উন্নয়নের রাজনীতির চিন্তাভাবনা বাদ দিতে হবে: এমপি হারুনুর রশীদ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে উন্নয়নের রাজনীতির চিন্তাভাবনা বাদ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি বলেছেন, উন্নয়নের রাজনীতির চিন্তাভাবনা বাদ দিতে হবে। দেশ বাচাঁও, মানুষ বাঁচাও-এর রাজনীতি করতে হবে। উন্নয়নের ব্যয় কমাতে হবে। প্রয়োজনে মন্ত্রিপরিষদের আকার ছোট করতে হবে। এর মাধ্যমে ব্যয় কমিয়ে মানুষকে বাঁচানোর পদক্ষেপ নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে অগ্রসর হতে হবে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার সময় অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিকে ফোন করে, মেসেজ দিয়ে সাড়া পাওয়া যায় না। ওই অফিসের পিএস, পিএ, পরিচালক কেউই ফোন ধরেন না। চীনা বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের করোনা ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর একটি বিকলাঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এগুলো পরিবর্তন করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দিন। তাদের পরিবর্তে পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপযুক্ত ও প্রতিশ্রুতিশীল ব্যক্তিদের সেখানে বসাতে হবে।

করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে হারুনুর রশীদ বলেন, বিএমএ আওয়ামী লীগের একটি প্রতিষ্ঠান। তারা বলছেন, করোনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দায় মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের। এটা বাস্তব কথা। করোনা হাসপাতালে চিকিৎসকদের কী দুরাবস্থা। রোগীরা কী অবস্থায় আছেন। কোনো খবর নেই।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে তা আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। দেশে এখন জাতীয় যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় ঐক্য দরকার। ঐকমত্য প্রশ্নে যে ক্ষতগুলো সৃষ্টি হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে হাজার হাজার মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে।

হারুনুর রশিদ এদিন সংসদে যোগ দেন মুজিব কোট পরে। বাজেটের ওপর আলোচনার জন্য তাকে ১২ মিনিট সময় দেয়া হয়। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের ‘উন্নয়নের কথা চিন্তা না করে’ মানুষ বাঁচানোর স্বার্থে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন।

হারুনুর রশিদ এ সময় বিএনপি চেয়ারপারস খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ দলটির ‘হাজার হাজার’ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলার’ অভিযোগ তুলে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান। সংসদে তারেক জিয়ার প্রসঙ্গ ওঠায় সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা প্রায় সবাই তার প্রতিবাদ করেন। এ সময় সংসদে হইচই শুরু হয়। এরই মধ্যে হারুনুর রশিদের নির্ধারিত ১২ মিনিট শেষ হয়ে যায়। তবে তিনি না বসে বক্তব্য অব্যাহত রাখেন এবং সময় বাড়িয়ে দেয়ার জন্য ডেপুটি স্পিকারের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু ডেপুটি সময় না বাড়ালে এর প্রতিবাদে সংসদ কক্ষ ত্যাগ করতে উদ্যত হন হারুনুর রশিদ। ডেপুটি স্পিকার তখন তাকে বসতে এবং তার কথা শুনতে অনুরোধ করেন।

পরে জাতীয় সংসদের বৈঠকে সভাপতির দায়িত্বপালনকারী ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার বিরুদ্ধে ‘বক্তব্যে হস্তক্ষেপের’ অভিযোগ তুলে ‘ওয়াক আউট’ করেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ।

এ পর্যায়ে হারুন“র রশিদ চেয়ারে বসলে ডেপুটি স্পিকার বলেন, ‘আপনি জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন, এটি সুন্দর প্রস্তাব। কিন্তু আপনি এমন দুজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন- যাদের কথা আমি সংসদের এই চেয়ারে বসে উচ্চারণ করতে চাই না। একটি নির্বাচিত সরকার কোনো কনভিক্টেড ব্যক্তির সঙ্গে ঐক্য করতে পারে না।’

বিএনপির এই এমপি ‘কিছু অসংসদীয় কথা’ তার বক্তব্যে বলেছেন- উল্লেখ করে ডেপুটি স্পিকার তা সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেয়ার ঘোষণা দেন। পরে সংসদ নেতা শেখ হাসিনার পরামর্শে তিনি বাজেটের ওপর আরও এক মিনিট বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেন হারুনকে।

এসময় হারুনুর রশিদ ফ্লোর নিয়ে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং স্পিকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, ‘আপনি সময় বাড়িয়ে দেননি। মাননীয় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলার পর আপনি এক মিনিট সময় বাড়িয়েছেন। আমি আর বক্তব্য দেব না। আপনি আমার বক্তব্যে ইন্টারাপ্ট করেছেন। এর প্রতিবাদে আমি সংসদ থেকে ওয়াক আউট করছি।’ এই বলে অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন হারুনুর রশিদ।

তার ওয়াকআউটের পর কেউ কেউ ফ্লোর চাইলে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘উনার (হারুনের) প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য আমি একাই যথেষ্ট। সংসদে কোনো সদস্য অসংসদীয় বক্তব্য দিলে আমি অবশ্যই ইন্টারাপ্ট করব। এটা সরকারি দলের কেউ দিলেও করব, বিরোধী দলের কেউ দিলেও করব।

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর