যবস্থাপনা উন্নত করা জরুরি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জমি সুরক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে চাই। পার্বত্য চট্টগ্রাম, হাওর ও চরাঞ্চলসহ দেশের প্রত্যন্ত সব এলাকাতেও বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিতে হবে।

এদিকে একনেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন ১৮টি ওয়ার্ডেও সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার নির্মাণ ও উন্নয়ন-ফেজ-১ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণসহ ৮ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১০ হাজার ১০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা দেবে ৩৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

সূত্র মতে, ২০১৬ সালে তেজগাঁও সার্কেলভুক্ত ১৬টি ইউনিয়নকে অন্তর্ভুক্ত করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে স¤প্রসারিত করা হয়। এতে উভয় সিটি করপোরেশনে নতুন ১৮টি করে ওয়ার্ড যুক্ত হয়ে আয়তন আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এর আগে এসব এলাকার উন্নয়ন না হলেও গত সিটি নির্বাচনের পর উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৮টি নতুন ওয়ার্ডে। এর জন্য ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি গতকাল একনেক অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটি দুর্নীতিমুক্তভাবে বাস্তবায়িত হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স¤প্রসারিত এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। নগরবাসী কাঙ্খিত নাগরিক সেবা লাভ করবে। ওই এলাকায় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাড়বে মানুষের জীবনযাত্রার মান।

প্রকল্পটি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে কাউকে পেছনে ফেলে নয়, সবাইকে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সেই নীতি মেনেই চলমান উন্নয়নের সঙ্গে সবাইকে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ ক্ষেত্রে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা হবে না। এসব ওয়ার্ডে রাস্তাঘাট, অবকাঠামো বলতে তেমন কিছুই নেই। তাই এসব ওয়ার্ডের সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়নের মাধ্যমে যান চলাচল সহযোগিতা বাড়ানো ও যানজট নিরসন, নর্দমা নির্মাণ ও খাল উন্নয়নের মাধ্যমে জলবদ্ধতা দূরীকরণ এবং এলইডি বাতি স্থাপনের মাধ্যমে পরিবেশগত উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। চলতি মাস থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। প্রকল্পটি সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় পরিকল্পিত নগরায়ন এবং উন্নত নাগরিক সেবা প্রদান সংক্রান্ত সিটি করপোরেশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই। আমাদের এগিয়ে যেতে হলে কৃষিকে আধুনিক করতে হবে। উৎপাদন খরচ কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্গম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের জন্য সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ শীর্ষক নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকা। দেশের ৬৪ জেলার সবগুলো উপজেলায় এটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কৃষিকে ব্যবসায়িকভাবে অধিক লাভজনক ও বাণিজ্যিকভাবে টেকসই করে ফসল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে জানান তিনি।

প্রকল্পটি নিয়ে এম এ মান্নান বলেন, চলতি মাস (জুলাই) থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়ছে। একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নসহ নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প। এছাড়া তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভ‚মি জরিপ করার জন্য ভ‚মি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, ভ‚মি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন, রংপুর জোন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প।

সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়‚ন, মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজি’র মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর