ঢাকা ১০:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৯০ বছর ধরে টিকে আছে কাগজের বাড়ি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:১৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারী ২০১৯
  • ৩৮০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাড়ি তৈরি করার সময় আমরা ইট, বালু, রোড, সিমেন্ট ব্যবহার করে থাকি। কারণ আমরা চাই আমাদের অনেক সখের তৈরি বাড়িটি যেন ঝোড়বৃষ্টিতে ভেঙে না যায়। বাড়িটি যেন টিকে থাকে বহু বছর। আর কাগজের ঘরের কথা আমরা প্রবাদ বা উপমা দেয়ার জন্য ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু বাস্তবে এটা আমরা কল্পনাও করতে পারি না যে কাগজ দিয়ে একটা বাড়ি তৈরি করবো। তাও আবার খেলনা বাড়ি না, একেবারে বাংলো বাড়ি। আর অন্য দিকে চিন্তা করলে আমরা সাধারণত পুরনো পত্রিকা বাড়িতে, রান্না ঘরে নানান কাজে ব্যবহার করে থাকি।

আর ঝাল মুড়ি বা ঠোঙায় পেপার বা পত্রিকার ব্যবহার এখনো অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু নমনীয় ও হালকা এই খবরের কাগজ দিয়ে কী একটা বাড়ি বানানো সম্ভব? জি, এমনটাই করেছেন এলিস স্টেনম্যান নামের যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তি। সংবাদপত্রের কাগজ দিয়ে বিশালাকারের বাড়ি নির্মাণ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার স্টেনম্যান ১৯২২ সালে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটানোর জন্যে একটি বাড়ি নির্মাণের চিন্তা করেছিলেন। পরবর্তীতে তৈরি করেন এই কাগজের বাড়ি।

পত্রিকার কাগজের তৈরি বাড়িটি অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুয়েটসে রকপোর্ট নামক এলাকায়। এই বাড়ি নির্মাণের সবকিছুতেই খবরের কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি বাড়ির মালিক এর নামও রেখেছেন ‘পেপার হাউস’।

একতলা এই লাল রঙের বাড়িতে ঢুকতেই প্রথমে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। এরপর বামে মোড় নিলেই চোখে পড়বে খুব সাধারণ এক লগ কেবিন বা কাঠের কক্ষ। কিন্তু আসলে তা নির্মিত হয়েছে সাধারণ কাগজ দিয়ে। অন্য আর দশটা সাধারণ বাড়ির মতোই কাঠের খুঁটি, একচালা ছাদ এবং মেঝে ইত্যাদি দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে স্টেনম্যান নামের এই ব্যক্তির মাথায় নতুন বুদ্ধি খেলে। তিনি পুরনো খবরের কাগজ এক পরতের উপর আর এক পরত কাগজ আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেয়াল তৈরি করে ফেলেন। এবং তাতে সুন্দর করে বার্নিশ করে তার ‘পেপার হাউস’ নির্মাণ করেন।

বাড়ির দেয়াল বানানোর পাশাপাশি তিনি পরবর্তীতে চেয়ারসহ অন্যান্য জিনিসপত্রও তৈরি করে ফেলেন। আর সেগুলো শুধুমাত্র কাগজ দিয়ে। এমনকি জানালার পর্দা ও দেয়ালের ঘড়িতেও সংবাদপত্রের কাগজ ব্যবহার করেন তিনি। শুধুমাত্র পিয়ানো এবং ফায়ার প্লেসের ইটগুলো ছাড়া সবই কাগজ দিয়ে তৈরি।

এমনকি বাড়িতে ব্যবহৃত আঠাও নিজে তৈরি করেন ঘরে বসে। ময়দা, পানি আর আপেলের খোসা দিয়ে সেই আঠা তৈরি করেন তিনি। কিন্তু কী কারণে স্টেনম্যান তার বাড়িতে সংবাদপত্রের কাগজ ব্যবহার করার ইচ্ছা করেছিলেন তা জানা যায়নি। তবে তার সন্তানরা ধারণা করেন, তিনি খুব সস্তা এবং সহজলভ্য উপাদান দিয়ে কিছু করতে চেয়েছিলেন।

অথবা পুরনো জিনিস হয়তো নতুন করে ব্যবহারের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন তিনি। আবার ধারণা করা হয়, সংবাদপত্রের কাগজের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। এমনকি তিনি একটি মেশিনের ডিজাইন করেন যা দিয়ে পেপার ক্লিপস বানানো যায়।

মূলত তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন, বাড়ির বাইরের অংশ বিশেষ কিছু দিয়ে ঢেকে দিবেন কিন্তু যখন দেখলেন পেপার ক্লিপ দিয়ে বানানো দেয়াল ও ছাদ প্রথমবার শীতের ধকল কাটিকে টিকে গেল তখন অতিরিক্ত নিরাপত্তার খরচের চিন্তা বাদ দেন।

মাত্র দুই বছরের মধ্যেই স্টেনমেন তার কাগজের বাড়ি নির্মাণ শেষ করেন। ১৯৩০ সাল পর্যন্ত সেখানে বসবাস করেন। প্রায় ১ লাখ সংবাদপত্রের কাগজ ব্যবহার করে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

বর্তমানে নব্বই বছরের অধিক সময় ধরে টিকে থাকা কাগজের বাড়িটির দেয়ালের চটা উঠতে শুরু করেছে। ১৯৪২ সালে স্টেনম্যানের মৃত্যুর পরে বাড়িটি এখন একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

৯০ বছর ধরে টিকে আছে কাগজের বাড়ি

আপডেট টাইম : ০৭:১৪:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারী ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাড়ি তৈরি করার সময় আমরা ইট, বালু, রোড, সিমেন্ট ব্যবহার করে থাকি। কারণ আমরা চাই আমাদের অনেক সখের তৈরি বাড়িটি যেন ঝোড়বৃষ্টিতে ভেঙে না যায়। বাড়িটি যেন টিকে থাকে বহু বছর। আর কাগজের ঘরের কথা আমরা প্রবাদ বা উপমা দেয়ার জন্য ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু বাস্তবে এটা আমরা কল্পনাও করতে পারি না যে কাগজ দিয়ে একটা বাড়ি তৈরি করবো। তাও আবার খেলনা বাড়ি না, একেবারে বাংলো বাড়ি। আর অন্য দিকে চিন্তা করলে আমরা সাধারণত পুরনো পত্রিকা বাড়িতে, রান্না ঘরে নানান কাজে ব্যবহার করে থাকি।

আর ঝাল মুড়ি বা ঠোঙায় পেপার বা পত্রিকার ব্যবহার এখনো অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু নমনীয় ও হালকা এই খবরের কাগজ দিয়ে কী একটা বাড়ি বানানো সম্ভব? জি, এমনটাই করেছেন এলিস স্টেনম্যান নামের যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তি। সংবাদপত্রের কাগজ দিয়ে বিশালাকারের বাড়ি নির্মাণ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার স্টেনম্যান ১৯২২ সালে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটানোর জন্যে একটি বাড়ি নির্মাণের চিন্তা করেছিলেন। পরবর্তীতে তৈরি করেন এই কাগজের বাড়ি।

পত্রিকার কাগজের তৈরি বাড়িটি অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুয়েটসে রকপোর্ট নামক এলাকায়। এই বাড়ি নির্মাণের সবকিছুতেই খবরের কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি বাড়ির মালিক এর নামও রেখেছেন ‘পেপার হাউস’।

একতলা এই লাল রঙের বাড়িতে ঢুকতেই প্রথমে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। এরপর বামে মোড় নিলেই চোখে পড়বে খুব সাধারণ এক লগ কেবিন বা কাঠের কক্ষ। কিন্তু আসলে তা নির্মিত হয়েছে সাধারণ কাগজ দিয়ে। অন্য আর দশটা সাধারণ বাড়ির মতোই কাঠের খুঁটি, একচালা ছাদ এবং মেঝে ইত্যাদি দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে স্টেনম্যান নামের এই ব্যক্তির মাথায় নতুন বুদ্ধি খেলে। তিনি পুরনো খবরের কাগজ এক পরতের উপর আর এক পরত কাগজ আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেয়াল তৈরি করে ফেলেন। এবং তাতে সুন্দর করে বার্নিশ করে তার ‘পেপার হাউস’ নির্মাণ করেন।

বাড়ির দেয়াল বানানোর পাশাপাশি তিনি পরবর্তীতে চেয়ারসহ অন্যান্য জিনিসপত্রও তৈরি করে ফেলেন। আর সেগুলো শুধুমাত্র কাগজ দিয়ে। এমনকি জানালার পর্দা ও দেয়ালের ঘড়িতেও সংবাদপত্রের কাগজ ব্যবহার করেন তিনি। শুধুমাত্র পিয়ানো এবং ফায়ার প্লেসের ইটগুলো ছাড়া সবই কাগজ দিয়ে তৈরি।

এমনকি বাড়িতে ব্যবহৃত আঠাও নিজে তৈরি করেন ঘরে বসে। ময়দা, পানি আর আপেলের খোসা দিয়ে সেই আঠা তৈরি করেন তিনি। কিন্তু কী কারণে স্টেনম্যান তার বাড়িতে সংবাদপত্রের কাগজ ব্যবহার করার ইচ্ছা করেছিলেন তা জানা যায়নি। তবে তার সন্তানরা ধারণা করেন, তিনি খুব সস্তা এবং সহজলভ্য উপাদান দিয়ে কিছু করতে চেয়েছিলেন।

অথবা পুরনো জিনিস হয়তো নতুন করে ব্যবহারের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন তিনি। আবার ধারণা করা হয়, সংবাদপত্রের কাগজের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এই বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। এমনকি তিনি একটি মেশিনের ডিজাইন করেন যা দিয়ে পেপার ক্লিপস বানানো যায়।

মূলত তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন, বাড়ির বাইরের অংশ বিশেষ কিছু দিয়ে ঢেকে দিবেন কিন্তু যখন দেখলেন পেপার ক্লিপ দিয়ে বানানো দেয়াল ও ছাদ প্রথমবার শীতের ধকল কাটিকে টিকে গেল তখন অতিরিক্ত নিরাপত্তার খরচের চিন্তা বাদ দেন।

মাত্র দুই বছরের মধ্যেই স্টেনমেন তার কাগজের বাড়ি নির্মাণ শেষ করেন। ১৯৩০ সাল পর্যন্ত সেখানে বসবাস করেন। প্রায় ১ লাখ সংবাদপত্রের কাগজ ব্যবহার করে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

বর্তমানে নব্বই বছরের অধিক সময় ধরে টিকে থাকা কাগজের বাড়িটির দেয়ালের চটা উঠতে শুরু করেছে। ১৯৪২ সালে স্টেনম্যানের মৃত্যুর পরে বাড়িটি এখন একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়েছে।