দুই সিটির নতুন ৩৬টি ওয়ার্ড উন্নয়নের রূপরেখা আতিক-তাপসের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকার দুই সিটিতে নতুন অন্তর্ভুক্ত ৩৬টি ওয়ার্ডের (উত্তর-দক্ষিণে ১৮টি করে) উন্নয়ন রূপরেখা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থী- আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপস।

বৃহস্পতিবার ভোটারদের কাছে নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে এসব ওয়ার্ডের উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দেন তারা। এ সময় বিএনপি নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করেন এই দুই মেয়র প্রার্থী।

গণসংযোগকালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নতুন ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে নিজের বৃহৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আমি সরেজমিন দেখেছি- নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা অবহেলিত, অমানুষিকভাবে দিনযাপন করছেন। রাস্তার অবস্থা খারাপ, নেই কোনো বাজার। নেই খেলার মাঠ।

একটু বৃষ্টি হলেই অন্ধকার নেমে আসে। পানি জমে যায়। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ১৮টি ওয়ার্ডের জন্য ৪২০০ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদনের অপেক্ষায়।

এদিন সকালে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গলিতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। আতিকুল আরও বলেন, একনেক সভায় অনুমোদন হলে সেখানে রাস্তা প্রশস্তকরণ, পয়ঃনিষ্কাশন, এলইডি বাতিসহ সব উন্নয়ন কাজ শুরু হবে।

যদি বিজয়ী হই ৬ মাসের মধ্যে সেখানে রাস্তার কাজ শুরু হবে। নতুন ওয়ার্ডের জন্য বিরাট বাজেট- এটি তাদের জন্য স্বপ্নের বাজেট। এ সময় আগামী ২৬ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নিজের ভাবনা সংবলিত ইশতেহার তুলে ধরবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালের অর্ধশতাধিক নার্স ও চিকিৎসককে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আতিকুল বলেন, অবশ্যই আমি এটা সাপোর্ট করি না।

আমি কোনো সময় বলি নাই আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করুক। আমি সময় দিয়েছি ১১ থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে। যারা ১০টার সময় আসছেন তারা হয়তো দেখতে আসছেন। বা শিফটিং ডিউটি করে এখানে আসছেন।

রোগী বাদ দিয়ে আমার ভাষণ শুনবে, আমাদের জনসভায় আসবে- এটি কোনো সময় কাম্য নয়। এটাকে আমি আমলে নিতে পারি না। হাসপাতাল বাদ দিয়ে এখানে থাকবে, আমি এটাও পছন্দ করি না, আমার দলও পছন্দ করে না।

সমাবেশ শেষে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পেছনে গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে আবাসিক হলগুলোর পাশে শেরেবাংলা নগরে গণসংযোগে যান আতিকুল ইসলাম।

১৪তম দিনের প্রচারে এরপর মনিপুরি পাড়া, পশ্চিম রাজাবাজার, পূর্ব রাজাবাজার, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, নয়াতলা ওয়্যারলেস মোড়ে গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী।

নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রচার চালাতে গিয়ে জনদুর্ভোগ যেন না হয়। কোনো রাস্তা বন্ধ করে যেন মিটিং না করি। কোনো গাড়ি আটকে বা রাস্তা ব্লক না করি। আমরা যেন সবাইকে গুরুত্ব দেই এবং গুরুত্ব অনুধাবন করে চলতে পারি। ভুলে গেলে চলবে না হয়তো একটি রাস্তা, আটকে দিলে অ্যাম্বুলেন্স নাও যেতে পারে।

পোস্টারবিহীন প্রচারের পক্ষে মত দিয়ে আতিক নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এমন কোনো ডিজিটাল পদ্ধতি বের করতে পারি কিনা? যে পদ্ধতিতে নগরীতে কোনো পোস্টার লাগানো লাগবে না। ডিজিটাল মাধ্যমে যেন আমরা আমাদের ক্যাম্পেইন করতে পারি। নগরটা যেন সুন্দর করি। এমন কোনো সিস্টেম চালু করি, যেসব রাজনৈতিক দলগুলো পার্টিকুলার ওয়াল যেসব ওয়াল আমরা নির্দিষ্ট করে দেব। সেই ওয়ালে যেন পোস্টার লাগাই। সেই ওয়ালেই যেন বিলবোর্ডের মাধ্যমে প্রচার কার্যক্রম চালাতে পারি।

এদিন বিকালে রাজধানীর আসাদুজ্জামান কমিউনিটি সেন্টার, মধুবাগ, হাতিরঝিল, ঝিলপাড় এলাকায় গণসংযোগ চালান আতিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি সাধারণ মানুষের কাছে লিফলেট তুলে দিয়ে তাদের সঙ্গে হাত মেলান এবং তাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চান।

তাপসের প্রচার : সিটি নির্বাচনে বিএনপির কোনো রূপরেখা নেই মন্তব্য করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমাদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ড রয়েছে। আমরা সেই ওয়ার্ডগুলোয় আধুনিক নগরের সব সেবা ও সুবিধাগুলো প্রদান করতে চাই। আমরা দীর্ঘমেয়াদি ৩০ বছরের নতুন পরিকল্পনা করব। সেখানে এই ১৮টি ওয়ার্ডকে আমরা আধুনিক ওয়ার্ডে পরিণত করার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছি।

তিনি বলেন, নির্বাচনে দলমত নির্বিশেষে ঢাকাবাসী তাদের সেবক নির্বাচিত করবেন। আমরা ঢাকার পরিবর্তনের যে নতুন রূপরেখা দিয়েছি ঢাকাবাসী সেই ঐতিহ্য, সুন্দর ও সুশাসিত ঢাকার পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে রায় প্রদান করবেন।

এদিন সকালে মুগদাপাড়া সিএনজি স্টেশন এলাকায় গণসংযোগের সময় ব্যারিস্টার তাপস আরও বলেন, বিএনপি জাতীয় রাজনীতির একটি কৌশল হিসেবে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এটা তারা নিজেরাই বলেছে। এ জন্য তারা বিভিন্নভাবে এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা গণসংযোগে রয়েছি। আর তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে লিপ্ত রয়েছে। আমরা ঢাকাবাসীর কাছে যাচ্ছি এবং আমাদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। আর ঢাকাবাসী সেটা সাদরে গ্রহণ করছেন। এ সময় তিনি প্রতিটি ওয়ার্ডে আধুনিক সেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে, খুব দ্রুত তা প্রকাশ করা হবে। সেখানে আমরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি তা বাস্তবায়ন করা হবে। মেয়র নির্বাচিত হলে দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করব। সিটি কর্পোরেশনের যে উন্নয়ন করা হবে তার সুবিধা সবাই গ্রহণ করবেন। এখানে কোনো দলমত থাকবে না। এ ছাড়া মহানগরবাসীকে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তাপস।

স্থানীয় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি মুগদার মানুষের ঘরে ঘরে ভোট প্রার্থনা করতে চাই। আপনারা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না। গণমাধ্যমকর্মীরা যাতে সুন্দর পরিবেশে কাজ করতে পারেন তাদের সে সুযোগ তৈরি করে দেবেন। বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হলে সুষ্ঠুভাবে কাজ করা যায় না।’

এ সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোর্শেদ কামাল, যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন মহি, মুগদা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন কামালসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে ভোট চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের কয়েকশ’ আইনজীবী পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছেন। দুপুরে সেগুনবাগিচা থেকে শুরু করে কাকরাইল মোড়, সেগুনবাগিচা ও পল্টন এলাকায় আইনজীবীরা নৌকার পক্ষে ভোট চান।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য শাহ মঞ্জুরুল হক এ পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করেন। এতে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুছ, ব্যারিস্টার মেহেদী চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক আইন সম্পাদক আবু সাঈদ সাগর, বাংলাদেশ আইন সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সাজ্জাদ হোসেন, ব্যারিস্টার তানজিবুল আলম, অ্যাডভোকেট অমিতদাশ গুপ্ত।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর