থ্যালাসের তৈরি রাডার বসছে শাহজালালে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অবশেষে ফ্রান্সের থ্যালাসের তৈরি রাডার বসছে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। রাডার কেনা নিয়ে বারবার বিতর্ক তৈরি হওয়ায় এবার সরাসরি জিটুজি পদ্ধতিতে কেনা হচ্ছে। এতে সরকারের খরচ হতে পারে সর্বোচ্চ ৬৫০ কোটি টাকা। ৬ মাসের মধ্যে এই ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে।

নিরাপদ বিমান চলাচল নিশ্চিত করতে বিশ্বব্যাপী রাডারের বিকল্প নেই। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সংস্থার আইকাও’র বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে প্রস্তুত করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য রাডার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত থ্যালাসের মাধ্যমে।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বলেন, আগের চেয়ে বর্তমান প্রকল্পের মাধ্যমে রাডার সংগ্রহ করা হলে কমপক্ষে দেড় হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানিয়েছেন, যে প্রক্রিয়ায় সরকার এগোচ্ছে তাতে আগামী ছয় মাসের মধ্যে কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব হবে। তারপরই রাডার স্থাপন শুরু হবে। কাজ শেষ করতে লাগবে কমপক্ষে দুই বছর।

সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে ফ্রান্স সরকার কারিগরি ও আর্থিক দুটো প্রস্তাবই জমা দিয়েছে সিভিল এভিয়েশনে। এগুলো যাচাই-বাছাই পর্যায়ে আছে। যাচাই-বাছাই শেষে সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হবে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কমিউনিকেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আধুনিক বিশ্বের নিরাপদ বিমান চলাচলের জন্য রাডার ও এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম। এভিয়েশন জগৎ যতটা এগিয়ে যাচ্ছে, রাডার ও ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমও ততই আধুনিক হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সমুদ্রসীমার ওপর দিয়ে চলাচলকারী অনেক বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ এর আওতায় আসবে। এতে শুধু রাডার ব্যবস্থাপনার কারণেই বেড়ে যাবে সিভিল এভিয়েশনের রাজস্ব। উল্লেখ্য, ফ্রান্সের ‘থ্যালেস’ বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ সফলভাবে তৈরি করেছিল। তাছাড়া ‘থ্যালেস’ ১৯৮০ সালেও জিটুজির ভিত্তিতে বাংলাদেশে রাডার ও নেভিগেশন সিস্টেম চালু করে, যা এখন পর্যন্ত চালু রয়েছে।

এর আগে ২০০৫ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন রাডার প্রতিস্থাপনে উদ্যোগ নেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালে পিপিপির আওতায় রাডার স্থাপনের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়। ২০১৫ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে অস্বাভাবিক দর দেখানোর কারণে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় তা বাতিল করে দেয়। এরপর ২০১৭ সালের ১ মার্চ পিপিপির পরিবর্তে সরকারি অর্থায়নে সাপ্লাই ইন্সটলেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন অব মাল্টি-মোড সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম (রাডার, এডিএস-বি) এটিএস অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেম শীর্ষক প্রকল্পগু বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রকল্পেরই নতুন নামকরণ করা হয়েছে সিএনএস-এটিএম প্রকল্প। এর আগে মন্ত্রিসভা কমিটিতে পিপিপির প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দর প্রস্তাব করা হয়েছিল ২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা।

নতুন দরে পিপিপিতে উল্লিখিত যন্ত্রপাতি ছাড়াও অতিরিক্ত আরও ৮০ কোটি টাকার নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়। এরপরও থ্যালাসের প্রস্তাবিত নতুন দর দাঁড়ায় আনুমানিক ৬৫০ কোটি টাকা, যা আগের প্রস্তাবিত দরের তুলনায় প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা কম।

রাডার প্রযুক্তি সম্পর্কে থ্যালাসের প্রস্তাবে দেখা যায়, আগের প্রস্তাবিত যন্ত্রপাতির সঙ্গে অতিরিক্ত আরও যোগ হয়েছে ওয়াম সার্ভেইল্যান্স অব ইইজেড, এইচএফ ট্রান্সমিটার, থ্রিডি টাওয়ার সিমুলেটর, নাভায়েডস, কন্ট্রোলার্স রোস্টার ম্যানেজমেন্ট টুল বিজেড টুলস। যা প্রস্তাবিত এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে অত্যধিক নিরাপদ ও কার্যকর করতে সহযোগিতা করবে। এসব কম্পোনেন্টের সমন্বয়ে গড়া এই সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হলে বাংলাদেশের আকাশপথ হবে বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ বিমান চলাচলের রুট।

জানতে চাইলে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, প্রকল্পটি শেষ হলে বাংলাদেশ সরকার ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। নিরাপদ হবে দেশের আকাশসীমা এবং বিমান চলাচল ব্যবস্থা। এদিকে রাডারের পাশাপাশি শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজও শিগগির শুরু হবে। ২৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান যুগান্তরকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৩ সালের মধ্যে এ টার্মিনাল নির্মাণকাজ শেষ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বছরে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীর সেবা প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রায় ৩০ লাখ বর্গফুট জায়গায় তৃতীয় টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী তৃতীয় টার্মিনালে বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে ১২টি। প্রতি চারটি ব্রিজের জন্য একটি লিফট থাকবে। কনভয় বেল্ট থাকবে ১২টি। চেক-ইন কাউন্টার হবে ২০টি। প্রতিটি কাউন্টারে সিকিউরিটি স্ক্যানার থাকবে। প্রতি ঘণ্টায় দুই হাজার যাত্রীর লাগেজ স্ক্যান করার সক্ষমতা থাকবে প্রত্যেক কাউন্টারে। এছাড়া ১২০০ গাড়ির পার্কিং সুবিধা থাকবে। বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘থার্ড টার্মিনালে দুবাইসহ বিশ্বের উন্নত বিমানবন্দরে যে মানের যন্ত্রপাতি আছে, এখানে তা ব্যবহার করা হবে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর