‘সালাম’ নামের তাৎপর্য আল্লাহর

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহর নামগুলো সুন্দরতম। তাঁর গুণাবলি মহীয়ান। তাঁর মহাবৈশ্বিক ও বিধানগত নিদর্শনগুলো এর প্রমাণবাহী ও সাক্ষী। আল্লাহর সব নাম ও গুণের চাহিদা এবং দাবি হলো ইবাদত ও নির্দেশনার মাধ্যমে সৃষ্টিজগতের মাঝে সেগুলোর সরাসরি প্রভাব থাকবে। প্রতিটি নাম ও গুণের জ্ঞান অর্জন করে তা বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম আছে, তোমরা সেসব নামে তাঁকে ডাক।’ (সূরা আরাফ : ১৮০)।
আল্লাহর একটি নাম ‘সালাম’। নিরাপত্তা, শান্তি ও পবিত্রতার আধার, যা তাঁর যাবতীয় গুণের তাৎপর্য ধারণকারী। এ নাম প্রমাণ করে আল্লাহ সব ধরনের দোষ-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র, মুক্ত ও নিরাপদ। তাঁর পূর্ণতা, বড়ত্ব ও মহিমার অনুপযুক্ত সব কিছু থেকে তিনি ঊর্ধ্বে। আল্লাহ তাঁর সত্তা, নাম, গুণ ও কাজে পূর্ণাঙ্গ হওয়ার কারণে তিনি সব ধরনের দোষ ও ত্রুটি থেকে নিরাপদ। তিনি বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, নিরাপত্তা বিধায়ক, রক্ষক, পরাক্রমশালী, প্রবল। তিনি অতি মহিমান্বিত। তারা যা কিছু শরিক করে তিনি তা থেকে পবিত্র।’ (সূরা হাশর : ২৩)।
তিনি সঙ্গিনী ও সন্তান থেকে মুক্ত। সমকক্ষ, সমতুল্য, সাদৃশ্য ও সাজুয্য থেকে মুক্ত। অংশীদার ও প্রতিপক্ষ থেকে মুক্ত। মৃত্যু, তন্দ্রা ও ঘুম থেকে মুক্ত। গোটা সৃষ্টিজগতের পরিচালক। ক্লান্তি, দুর্বলতা ও অক্ষমতা থেকে পবিত্র। তাঁর জ্ঞান অজ্ঞতা, বিস্মৃতি ও উদাসীনতা থেকে মুক্ত। তাঁর বাণী সত্য ও ন্যায্য। তা মিথ্যা ও অন্যায়মুক্ত। আল্লাহর পক্ষ থেকেই শান্তি, মুক্তি ও নিরাপত্তা আসে। তাঁর কাছেই শান্তি প্রার্থনা করা হয়। অন্য কারও কাছে কেউ শান্তি তালাশ করলে তা পাবে না।
নবী করিম (সা.) আল্লাহর এ মহান নামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ নামের সব হক আদায় করেছেন। তিনি যখন ফরজ নামাজ শেষ করতেন তখন তিনবার ইস্তেগফার পাঠ করে বলতেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি শান্তিদাতা, তোমার পক্ষ থেকেই শান্তি আসে, হে মহামহিম বড়ত্বের মালিক তুমি অতি মহান।’ (মুসলিম)।
আল্লাহ নবী-রাসুল, তাঁর সৎকর্মশীল বান্দা ও নৈকট্যপ্রাপ্ত লোকদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর শান্তি তাঁর সেসব বান্দার প্রতি যাদের তিনি নির্বাচিত করেছেন।’ (সূরা নামল : ৫৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি শান্তির প্রার্থনা করতে আল্লাহ মোমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন। ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা তাঁর জন্য দরুদ পাঠ করো ও তাঁর প্রতি শান্তি কামনা করো।’ (সূরা আহজাব : ৫৬)। তিনি তাঁর বান্দার জন্য এমন ধর্ম প্রবর্তন করেছেন, যাতে আছে দিশা, শান্তি ও মুক্তি। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহর কাছে একমাত্র দ্বীন।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৯)।
ইসলামের বিধান অতিরঞ্জন ও ত্রুটিমুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম। তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম।’ (সূরা মায়েদা : ৩)। এ দ্বীনের অনুসরণেই রয়েছে ইহকাল ও পরকালের শান্তি ও মুক্তি। আল্লাহ বলেন, ‘শান্তি তাদের প্রতি, যারা সৎপথ অনুসরণ করে।’ (সূরা তহা : ৪৭)। ইসলামের অনুসারীদের শেষ গন্তব্য হলো শান্তির নিবাস জান্নাত। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ শান্তির নিবাসের দিকে ডাকেন এবং যাকে ইচ্ছা করেন তাকে সঠিক পথ দেখান।’ (সূরা ইউনুস : ২৫)।
যে নিজের, পরিবারের ও তার সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তা চায় তার উচিত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা। কেননা ইসলামের আকিদা ও বিধি-বিধান নিরাপত্তা, সুখ, স্থিতি ও প্রশান্তি বয়ে আনে। সমাজে যত বেশি ইসলামের বাস্তবায়ন হবে ততই সেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করবে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে অন্যায় দ্বারা কলুষিত করেনি তাদের জন্যই রয়েছে নিরাপত্তা। তারাই সৎপথপ্রাপ্ত।’ (সূরা আনআম : ৮২)।
সম্মান ও মর্যাদা বজায় রেখে ইসলাম ধর্মের শান্তি ও নিরাপত্তা সব মানুষের জন্যই বিরাজমান। তাদের প্রাণ, সম্পদ ও মর্যাদা সুরক্ষিত থাকবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমাকে মানুষের সঙ্গে সংগ্রাম করতে আদেশ করা হয়েছে, যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল এবং নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে। এটি করলে আমার পক্ষ থেকে তারা তাদের জান ও মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নিল ইসলামের স্বার্থ রক্ষা করা সাপেক্ষে। আর তাদের হিসাব আল্লাহর কাছে।’ (বোখারি)। ইসলাম নিরাপত্তা ও শান্তির ধর্ম। তাই অমুসলিম অধিবাসী, চুক্তিবদ্ধ ও আশ্রিত লোকদের প্রাণ সুরক্ষিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে চুক্তিবদ্ধ কোনো লোককে হত্যা করবে সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না।’ (বোখারি)। সংরক্ষণ-অধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কেউ আকারে-ইঙ্গিতেও ভয় প্রদর্শন করলে আল্লাহ তাকে হুমকি দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেউ তার ভাইকে কোনো অস্ত্রের ইঙ্গিতে ভয় দেখালে ফেরেশতারা তাকে ছেড়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত তার প্রতি অভিসম্পাত করতে থাকে, যদিও সে তার আপন সহোদর ভাই হোক।’ (মুসলিম)। এমনকি ইসলাম জীবজন্তুর জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তার দায়িত্বও নিশ্চিত করেছে। রাসুলুল্লাহ বলেন, ‘এক মহিলা এক বিড়ালের প্রতি অন্যায়ের কারণে জাহান্নামে গেছে।’ (বোখারি ও মুসলিম)। ‘এক ব্যভিচারী একটি কুকুরকে পানি খাওয়ানোর কারণে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
মুসলিম ব্যক্তিকে কথা ও কাজের দ্বারা মানুষের মাঝে শান্তি বিস্তারের আদেশ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত মুসলিম সে, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে।’ (বোখারি ও মুসলিম)। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে বড় কাজ হলো আল্লাহর দিকে আহ্বান করা। মানুষের কাছে তাদের রব, নবী ও দ্বীনের পরিচয় তুলে ধরা। আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহর দিকে ডাকে ও সৎকর্ম করে এবং বলে নিশ্চয় আমি মুসলিম, তার চেয়ে সুন্দর কথা আর কার হতে পারে?’ (সূরা ফুসসিলাত : ৩৩)। মূর্খ ও অসৎ ব্যক্তির সঙ্গে যে শান্তিপূর্ণ সুন্দর আচরণ করে, আল্লাহ তার প্রশংসা করে বলেছেন, ‘মূর্খরা তাদের সম্বোধন করে কিছু বললে তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে।’ (সূরা ফুরকান : ৬৩)। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা গৃহে প্রবেশ করলে পরস্পর সালাম দেবে।’ (সূরা নূর : ৬১)। জান্নাতবাসীদের বলা হবে, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি।’ (সূরা জুমার : ৭৩)।

২৩ মহররম ১৪৩৯ হিজরি মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর