হাসিনাকে ছোড়া গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট করে দেন ওসি সাহাবউদ্দিন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১৯৮৮ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমলে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে ১৫ দলীয় জোটের জনসভার আগে চালানো গুলির প্রধান লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তবে তৎকালীন কোতোয়ালি থানার ওসি সাহাবউদ্দিন ঘাতক গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডলকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়ায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যান আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রামে গণহত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় এ তথ্য জানান রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি শবু প্রকাশ বিশ্বাস।

 ৯৮৮ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমলে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভার আগে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা মামলার রায়ে পাঁচজনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। ঘটনার ৩২ বছর পূর্ণ হওয়ার চারদিন আগে এ রায় এলো। সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকেল ৩টার কিছু পরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ (ভারপ্রাপ্ত) ইসমাইল হোসেনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।

যাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে তারা হলেন-মমতাজ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, গোপাল চন্দ্র (জেসি) মণ্ডল ও আব্দুল্লাহ। এরা প্রত্যেকেই পুলিশের সাবেক সদস্য এবং একমাত্র গোপাল চন্দ্র পলাতক, বাকিরা কারাগারে আছেন।

 

একই রায়ে আদালত ৩২৬ ধারায় পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন দফতর সম্পাদক ফরিদুল আলম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সেদিন হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ছাত্রজনতা নিজেদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেছিলেন। তার দিকে উঠানো পিস্তল কেউ একজন হাত দিয়ে সরিয়ে দিলে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।’

 

এর আগে ২০১৬ সালের ২৬ জুন আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, ‘কোতোয়ালি থানার সামনে যখন মোটরসাইকেল থেকে নামি তখনই পুলিশ আমাকে লাঠিপেটা শুরু করে। ট্রাকটি তখন পুরাতন বাংলাদেশ ভবনের সামনে দাঁড়ানো। সেদিন দেখেছি নেত্রীর সাহস। বিশৃঙ্খলভাবে গুলি করা হয়…মারতে মারতে আমাকে নালায় ফেলে দেয়। গুলির শব্দ শুনেছি। পরে আইনজীবীরা গিয়ে মানবঢাল তৈরি করে নেত্রীকে চট্টগ্রাম বারের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে সেদিন গুলি চালানো হয়েছিল। উনাকে লক্ষ্য করে চালানো গুলি ভাগ্যক্রমে গায়ে লাগেনি।’

আদালত তার রায়ের সারসংক্ষেপে বলেছেন, ‘চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে এবং কোতোয়ালি থানার পেট্রল ইন্সপেক্টর গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডলের হুকুমে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে।’

আদালত বলেন, ‘চট্টগ্রামের তদানীন্তন মেট্রোপলিটন কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা কর্তৃক ওয়াকিটকির মাধ্যমে প্রদত্ত অবৈধ নির্দেশে কোতোয়ালি থানার পলাতক আসামি গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল ওরফে জে সি মণ্ডলের অবৈধ হুকুমে আসামিরা এলোপাতাড়ি রাইফেলের গুলি ছুড়তে আরম্ভ করে। ওই আসামির নির্দেশে নির্বিচারে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে মিছিলকারীদের মধ্যে ২৪ জন মৃত্যুবরণ করেন।’

‘পরবর্তীতে পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত সাক্ষ্যপ্রমাণাদি গোপন ও বিনষ্ট করার জন্য নিহতদের মৃতদেহ ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে অনেক মুসলিম ও হিন্দুদের তাদের আত্মীয়-স্বজনের অগোচরে কোতোয়ালি থানার অন্তর্গত অভয়মিত্র শ্মশান ঘাটে পুড়িয়ে ফেলা হয়।’

 

আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলেছেন, ‘ঘটনার তারিখ ও সময়ে ঘটনাস্থলে আসামি গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডল, প্রদীপ বড়ুয়া, শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, মমতাজ উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান শান্তিপ্রিয় জনগণের ওপর বিনা উসকানিতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শতশত নিরীহ লোককে আহত ও পঙ্গু করেন।’

রায় ঘোষণার সময় এটাকে ‘গণহত্যা’ বলেছেন আদালত। আদালত বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে এই মামলা বিঘ্নিত হয়েছে। ৫৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। সাক্ষ্য-প্রমাণে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দর থেকে ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গায় পথসভা করতে করতে লালদীঘির দিকে আসছিলেন। লালদীঘির মাঠে ছিল তৃতীয় কর্মসূচি এবং চতুর্থ কর্মসূচি ছিল পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়। ওইসময় পুলিশ তিনটি ব্যারিকেড দেয়। একটি ছিল লালদীঘিতে, একটি কোতোয়ালি মোড়ে এবং আরেকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে।’

‘কোতোয়ালিতে প্রথম ব্যারিকেড সরিয়ে গাড়িবহর এগিয়ে যাবার পর জে সি মণ্ডল ওয়াকিটকিতে বলেন, চলে আসছে। তখন পুলিশ কমিশনার ওয়াকিটকিতে নির্দেশ দেন, হামাইয়া দাও, গুলি করে শোয়াইয়া দাও। কমিশনারের নির্দেশে গুলিতে ২৪ জন নিরীহ ছাত্রজনতা মারা যান। শেখ হাসিনাকে আইনজীবীরা উদ্ধার করে আদালত ভবনে নিয়ে যান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর