ঢাকা ০৮:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে নতুন পরিকল্পনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৬:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ মার্চ ২০১৯
  • ৩০৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানবিক বিবেচনায় দেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের ঘিরে সৃষ্ট সংকট সমাধানে নতুন কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সরকারের প্রতিশ্রুতি না রাখা ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমারের মিথ্যা আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশও নতুন কৌশলের দিকে হাঁটছে।

আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবে সরকার। এসব কৌশলের পুরোপুরি বাস্তবায়ন শিগগিরই দেখা যাবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পক্ষে আর কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী গ্রহণ করা সম্ভব নয়, দেশের পক্ষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গত বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের রাখাইনে একটি ‘সেফ জোন’ গড়ে তুলতে কাজ করবে সরকার। ‘সেফ জোনে’ রোহিঙ্গাদের দেখভালে ভারত, চীন ও আসিয়ানের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোকে রাখার কথা বাংলাদেশের প্রস্তাবে তুলে ধরা হবে। ওই রাষ্ট্রগুলো ও জোটের প্রতি মিয়ানমারের সরকারের আস্থা আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

‘সেফ জোনের’ প্রস্তাবটি আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতার মধ্য দিয়ে দেন। প্রস্তাবটি নতুন করে আবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। সম্প্রতি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ভারত শুরুতেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘বাণিজ্য অস্ত্র’ প্রয়োগ করে।

পাকিস্তানকে দেওয়া এমএফএন (মোস্ট ফেভার্ড নেশন) বাতিল করে ভারত। মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ বাণিজ্যকে ভারতের মতো ব্যবহার করবে কি না, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ এমনো ভাবছেন। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা না হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েক কর্মকর্তা মনে করেন, মিয়ানমারের এমএফএন বাতিল বা স্থগিত করা হলে বাংলাদেশে দেশটির রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে। এতে দেশটি বাণিজ্যিকভাবে চাপের মুখে পড়তে পারে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা-পর্যালোচনা করে এরই মধ্যে নতুন কিছু কৌশল তৈরি করেছি। শিগগিরই সেসবের বাস্তবায়ন দেখা যাবে।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের মিথ্যা আশ্বাস ও নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকার জোরালোভাবে তুলে ধরবে। চুক্তি করেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না করে পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়গুলোও বিশ্বকে জানানো হবে। মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মূল্য দিতে হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নও তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক প্রশ্নও তোলেন, ‘তাহলে প্রতিবেশী দেশের রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে এখন কী বাংলাদেশকে তার মূল্য দিতে হচ্ছে?’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর চোখ এখন দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের চেয়ে ভারত ও পাকিস্তানের ‘যুদ্ধাবস্থার’ দিকে বেশি। পরমাণু শক্তিধর এ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ‘যুদ্ধাবস্থা’ বিরাজ করছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষও চলছে। ফলে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো এখন বেশি মনোযোগী ওই দুই দেশের মধ্যে আসন্ন ‘যুদ্ধ’ থামিয়ে শান্তি আলোচনার বিষয়ে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন কৌশলে পুরো উদ্যমে কাজ করবে সরকার।

এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে পাশে চায় সরকার। সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট। বাংলাদেশ বিশ্ব মানবিক জনমত গড়েছে। বিশ্বকে মিয়ানমার সরকারের অমানবিকতা অনুধাবন করাতেও সক্ষম হয়েছে।

অভিযোগ আছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নানা তৎপরতা ও চাপ তৈরি হলেও চীন ও রাশিয়া প্রকাশ্যে মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় কোনো কিছুতেই তেমন কাজ হচ্ছে না। ফলে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাপ সৃষ্টি করলেও মিয়ানমারের টালবাহানায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এক পর্যায়ে মিয়ানমার প্রতি সপ্তাহে ১৫০০ জন করে আর দুই বছরের মধ্যে সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হলেও সেই অঙ্গীকার পালন করছে না। তবে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর ইস্যুতে মিয়ানমারের কর্মকা- ও আচরণে হতাশা ও বিস্ময় প্রকাশ করে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো। সেইসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছামূলক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তার ওপর জোর দিচ্ছেন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে দেশটির সামরিক অভিযানের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন রোহিঙ্গারা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। মানবিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দেন। চরম নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে শেখ হাসিনার সরকার যুক্তিসংগতভাবে ও শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক তৎপরতা ও আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালায়।

শেখ হাসিনার সরকার মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও গেছে। একইসঙ্গে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগের সুযোগও খোলা রাখে সরকার। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তি সইয়ের পরও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যাননি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে নতুন পরিকল্পনা

আপডেট টাইম : ১২:২৬:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ মার্চ ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানবিক বিবেচনায় দেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের ঘিরে সৃষ্ট সংকট সমাধানে নতুন কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সরকারের প্রতিশ্রুতি না রাখা ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখেও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমারের মিথ্যা আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশও নতুন কৌশলের দিকে হাঁটছে।

আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবে সরকার। এসব কৌশলের পুরোপুরি বাস্তবায়ন শিগগিরই দেখা যাবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, বাংলাদেশের পক্ষে আর কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী গ্রহণ করা সম্ভব নয়, দেশের পক্ষে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গত বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের রাখাইনে একটি ‘সেফ জোন’ গড়ে তুলতে কাজ করবে সরকার। ‘সেফ জোনে’ রোহিঙ্গাদের দেখভালে ভারত, চীন ও আসিয়ানের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোকে রাখার কথা বাংলাদেশের প্রস্তাবে তুলে ধরা হবে। ওই রাষ্ট্রগুলো ও জোটের প্রতি মিয়ানমারের সরকারের আস্থা আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

‘সেফ জোনের’ প্রস্তাবটি আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতার মধ্য দিয়ে দেন। প্রস্তাবটি নতুন করে আবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। সম্প্রতি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ভারত শুরুতেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘বাণিজ্য অস্ত্র’ প্রয়োগ করে।

পাকিস্তানকে দেওয়া এমএফএন (মোস্ট ফেভার্ড নেশন) বাতিল করে ভারত। মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ বাণিজ্যকে ভারতের মতো ব্যবহার করবে কি না, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ এমনো ভাবছেন। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা না হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েক কর্মকর্তা মনে করেন, মিয়ানমারের এমএফএন বাতিল বা স্থগিত করা হলে বাংলাদেশে দেশটির রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে। এতে দেশটি বাণিজ্যিকভাবে চাপের মুখে পড়তে পারে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা-পর্যালোচনা করে এরই মধ্যে নতুন কিছু কৌশল তৈরি করেছি। শিগগিরই সেসবের বাস্তবায়ন দেখা যাবে।’

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের মিথ্যা আশ্বাস ও নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকার জোরালোভাবে তুলে ধরবে। চুক্তি করেও মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না করে পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়গুলোও বিশ্বকে জানানো হবে। মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মূল্য দিতে হচ্ছে কি না, এ প্রশ্নও তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক প্রশ্নও তোলেন, ‘তাহলে প্রতিবেশী দেশের রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে এখন কী বাংলাদেশকে তার মূল্য দিতে হচ্ছে?’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর চোখ এখন দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের চেয়ে ভারত ও পাকিস্তানের ‘যুদ্ধাবস্থার’ দিকে বেশি। পরমাণু শক্তিধর এ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ‘যুদ্ধাবস্থা’ বিরাজ করছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষও চলছে। ফলে প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো এখন বেশি মনোযোগী ওই দুই দেশের মধ্যে আসন্ন ‘যুদ্ধ’ থামিয়ে শান্তি আলোচনার বিষয়ে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন কৌশলে পুরো উদ্যমে কাজ করবে সরকার।

এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে পাশে চায় সরকার। সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট। বাংলাদেশ বিশ্ব মানবিক জনমত গড়েছে। বিশ্বকে মিয়ানমার সরকারের অমানবিকতা অনুধাবন করাতেও সক্ষম হয়েছে।

অভিযোগ আছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নানা তৎপরতা ও চাপ তৈরি হলেও চীন ও রাশিয়া প্রকাশ্যে মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় কোনো কিছুতেই তেমন কাজ হচ্ছে না। ফলে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাপ সৃষ্টি করলেও মিয়ানমারের টালবাহানায় সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এক পর্যায়ে মিয়ানমার প্রতি সপ্তাহে ১৫০০ জন করে আর দুই বছরের মধ্যে সব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হলেও সেই অঙ্গীকার পালন করছে না। তবে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর ইস্যুতে মিয়ানমারের কর্মকা- ও আচরণে হতাশা ও বিস্ময় প্রকাশ করে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো। সেইসঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছামূলক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তার ওপর জোর দিচ্ছেন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে দেশটির সামরিক অভিযানের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন রোহিঙ্গারা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। মানবিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দেন। চরম নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে শেখ হাসিনার সরকার যুক্তিসংগতভাবে ও শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক তৎপরতা ও আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালায়।

শেখ হাসিনার সরকার মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও গেছে। একইসঙ্গে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগের সুযোগও খোলা রাখে সরকার। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন চুক্তি সইয়ের পরও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যাননি।