ঢাকা ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজও ভাষাসংগ্রামীদের তালিকা হয়নি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২২:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ১৮৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছি। তার স্বীকৃতিও আমরা পেয়েছি।

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে এখন পালিত হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আজও আমাদের ভাষাসৈনিক বা ভাষা সংগ্রামীদের নামের কোনো তালিকা সরকারিভাবে প্রস্তুত হয়নি।

বাংলা ভাষার জন্য বুকের রক্ত দিয়ে শহীদ হয়েছিলেন সালাম, রফিক, জব্বারের মতো অকুতোভয় প্রাণ। ভাষার এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন আরও অনেকে। তাদের কারও কারও নাম আর অবদানের কথা আছে কিছু লেখায়।

ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামীদের তালিকা তৈরির আবেদন জানিয়ে ২০১০ সালে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তালিকা তৈরির নির্দেশ দিলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা পেশ করেছিল, যাতে জিল্লুর রহমান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, আবদুল মতিন, হাবিবুর রহমানসহ ৬৮ জন ভাষা সংগ্রামীর নাম ছিল।

তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ২০১২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেখানে এমন কিছু নামও ছিল যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ নয় এবং বিতর্ক রয়েছে- এমন অভিযোগে তালিকা প্রণয়নের কাজটি স্থগিত করা হয়।

পরে হাইকোর্টের নির্দেশনায় ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় কমিটি গঠন করে তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভাষাসৈনিক আহমদ রফিককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছিল শুধু ঢাকায়। কমিটিতে আরও ছিলেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও মুনতাসীর মামুন। কিন্তু সেই কমিটির মাত্র একটি বৈঠক হয়েছিল, যাতে কাজের পদ্ধতির জটিলতা নিয়েই শুধু আলোচনা হয়।

এরপর থেকে তালিকা প্রণয়নের কাজটি কার্যত বন্ধ রয়েছে এবং বিষয়টি সরকারিভাবে সম্পন্ন করার আদৌ আর কোনো উদ্যোগ নেই বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

তালিকা প্রস্তুত করার বিষয়টি জটিল হিসেবে উল্লেখ করে তখন ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক বলেছিলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে চেষ্টা করা হলেও বিষয়টি নিয়ে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়।

নানান জায়গা থেকে ভাষা সংগ্রামীর দাবি করে নানানজন। এ ব্যাপারে আহমদ রফিক যুগান্তরকে বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণে অবহেলা হয়েছে। সেটা সব আমলেই।

মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র ১৬ খণ্ডে প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগে ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র সংরক্ষণ, সংকলন বা ইতিহাস ধরে রাখার জন্য কিছুই হয়নি।

এমনকি বর্তমানে ইচ্ছা থাকলেও আর সেটা করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের বন্ধু-বান্ধব যারা সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, আন্দোলন সংগঠিত করেছেন বা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের বেশির ভাগই আজ প্রয়াত। আমার মতো দু-চারজন বেঁচে আছেন।’

ভাষাসৈনিক অধ্যাপক ফুলে হুসেন বলেছেন, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে ভিত্তি করেই বাংলাদেশের উৎপত্তি। আমাদের জাতীয়তা বোধের সবকিছুই আমরা শিখেছি ভাষা আন্দোলন থেকে।

আমরা বাঙালি, বাংলা ভাষায় কথা বলি, আমাদের দেশ বাংলাদেশ- এসব বোধ এ আন্দোলন থেকেই পাওয়া। ভাষা আন্দোলন থেকেই উৎসারিত হয়েছে সব মন্ত্র। অথচ এত বড় একটি আন্দোলনের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের নামের কোনো তালিকা নেই- এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই, আর দেরি না করে অচিরেই তালিকাটি করার জন্য। অন্তত যে ক’জন ভাষা সংগ্রামী বেঁচে আছেন তারা দেখে যেতে পারবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আজও ভাষাসংগ্রামীদের তালিকা হয়নি

আপডেট টাইম : ১১:২২:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের রক্ত দিয়েছি। তার স্বীকৃতিও আমরা পেয়েছি।

২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে এখন পালিত হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আজও আমাদের ভাষাসৈনিক বা ভাষা সংগ্রামীদের নামের কোনো তালিকা সরকারিভাবে প্রস্তুত হয়নি।

বাংলা ভাষার জন্য বুকের রক্ত দিয়ে শহীদ হয়েছিলেন সালাম, রফিক, জব্বারের মতো অকুতোভয় প্রাণ। ভাষার এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন আরও অনেকে। তাদের কারও কারও নাম আর অবদানের কথা আছে কিছু লেখায়।

ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামীদের তালিকা তৈরির আবেদন জানিয়ে ২০১০ সালে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তালিকা তৈরির নির্দেশ দিলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে একটি তালিকা পেশ করেছিল, যাতে জিল্লুর রহমান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, আবদুল মতিন, হাবিবুর রহমানসহ ৬৮ জন ভাষা সংগ্রামীর নাম ছিল।

তালিকাটি গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ২০১২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সেখানে এমন কিছু নামও ছিল যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তালিকাটি পূর্ণাঙ্গ নয় এবং বিতর্ক রয়েছে- এমন অভিযোগে তালিকা প্রণয়নের কাজটি স্থগিত করা হয়।

পরে হাইকোর্টের নির্দেশনায় ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় কমিটি গঠন করে তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভাষাসৈনিক আহমদ রফিককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছিল শুধু ঢাকায়। কমিটিতে আরও ছিলেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও মুনতাসীর মামুন। কিন্তু সেই কমিটির মাত্র একটি বৈঠক হয়েছিল, যাতে কাজের পদ্ধতির জটিলতা নিয়েই শুধু আলোচনা হয়।

এরপর থেকে তালিকা প্রণয়নের কাজটি কার্যত বন্ধ রয়েছে এবং বিষয়টি সরকারিভাবে সম্পন্ন করার আদৌ আর কোনো উদ্যোগ নেই বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

তালিকা প্রস্তুত করার বিষয়টি জটিল হিসেবে উল্লেখ করে তখন ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক বলেছিলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে চেষ্টা করা হলেও বিষয়টি নিয়ে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়।

নানান জায়গা থেকে ভাষা সংগ্রামীর দাবি করে নানানজন। এ ব্যাপারে আহমদ রফিক যুগান্তরকে বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সংরক্ষণে অবহেলা হয়েছে। সেটা সব আমলেই।

মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র ১৬ খণ্ডে প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগে ভাষা আন্দোলনের দলিলপত্র সংরক্ষণ, সংকলন বা ইতিহাস ধরে রাখার জন্য কিছুই হয়নি।

এমনকি বর্তমানে ইচ্ছা থাকলেও আর সেটা করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের বন্ধু-বান্ধব যারা সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, আন্দোলন সংগঠিত করেছেন বা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের বেশির ভাগই আজ প্রয়াত। আমার মতো দু-চারজন বেঁচে আছেন।’

ভাষাসৈনিক অধ্যাপক ফুলে হুসেন বলেছেন, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে ভিত্তি করেই বাংলাদেশের উৎপত্তি। আমাদের জাতীয়তা বোধের সবকিছুই আমরা শিখেছি ভাষা আন্দোলন থেকে।

আমরা বাঙালি, বাংলা ভাষায় কথা বলি, আমাদের দেশ বাংলাদেশ- এসব বোধ এ আন্দোলন থেকেই পাওয়া। ভাষা আন্দোলন থেকেই উৎসারিত হয়েছে সব মন্ত্র। অথচ এত বড় একটি আন্দোলনের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের নামের কোনো তালিকা নেই- এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই, আর দেরি না করে অচিরেই তালিকাটি করার জন্য। অন্তত যে ক’জন ভাষা সংগ্রামী বেঁচে আছেন তারা দেখে যেতে পারবেন।