ফিদেল কাস্ত্রোর প্রয়াণ সাম্যের মহানায়ককে মনে রাখবে বিশ্ব : মোঃ জাকির হোসাইন

চলে গেলেন সাম্যবাদের স্বপ্নদ্রষ্টা ফিদেল কাস্ত্রো। বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের চোখে তিনি এক মহানায়ক। মানুষের কাছে দেশের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে দিয়ে কিউবায় বীরের আসনে অধিষ্ঠিত হওয়া এই মানুষটি ছিলেন বাংলাদেশেরও অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে তাঁকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’য় ভূষিত করা হয়। বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ১৯৭৪ সালে আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বৈঠক হয়েছিল তাঁদের। ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যু বিশ্বরাজনীতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তাঁর সংগ্রামের কথা মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। স্বপ্নচারী মানুষটি কয়েক মাস আগেও এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ‘কিউবার সাম্যবাদী আদর্শ এখনো কার্যকরী এবং কিউবার জনগণ বিজয়ী হবে।’

বিত্তবান আখ চাষির সন্তান ফিদেল কাস্ত্রোর শৈশব কেটেছে পারিবারিক খামারে ও ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি জড়িয়ে পড়েন ছাত্র আন্দোলনে। বিরোধী মতের ছাত্রসংগঠনের ওপর সরকারের দমন-নিপীড়ন তাঁকে বিপ্লবীতে রূপান্তরিত করে। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে স্বৈরশাসকদের হটানোর লক্ষ্যে গঠিত ক্যারিবিয়ান লিজিয়ান নামের একটি গ্রুপে তিনি যোগ দেন ১৯৪৭ সালে। লেখাপড়া শেষ করে আইন পেশায় যোগ দেন ১৯৫০ সালে। ১৯৫২ সালে কিউবার পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই নির্বাচন আর হয়নি। সামরিক অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল বাতিস্তা। শুরু হয় ফিদেল কাস্ত্রোর লড়াই। প্রথমে আইনগতভাবে আদালতের মাধ্যমে বাতিস্তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়ে সংগঠিত করেন একটি আন্ডারগ্রাউন্ড গ্রুপ। সামরিক ব্যারাকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। মুক্তি পেয়ে আবার সংগঠিত করেন গেরিলাদের। কিউবার মুক্তিকামী মানুষের সহায়তায় গড়ে তোলেন স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। জনসমর্থন হারিয়ে কিউবা থেকে পালিয়ে যান বাতিস্তা। ১৯৫৯ সালে কিউবার নেতা হিসেবে ক্ষমতা নিজের হাতে নেন ফিদেল কাস্ত্রো। ২০০৮ সাল পর্যন্ত থাকেন ক্ষমতায়।

সময় তাঁকে তৈরি করেছে নাকি তিনিই সময়কে নিজের মতো করে গড়ে নিতে পেরেছিলেন, এ নিয়ে অনেক বিতর্ক হতে পারে। শাসকের ওপর শোষিতের কর্তৃত্ব স্থাপনই যে বিপ্লব, ফিদেল কাস্ত্রো তা প্রমাণ করেছিলেন। বিপ্লবের স্বপ্ন জাগিয়ে রাখা এই মানুষটি বিশ্বকে জানিয়ে দিতে পেরেছিলেন, বিপ্লব হলো আমৃত্যু সংগ্রাম। অতীত থেকে ভবিষ্যতের পথে এ নিরন্তর যাত্রাপথ গোলাপের শয্যা নয়। নিজে বিশ্বাস করতেন, নিয়তি একেকটি সময়ের জন্য একেকজন মানুষ তৈরি করে দেয়। ধনতন্ত্র ও স্বৈরশাসনের শৃঙ্খল ছিঁড়ে সাম্যবাদের স্বপ্ন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তিনি।

বিপ্লবের অন্যতম পথিকৃৎ ফিদেল কাস্ত্রো। বিপ্লবের মৃত্যু নেই। বিপ্লবের আগুন কখনো নেভে না। তাই ফিদেল কাস্ত্রোও অমর হয়ে থাকবেন। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের মনে বিপ্লবের অগ্নিশিখা হয়ে বেঁচে থাকবেন তিনি।

বাংলাদেশের অভিন্নহৃদয় বন্ধুকে আমাদের শ্রদ্ধা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর