ঢাকা ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

ফাঁসির রায় শুনেও কাঠগড়ায় নিশ্চুপ স্নিগ্ধা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:০৫:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারী ২০১৯
  • ৩৩৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রংপুরে এ্যাডভোকেট রথিশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবু সোনা হত্যা মামলায় তার স্নিগ্ধা ভৌমিককে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালত রায় ঘোষণার সময় বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় উপস্থিত সকলের দৃষ্টি ছিল তার দিকে।

আদালতে মাথা নিচু করে নিশ্চুপ থাকেন স্নিগ্ধা ভৌমিক। তার চোখে-মুখে ভীতির ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। তবে বিচারকের কক্ষে প্রবেশ ও বিচার কাজ শেষে প্রিজন ভ্যানে নেয়ার সময় তিনি স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে যান।

বিচারক রায় দেয়ার পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বাবু সোনার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক ও ছেলে দীপ্ত ভৌমিক। এ সময় আদালতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও আদালতে আসেননি বাবু সোনার মেয়ে অরিত্রী ভৌমিক।

বিচার নিয়ে স্বজন ও সহকর্মীরা যা বললেন

মুত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর বাবু সোনার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক সুবল বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। পুলিশ প্রশাসন যে তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছেন এবং বিজ্ঞ আদালত অতি দ্রুত পর্যায়ে স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যে রায় ঘোষণা করেছে আমি বাদী হিসেবে এবং পরিবার হিসেবে সন্তোষ প্রকাশ করছি।

তিনি বলেন, এ রায়কে আমরা খুশি বলবো না, কারণ আমার দাদাকে তো আর ফিরে পাব না। আমাদের মধ্য মণি ছিলেন তিনি, আমাদের মাথা ছিলেন তিনি। সেজন্য রায়ে আমরা খুশি, কিন্তু তাকে ফেরত না পাবার যে বেদনা সেটাতে অনেক অনেক অনেক মর্মাহত।

উচ্চ আদালতে আপিল করে স্নিগ্ধা ভৌমিকের শাস্তি কমানোর সম্ভাবনার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। দাদা একজন আইন বিষয়ক কর্মকর্তা ছিলেন। তাই পরবর্তীতে আপিল করলেও আদালত বিষয়টিকে প্রাধান্য দিবে না।

পূজা উদযাপন কমিটির মহানগর সাধারণ সম্পাদক সুব্রত সরকার মুকুল বলেন, আমরা এ রায়ে অত্যন্ত খুশি। এটি অবিলম্বে যেন কার্যকর হয় সেটাই আমরা চাই।

পূজা উদাপন কমিটির জেলা সম্পাদক ধীমান ভট্টাচার্য্য বলেন, আসামিপক্ষ যদি পরবর্তীতে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে, তাহলে বিচারকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে এই রায় যেন বহাল থাকে।

সহকারী সরকারী কৌশলী জাহাঙ্গীর আলম তুহিন বলেন, আমরা আইনজীবিীসমাজ এই রায়ে সন্তুষ্ট। এ মামলার তদন্তের সাথে জড়িত সকল সংস্থাকে নিষ্ঠার সাথে এবং দ্রুত সময়ে কাজ সম্পন্ন করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

রায় শেষে সরকারী কৌশুলী (পিপি) আব্দুল মালেক বলেন, আমাদের বন্ধু অ্যাডভোকেট রথিশ চন্দ্র ভৌমিককে পরিকল্পিতিভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, এই মামলার আজ রায় প্রকাশ হলো। এই মামলায় স্ত্রীর প্রতি যে স্বামীর অগাধ বিশ্বাস সেই বিশ্বাসে আসামী কুঠারাঘাত করেছে। তার অনৈতিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে অন্যের প্ররোচনায় অন্যের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে বাবু সোনাকে হত্যার জন্য বিজ্ঞ আদালত স্নিগ্ধা ভৌমিককে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। আমরা মনে করি এই রায় যুক্তিযুক্ত, ন্যায় সঙ্গত ও এতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞ।

গত বছরের ২৯ মার্চ নিখোঁজ হওয়ার পর তার ছোটভাই সুশান্ত ভৌমিক একটি অপহরণের মামলা করেন। তদন্তে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা ও তার প্রেমিক কামরুল তাকে হত্যার কথা স্বীকার করে। তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে শ্বাসরোধে হত্যার কথা জানায় তারা।

পরে কামরুলের বড় ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে পুঁতে রাখা লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দুই আসামি গ্রেফতারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ভুলে শিশুর ভালো চোখে অস্ত্রোপচার

ফাঁসির রায় শুনেও কাঠগড়ায় নিশ্চুপ স্নিগ্ধা

আপডেট টাইম : ০৬:০৫:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারী ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রংপুরে এ্যাডভোকেট রথিশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবু সোনা হত্যা মামলায় তার স্নিগ্ধা ভৌমিককে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালত রায় ঘোষণার সময় বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। এসময় উপস্থিত সকলের দৃষ্টি ছিল তার দিকে।

আদালতে মাথা নিচু করে নিশ্চুপ থাকেন স্নিগ্ধা ভৌমিক। তার চোখে-মুখে ভীতির ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। তবে বিচারকের কক্ষে প্রবেশ ও বিচার কাজ শেষে প্রিজন ভ্যানে নেয়ার সময় তিনি স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে যান।

বিচারক রায় দেয়ার পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বাবু সোনার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক ও ছেলে দীপ্ত ভৌমিক। এ সময় আদালতে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও আদালতে আসেননি বাবু সোনার মেয়ে অরিত্রী ভৌমিক।

বিচার নিয়ে স্বজন ও সহকর্মীরা যা বললেন

মুত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর বাবু সোনার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক সুবল বলেন, আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। পুলিশ প্রশাসন যে তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছেন এবং বিজ্ঞ আদালত অতি দ্রুত পর্যায়ে স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যে রায় ঘোষণা করেছে আমি বাদী হিসেবে এবং পরিবার হিসেবে সন্তোষ প্রকাশ করছি।

তিনি বলেন, এ রায়কে আমরা খুশি বলবো না, কারণ আমার দাদাকে তো আর ফিরে পাব না। আমাদের মধ্য মণি ছিলেন তিনি, আমাদের মাথা ছিলেন তিনি। সেজন্য রায়ে আমরা খুশি, কিন্তু তাকে ফেরত না পাবার যে বেদনা সেটাতে অনেক অনেক অনেক মর্মাহত।

উচ্চ আদালতে আপিল করে স্নিগ্ধা ভৌমিকের শাস্তি কমানোর সম্ভাবনার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। দাদা একজন আইন বিষয়ক কর্মকর্তা ছিলেন। তাই পরবর্তীতে আপিল করলেও আদালত বিষয়টিকে প্রাধান্য দিবে না।

পূজা উদযাপন কমিটির মহানগর সাধারণ সম্পাদক সুব্রত সরকার মুকুল বলেন, আমরা এ রায়ে অত্যন্ত খুশি। এটি অবিলম্বে যেন কার্যকর হয় সেটাই আমরা চাই।

পূজা উদাপন কমিটির জেলা সম্পাদক ধীমান ভট্টাচার্য্য বলেন, আসামিপক্ষ যদি পরবর্তীতে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে, তাহলে বিচারকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে এই রায় যেন বহাল থাকে।

সহকারী সরকারী কৌশলী জাহাঙ্গীর আলম তুহিন বলেন, আমরা আইনজীবিীসমাজ এই রায়ে সন্তুষ্ট। এ মামলার তদন্তের সাথে জড়িত সকল সংস্থাকে নিষ্ঠার সাথে এবং দ্রুত সময়ে কাজ সম্পন্ন করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

রায় শেষে সরকারী কৌশুলী (পিপি) আব্দুল মালেক বলেন, আমাদের বন্ধু অ্যাডভোকেট রথিশ চন্দ্র ভৌমিককে পরিকল্পিতিভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, এই মামলার আজ রায় প্রকাশ হলো। এই মামলায় স্ত্রীর প্রতি যে স্বামীর অগাধ বিশ্বাস সেই বিশ্বাসে আসামী কুঠারাঘাত করেছে। তার অনৈতিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে অন্যের প্ররোচনায় অন্যের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে বাবু সোনাকে হত্যার জন্য বিজ্ঞ আদালত স্নিগ্ধা ভৌমিককে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। আমরা মনে করি এই রায় যুক্তিযুক্ত, ন্যায় সঙ্গত ও এতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞ।

গত বছরের ২৯ মার্চ নিখোঁজ হওয়ার পর তার ছোটভাই সুশান্ত ভৌমিক একটি অপহরণের মামলা করেন। তদন্তে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা ও তার প্রেমিক কামরুল তাকে হত্যার কথা স্বীকার করে। তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে শ্বাসরোধে হত্যার কথা জানায় তারা।

পরে কামরুলের বড় ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ি থেকে পুঁতে রাখা লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দুই আসামি গ্রেফতারের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।