আ’লীগের সহযোগী সংগঠন: প্রকাশ্যে তৎপরতা নেই পদপ্রত্যাশীদের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ক্যাসিনোসহ দলের শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে আওয়ামী লীগের চার সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। আসন্ন সম্মেলনে শীর্ষ নেতাদের অনেকের বিদায় নিশ্চিত হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ নেই।

কিছুদিন আগেও যে নেতা সংগঠনের নেতৃত্ব পেতে মুখিয়ে ছিলেন তিনিও আজ নীরব। প্রার্থিতা বিষয়ে প্রশ্ন করলে সোজাসাপ্টা উত্তর- ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) দিলে আছি, না দিলে নাই।’ তবে প্রকাশ্যে তৎপরতা না থাকলেও সবাই তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে।
জানা গেছে, নভেম্বরের মধ্যেই চার সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন করবে আওয়ামী লীগ। ২ নভেম্বর কৃষক লীগ, ৯ নভেম্বর শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০১২ সালের ১১ জুলাই, যুবলীগের ১৪ জুলাই, শ্রমিক লীগের ১৭ জুলাই এবং কৃষক লীগের ১৯ জুলাই সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। ৩ বছর মেয়াদি কমিটিগুলোর সময় ২০১৫ সালেই শেষ হয়ে গেছে।

বর্তমানে সংগঠনগুলোর টালমাটাল অবস্থা। ক্যাসিনোকাণ্ডে যুবলীগের অনেক নেতা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে। দেশের ভেতরে ও বাইরে পলাতকের সংখ্যাও কম নয়। শীর্ষ কয়েক নেতাও আছেন আতঙ্কে। একই অবস্থা স্বেচ্ছাসেবক লীগেও। এ অবস্থায় চার সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে কমিটিতে। ক্যাসিনো ব্যবসায়ী, দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ নেতারা বাদ পড়বেন। নেতৃত্বে আনা হতে পারে ক্লিন ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের। আসতে পারে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ। ইতিমধ্যে নতুন নেতৃত্বের সন্ধান শুরু করেছেন খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সার্বিক সহযোগিতা করছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।

যুবলীগের কংগ্রেস ও নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে যুবলীগে কখনও ভোট হয়নি। প্রার্থীও হন না কেউ। তবে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করেন অনেকে। কংগ্রেসের ২য় অধিবেশনে আওয়ামী লীগ সভাপতি যুবলীগের নেতৃত্ব ঘোষণা করেন।

আবারও সাধারণ সম্পাদক কিংবা চেয়ারম্যান পদে থাকতে চান কিনা জানতে চাইলে ৬৫ বছর বয়সী হারুনুর রশিদ বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) যাকে চাইবেন তার নেতৃত্বেই যুবলীগ চলবে। তবে নেতৃত্বের বিষয়ে বয়সের সঙ্গে অভিজ্ঞতাও দেখা উচিত।

ইতিমধ্যে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষু্ণ্ণকারী নেতাদের বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছেন। অপরাধী যেই হোক কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার পর চলমান অভিযানে অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার ও রিমান্ড আতঙ্গে আছেন। ফলে আসন্ন সম্মেলনে প্রার্থিতা হওয়া-না হওয়া নিয়েও দোলাচলে আছেন অনেকে।

বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, যুবলীগের আসন্ন সম্মেলনে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ বাদ পড়ার ঝুঁকিতে আছেন। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বেও আসছে বড় পরিবর্তন।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওছার নতুন কমিটিতে স্থান না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে তার নাম ওঠে এসেছে।

নেতৃত্বের পরিবর্তন আসতে পারে কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগেও। দীর্ঘদিন কমিটিতে থেকেও সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা না থাকায় পদ হারানোর বড় শঙ্কায় আছেন কৃষক লীগের বর্তমান সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল হক রেজা এবং শ্রমিক লীগের সভাপতি পদে শুক্কুর মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে মো. সিরাজুল ইসলাম। চলমান শুদ্ধি অভিযানে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতৃত্ব বের করে আনতেই ব্যর্থদের বাদ দেয়া হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে।

যুবলীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কিছু দিন আগেও সংগঠনের প্রভাবশালী একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য শীর্ষ পদের জন্য মুখিয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বাসায়-কার্যালয়ে দৌড়াঝাঁপ করেছেন। তাদের অনেকেই ক্যাসিনো ব্যবসায় যুক্ত বলে নাম এসেছে। অনেকের নাম সরাসরি গণমাধ্যমে না এলেও গোপনীয়তা রক্ষা করে চলছেন।

প্রার্থিতা প্রকাশ করলে শুদ্ধি অভিযানে নাম চলে আসার ভয় তাড়া করছে অনেককে। এছাড়া চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি ও কমিটি বাণিজ্য করে টাকা কামানো নেতাদের আছে গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার ভয়। সম্মেলন ঘনিয়ে এলেও এদের অনেকেই সেলফোন, ফেসবুক আইডি বন্ধ রেখেছেন। নেতৃত্বের চেয়ে মানসম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রভাবশালী কয়েক নেতার নাম ওঠে এসেছে চলমান ক্যাসিনো অভিযানে। সংগঠনটির আসন্ন সম্মেলনে দৌড়ঝাঁপ নেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের। শীর্ষ নেতাদের আস্থাভাজন অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। ফোন দিলে কথা বলতে চাচ্ছেন না। সম্প্রতি নিজেকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেয়া বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আজ বলছেন ‘আমি কিন্তু প্রার্থী না’। কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘ঝামেলায় আছি, কার রোষানলে পড়ি ঠিক নাই’।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর