ছ’বছরে বাস্তুহারা ৫৭ লাখ মানুষ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা অক্সফাম জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং দাবানলের কারণে গত এক দশকে প্রতিবছর দুই কোটির বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে। জলবায়ু হুমকি মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের বিশ্বনেতারা দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে জনিয়েছে সংস্থাটি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সরকার এখনই ব্যবস্থা না নিলে শুধু বন্যার কারণে গৃহহীন হওয়া র ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত ছ’বছরে বাংলাদেশের ৫৭ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন। ঢাকার বস্তি এলাকায় বসবাসকারীদের প্রায় ৭০ শতাংশই পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে স্থানান্তরিত বলে জানিয়েছে অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমও।

জানা যায়, গত শতকের ১৯৭০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বন্যার কারণে বিশ্বে যে পরিমাণ মানুষ ঘরহারা হয়েছে, সেটি পাঁচগুণ বেড়ে যেতে পারে। ওই সময়ে বছরে এক কোটি মানুষ গৃহহীন হয়েছে বন্যার কারণে। এ শতকের শেষ নাগাদ বছরে পাঁচ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে সতর্ক করেছেন গবেষকরা। আর এর এক মাত্র কারণ হচ্ছে জলবায়ুর প্রভাব।

গত মঙ্গলবার মাদ্রিদে জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু বিষয়ক এক আলোচনায় জেনেভাভিত্তিক ‘ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার’- আইডিএমসির গবেষক জাস্টিন জিনেত্তি বলেন, জনসংখ্যা সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়া এবং দ্রুত বরফ গলতে থাকায় ঘন ঘন বড় ধরনের বন্যার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

আইডিএমসির হেড অব ডেটা অ্যান্ড অ্যানালাইসিস জিনেত্তি বলেছেন, পূর্বাভাসে ঝুঁকির যে চিত্রটি এসেছে, সেটিকে আংশিক বলা যেতে পারে। কিন্তু বন্যার কারণে স্থানচ্যুত অর্ধেকের বেশি মানুষই আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হবে, যে পরিস্থিতিকে তিনি বর্ণনা করেছেন ‘ভয়াবহ’ হিসেবে। বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধির হার এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার যে পরিকল্পনা, বিভিন্ন দেশের সরকার যদি তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়, তাহলে বন্যার কারণে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা বছরে দুই কোটিতে আটকে রাখা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, জলবায়ুর কারণে স্থানচ্যুতি বিশ্বের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। আমাদের জন্য ভবিষ্যতে আবহাওয়ার আরো চরম অবস্থা বিরাজ করছে। সুতরাং ভবিষ্যৎ ঝুঁকির গুরুত্ব বোঝাটা আমাদের জন্য জরুরি- কেন এটা হচ্ছে, আমাদের কি করা উচিত।

এদিকে ঝড় ও বন্যার কারণে কত মানুষ ঘরহারা হতে পারে, সে ব্যাপারেও একটি আভাস দেয়ার জন্য আইডিএমসির গবেষণার ক্ষেত্র আরো বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রতিবছর বন্যার কারণে মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়া ঠেকাতে ভালো কিছু উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছেন আইডিএমসির গবেষক জিনেত্তি।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং নদী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে উদ্বাস্তুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এঁদের মধ্যে কিছু মানুষ দেশের বাইরেও যাচ্ছেন। মোহাম্মদপুরের ভোলাপাড়া বস্তি তার প্রমাণ এর পিছনে কাজ করছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, লবণাক্ততা ও নদী ভাঙন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের পনির উচ্চতা বাড়ায় সাগরের লবণাক্ত পানি ক্রমেই দেশের মধ্যভাগের দিকে ঢুকে পড়ছে বলে জানান ড. আইনুন নিশাত। এরইমধ্যে দেখা গেছে, জলবায়ু পবির্তনের শিকার হয়ে যারা ঢাকায় এসেছেন তারা নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন না। তারা আগে প্রধানত কৃষক ছিলেন। কিন্তু এখন তারা বলতে গেলে পেশা উদ্বাস্তু। নির্দিষ্ট কোনো কাজ নেই। ২০১২ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ পরিচালিত গবেষণায় পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে অভিবাসী হওয়া প্রায় দেড় হাজার পরিবারকে শনাক্ত করা হয়। পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে তারা স্থানান্তরিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর