ঢাকা ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরকীয়ার জেরে সন্তানকে হত্যা, প্রেমিকসহ মায়ের মৃত্যুদণ্ড

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০১৯
  • ২০৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে নিজের ১১ বছরের সন্তানকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যার অভিযোগে প্রেমিকসহ মায়ের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন দু’জনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন-জগন্নাথপুর উপজেলার চিতুলিয়া গ্রামের আলকাছ আলীর ছেলে প্রেমিক বারিক মিয়া (৩৭) ও তার পরকীয়া প্রেমিকা সিতারা বেগম (৩৯)। প্রেমিক মোঃ বারিক মিয়া সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে অন্তরীন থাকলেও হত্যাকান্ডের পর থেকে প্রেমিকা সিতারা বেগম পলাতক রয়েছেন।

আদালত সুত্রে জানা যায়, নিহত শিশু সোয়াইবুর রহমানের প্রবাসী পিতা রফিকুল ইসলাম প্রবাসে থাকার সুবাদে তার মা সিতারা বেগম তাদের বাড়ির কেয়ারটেকার মোঃ বারিক মিয়ার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। স্বামী বিদেশ যাওয়ার আগে মোঃ বারিক মিয়াকে তাদের পরিবার দেখাশোনা ও হাটবাজারের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন মোঃ রফিকুল ইসলাম।

তিনি বিদেশে যাওয়ার পর কেয়ারটেকার মোঃ বারিক মিয়ার সঙ্গে সিতারা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রায় সময়ই বারিক মিয়া সিতারা বেগমের ঘরে রাত্রিযাপন করতেন বলে বিষয়টি এলাকার লোকজনের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়।

দীর্ঘদিন ধরে কেয়ারটেকার বারিক মিয়ার সঙ্গে তার মা সিতারা বেগমের অবৈধ সম্পর্ক ও প্রণয়ের বিষয়টি নিজ শিশু সন্তান সুয়াইবুর রহমান নিজ চোখে দেখে ঘটনাটি তার প্রবাসী পিতা রফিকুল ইসলামকে জানানোর চেষ্টা করছিল।

এমন খবরে তার মা সিতারা বেগম তার প্রেমিক মোঃ বারিক মিয়াকে সন্তানের পরকীয়ার বিষয়টি অবহিত করলে প্রেমিক যুগল মিলে শিশুটিকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তারই অংশ হিসেবে ২০১২ সালের ১৪ই অক্টোবর বিকেলে একই গ্রামের আরেক শিশু আসামী সাবুল মিয়াকে দিয়ে সিতারার সন্তান শিশু সোয়াইবুর রহমানকে ফুসলিয়ে স্থানীয় চিতুলিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় নিয়ে যায়।

সন্ধ্যার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রেমিক যুগল মিলে ওই মাদ্রাসার টয়লেটের কাছে গিয়ে শিশু সোয়াইবুর রহমানের মুখে ও গলায় চেপে ধরে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করে। পরে শিশু সোয়াইবুর রহমানের লাশ গুম করতে ওই টয়লেটের ট্যাংকিতে ফেলে দেয়।

এ ঘটনায় নিহতের চাচাতো ভাই মোঃ হান্নান মিয়া বাদি হয়ে গত ২০১২ সালের ১৫ই অক্টোবর প্রেমিক যুগল মোঃ বারিক মিয়া , মা সিতারা বেগম ও সেবুল মিয়াসহ তিনজনকে আসামী করে জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর পুলিশ প্রেমিক বারিক মিয়াকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলেও প্রেমিকা সিতারা বেগম ও সেবুল মিয়া এখনো পলাতক রয়েছেন। দীর্ঘদিন বিচার কার্য পর্যালোচনা শেষে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি প্রমাণিত হওয়ায় সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন হত্যাকান্ডের রায় ঘোষনা করেন।

এদিকে বাদি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন-এড.জিয়াউল ইসলাম ও আসামী পক্ষে এড. বোরহান উদ্দিন ও এড. আব্দুল ওদুদ। মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পিপি ড. খায়রুল কবির রুমেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

পরকীয়ার জেরে সন্তানকে হত্যা, প্রেমিকসহ মায়ের মৃত্যুদণ্ড

আপডেট টাইম : ১১:২৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে নিজের ১১ বছরের সন্তানকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যার অভিযোগে প্রেমিকসহ মায়ের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন দু’জনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন-জগন্নাথপুর উপজেলার চিতুলিয়া গ্রামের আলকাছ আলীর ছেলে প্রেমিক বারিক মিয়া (৩৭) ও তার পরকীয়া প্রেমিকা সিতারা বেগম (৩৯)। প্রেমিক মোঃ বারিক মিয়া সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে অন্তরীন থাকলেও হত্যাকান্ডের পর থেকে প্রেমিকা সিতারা বেগম পলাতক রয়েছেন।

আদালত সুত্রে জানা যায়, নিহত শিশু সোয়াইবুর রহমানের প্রবাসী পিতা রফিকুল ইসলাম প্রবাসে থাকার সুবাদে তার মা সিতারা বেগম তাদের বাড়ির কেয়ারটেকার মোঃ বারিক মিয়ার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। স্বামী বিদেশ যাওয়ার আগে মোঃ বারিক মিয়াকে তাদের পরিবার দেখাশোনা ও হাটবাজারের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন মোঃ রফিকুল ইসলাম।

তিনি বিদেশে যাওয়ার পর কেয়ারটেকার মোঃ বারিক মিয়ার সঙ্গে সিতারা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রায় সময়ই বারিক মিয়া সিতারা বেগমের ঘরে রাত্রিযাপন করতেন বলে বিষয়টি এলাকার লোকজনের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়।

দীর্ঘদিন ধরে কেয়ারটেকার বারিক মিয়ার সঙ্গে তার মা সিতারা বেগমের অবৈধ সম্পর্ক ও প্রণয়ের বিষয়টি নিজ শিশু সন্তান সুয়াইবুর রহমান নিজ চোখে দেখে ঘটনাটি তার প্রবাসী পিতা রফিকুল ইসলামকে জানানোর চেষ্টা করছিল।

এমন খবরে তার মা সিতারা বেগম তার প্রেমিক মোঃ বারিক মিয়াকে সন্তানের পরকীয়ার বিষয়টি অবহিত করলে প্রেমিক যুগল মিলে শিশুটিকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তারই অংশ হিসেবে ২০১২ সালের ১৪ই অক্টোবর বিকেলে একই গ্রামের আরেক শিশু আসামী সাবুল মিয়াকে দিয়ে সিতারার সন্তান শিশু সোয়াইবুর রহমানকে ফুসলিয়ে স্থানীয় চিতুলিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় নিয়ে যায়।

সন্ধ্যার পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রেমিক যুগল মিলে ওই মাদ্রাসার টয়লেটের কাছে গিয়ে শিশু সোয়াইবুর রহমানের মুখে ও গলায় চেপে ধরে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করে। পরে শিশু সোয়াইবুর রহমানের লাশ গুম করতে ওই টয়লেটের ট্যাংকিতে ফেলে দেয়।

এ ঘটনায় নিহতের চাচাতো ভাই মোঃ হান্নান মিয়া বাদি হয়ে গত ২০১২ সালের ১৫ই অক্টোবর প্রেমিক যুগল মোঃ বারিক মিয়া , মা সিতারা বেগম ও সেবুল মিয়াসহ তিনজনকে আসামী করে জগন্নাথপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর পুলিশ প্রেমিক বারিক মিয়াকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলেও প্রেমিকা সিতারা বেগম ও সেবুল মিয়া এখনো পলাতক রয়েছেন। দীর্ঘদিন বিচার কার্য পর্যালোচনা শেষে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি প্রমাণিত হওয়ায় সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন হত্যাকান্ডের রায় ঘোষনা করেন।

এদিকে বাদি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন-এড.জিয়াউল ইসলাম ও আসামী পক্ষে এড. বোরহান উদ্দিন ও এড. আব্দুল ওদুদ। মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পিপি ড. খায়রুল কবির রুমেন।