ঢাকা ০৪:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১০ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতের সবজি চাষ মাঠে মাঠে সবুজ হাসি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৫৪:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৫
  • ৩১২ বার

বগুড়ায় শীতের আগাম সবজি চাষের ধুম পড়েছে। কেউ কেউ আরো আগেই সবজি চাষে নেমেছেন। এরই মধ্যে কিছু সবজি বাজারে আসতেও শুরু করেছে। আগাম শাকসবজি বাজারে তুলতে পারলে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব সেই চিন্তা মাথায় রেখে চারা তৈরি ও সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা। শরতের শেষ দিকে বগুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। দিনের বেলা প্রচণ্ড গরম পড়লেও রাতে হালকা শীত অনুভূত হয়। আবহাওয়ার এমন পালাবদলে বগুড়ায় চাষাবাদের ধরনও পাল্টেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে এমন ছবিই দেখা গেছে।

বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শিবগঞ্জ, গাবতলী, কাহালু, শেরপুর ও সোনাতলা উপজেলার কিছু অংশে বড় পরিসরে শাকসবজির চাষ হয়। সাম্প্রতিক সময়ে চাষিরা সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ায় তাঁরা শীতের আগাম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। শীতের আগেই বাজারে বিক্রি করে বেশি টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে এখন চাষিরা জমিতে শীতকালীন শাকসবজির চারা বপন ও পরিচর্জার কাজ করে যাচ্ছেন। বগুড়ায় যেসব শাকসবজি চাষ হয় সেগুলো হলো আগাম আলু, মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ঢেঁড়স, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক ও পেঁয়াজ।

শিবগঞ্জের মোকামতলা, কাশিপুর, টেপাগাড়ি, মুরাদপুর, পার টেপাগাড়ি, পার আচলাই, অভিরামপুর, বগুড়া সদরের গোকুল, ঠেঙ্গামারা, নুলগোলা, নামুজা, পীরগাছা, রাজাপুর, সাবগ্রাম, গাবতলীর নারুয়ামালা, তরণীহাট, লাঠিগঞ্জ, দুর্গাহাটাসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা মেতেছেন শীতকালীন সবজি চাষে। বগুড়ার খুচরা বাজারে নতুন সবজির মধ্যে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, শিম ৬০-৮০ টাকা, ফুলকপি ৮০-১০০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৬০ টাকা, পালং শাক ৪০-৬০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।

এদিকে বগুড়ার পাইকারি বাজার মহাস্থান, নয়মাইল, মোকামতলা, চণ্ডিহারা, দশমাইলসহ বিভিন্ন বাজারের সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।

মাটিডালি এলাকার সবজি চাষি নজরুল ইসলাম জানান, শীতের আমেজ শুরু হয়েছে সে কারণে শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদ করছি। পল্লীমঙ্গল এলাকার চাষি খলিলুর রহমান বলেন, শীতের আগেই শাকসবজি জমিতে লাগিয়েছিলাম। সেগুলো এখন বাজারে বিক্রি করছি। আগাম শীতকালীন সবজি বিক্রি করে ভালো লাভ হচ্ছে। মহাস্থান হাটের পাইকারি ক্রেতা আফজাল হোসেন জানান, এখান থেকে এসব শাকসবজি কিনে ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বাজারগুলোতে পাইকারি বিক্রি করে থাকি।

বগুড়া সদরের কালিবালা গ্রামের চাষি হামিদ আলী বলেন, যেকোনো সবজিই যদি মৌসুমের শুরুতেই বাজারে তোলা যায়, তবে তার দাম যেমন বেশি পাওয়া যায়, তেমনি ক্রেতাদের কাছে তার চাহিদাও থাকে ব্যাপক। সে চিন্তা মাথায় রেখেই তিনি এবার জমিতে ফুলকপি চাষ করছেন।

শাজাহানপুরের মাদলা এলাকার কৃষক আমিরুল হোসেন তাঁর জমিতে বেগুনের চারা উৎপাদন করেছেন। জমিতে বিশেষভাবে ছাউনি দিয়ে তিনি এ চারা জন্মান। তিনি জানান, শীতকালে যাঁরা আগাম বেগুন উৎপাদন করতে চান, তাঁরা তাঁর কাছ থেকে এ চারা কিনে নেবেন।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার ১২ উপজেলায় প্রায় সারা বছরই সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় সদর, সারিয়াকান্দি, ধুনট, সোনাতলা, আদমদীঘি, শেরপুর ও শাহজাহানপুরে। বর্তমানে জেলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৮ টন ধরে প্রায় এক লাখ টন সবজি উৎপাদনের আশা করছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তারা। বগুড়ার শেরপুরের আব্দুল বারেক নামের এক কৃষক জানান, উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়। এখানে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে। শিম, মুলা, পালং শাক চাষ হয়েছে। তিনি আরো জানান, শেরপুরের হাটবাজারে পালং শাক বিক্রি শুরু হয়েছে। ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে পালং শাক পাওয়া যাচ্ছে। মুলা শাক বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকায়।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক চণ্ডিদাস কুণ্ডু বলেন, জেলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে। দিন যাচ্ছে আর আগাম জাতের সবজি চাষ বাড়ছে। প্রতি হেক্টরে ১৮ টন ফলন ধরা হয়েছে। গত বছর সবজি আবাদে রেকর্ড করেছিল বগুড়ার চাষিরা। ভালো ফলনের আশায় এবারও সবজি চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

মাঠে মাঠে সবুজ হাসি
রাজশাহীর মোহনপুরের নন্দনপুরের চাষিরা উৎপাদিত মুলা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত। ছবি : কালের কণ্ঠ

রাজশাহী

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

শীতের সবজিতে মেতেছেন রাজশাহীর কৃষকরা। এরই মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতের প্রায় সব ধরনের আগাম সবজি। এর মধ্যে রয়েছে মুলা, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, ওলকপি, বরবটি, গাজরসহ নানা ধরনের সবজি। বাজারে নতুন এসব সবজির দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্র মতে, এবার এরই মধ্যে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে শীতের আগাম সবজি চাষ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার ১৩-১৪ হাজার হেক্টর জমিতে শীতের সবজি চাষ হবে। গত বছরও প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে শীতের সবজি চাষ করা হয়েছিল।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছরই রাজশাহীতে আগাম সবজি চাষ করা হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আবার দাম ভালো পাওয়ায় সবজি চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন।

পবার বড়গাছী গ্রামের সবজি চাষি আজমুল হোসেন জানান, তিনি প্রায় চার বিঘা জমিতে এবার মুলা, শিম ও ফুলকপির চাষ করেছেন।

১৫ দিন ধরে এসব সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি ৫০ কেজি মুলার একটি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৮-১৯ শ টাকা দরে। সেই হিসাবে প্রতি কেজি মুলার দাম কৃষকরাই পাচ্ছেন অন্তত ৩৬ টাকা করে। বাজারে সেই মুলা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা দরে। প্রতি মণ শিম বিক্রি করেন কৃষকরা ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে। আবার সেই শিম বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে।

দুর্গাপুরের কানপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুস সোবহান জানান, তিনি প্রায় দুই বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। এরই মধ্যে ফুলকপি উঠতে শুরু করেছে। প্রতি মণ ফুলকপি তিনি পাইকারি বিক্রি করে দাম পাচ্ছেন অন্তত ১৫ শ টাকা করে। উপজেলার ব্রহ্মপুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন।

কপিগুলো এখনো বড় আকার লাভ করেনি। তবে ছোট আকারের (২৫০ গ্রাম) একটি কপিই বাজারে অন্তত ১০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে লাগানো ওই কপিগুলো বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন তিনি।

অন্যদিকে জেলার গোদাগাড়ীতে এবারও আগাম টমেটো চাষ করেছেন কয়েক শ কৃষক। স্বাভাবিক সময়ের টমেটো চাষের পাশাপাশি এ উপজেলার কিছু কৃষক প্রতিবারই আগাম টমেটো চাষ করে থাকেন। তাঁদের টমেটোগুলো এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে। বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা দরে। সেটি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে।

গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি এলাকার টমেটো চাষি মানিক মোহাম্মদ বলেন, আগাম টমেটো চাষ করলে লাভবান হওয়া যায়। তবে টমেটোর চারা রোপণের সময় পুরোদমে বর্ষা থাকে বলে ওই সময় অনেকটা ঝুঁকি থাকে। সেই ঝুঁকি পার করতে পারলে আগাম টমেটো চাষ করে ভালো আয় করা যায়। তিনি প্রায় চার বিঘা জমিতে শীতের আগাম টমেটো চাষ করেছেন। এগুলো বিক্রি করে অন্তত তিন লাখ টাকা আয় হবে বলেও আশা করেন তিনি। তবে আর কয়েক দিন পর থেকেই বাজারে স্বাভাবিক সময়ের টমেটো উঠতে শুরু করলে তখন দামও কমে যাবে। এর আগেই আগাম টমেটো চাষিরা লাভবান হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন আরেক কৃষক মনিরুল ইসলাম।

অন্যদিকে জেলার পবা, দুর্গাপুর, বাগমারা, মোহনপুর, পুঠিয়াসহ অন্যান্য উপজেলায়ও শীতের সবজি গাজর, ওলকপি, বরবটির চাষ হয়েছে অনেক। বাজারে বর্তমানে বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে। কয়েক দিন আগেও এ বরবটি ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আর এক কেজি ওলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে। সে ক্ষেত্রে এসব ফসল চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

শীতের সবজি চাষ মাঠে মাঠে সবুজ হাসি

আপডেট টাইম : ০৪:৫৪:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৫

বগুড়ায় শীতের আগাম সবজি চাষের ধুম পড়েছে। কেউ কেউ আরো আগেই সবজি চাষে নেমেছেন। এরই মধ্যে কিছু সবজি বাজারে আসতেও শুরু করেছে। আগাম শাকসবজি বাজারে তুলতে পারলে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব সেই চিন্তা মাথায় রেখে চারা তৈরি ও সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরা। শরতের শেষ দিকে বগুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। দিনের বেলা প্রচণ্ড গরম পড়লেও রাতে হালকা শীত অনুভূত হয়। আবহাওয়ার এমন পালাবদলে বগুড়ায় চাষাবাদের ধরনও পাল্টেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে এমন ছবিই দেখা গেছে।

বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, শিবগঞ্জ, গাবতলী, কাহালু, শেরপুর ও সোনাতলা উপজেলার কিছু অংশে বড় পরিসরে শাকসবজির চাষ হয়। সাম্প্রতিক সময়ে চাষিরা সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ায় তাঁরা শীতের আগাম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। শীতের আগেই বাজারে বিক্রি করে বেশি টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে এখন চাষিরা জমিতে শীতকালীন শাকসবজির চারা বপন ও পরিচর্জার কাজ করে যাচ্ছেন। বগুড়ায় যেসব শাকসবজি চাষ হয় সেগুলো হলো আগাম আলু, মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ঢেঁড়স, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক ও পেঁয়াজ।

শিবগঞ্জের মোকামতলা, কাশিপুর, টেপাগাড়ি, মুরাদপুর, পার টেপাগাড়ি, পার আচলাই, অভিরামপুর, বগুড়া সদরের গোকুল, ঠেঙ্গামারা, নুলগোলা, নামুজা, পীরগাছা, রাজাপুর, সাবগ্রাম, গাবতলীর নারুয়ামালা, তরণীহাট, লাঠিগঞ্জ, দুর্গাহাটাসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা মেতেছেন শীতকালীন সবজি চাষে। বগুড়ার খুচরা বাজারে নতুন সবজির মধ্যে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, শিম ৬০-৮০ টাকা, ফুলকপি ৮০-১০০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৬০ টাকা, পালং শাক ৪০-৬০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।

এদিকে বগুড়ার পাইকারি বাজার মহাস্থান, নয়মাইল, মোকামতলা, চণ্ডিহারা, দশমাইলসহ বিভিন্ন বাজারের সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।

মাটিডালি এলাকার সবজি চাষি নজরুল ইসলাম জানান, শীতের আমেজ শুরু হয়েছে সে কারণে শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদ করছি। পল্লীমঙ্গল এলাকার চাষি খলিলুর রহমান বলেন, শীতের আগেই শাকসবজি জমিতে লাগিয়েছিলাম। সেগুলো এখন বাজারে বিক্রি করছি। আগাম শীতকালীন সবজি বিক্রি করে ভালো লাভ হচ্ছে। মহাস্থান হাটের পাইকারি ক্রেতা আফজাল হোসেন জানান, এখান থেকে এসব শাকসবজি কিনে ট্রাকযোগে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বাজারগুলোতে পাইকারি বিক্রি করে থাকি।

বগুড়া সদরের কালিবালা গ্রামের চাষি হামিদ আলী বলেন, যেকোনো সবজিই যদি মৌসুমের শুরুতেই বাজারে তোলা যায়, তবে তার দাম যেমন বেশি পাওয়া যায়, তেমনি ক্রেতাদের কাছে তার চাহিদাও থাকে ব্যাপক। সে চিন্তা মাথায় রেখেই তিনি এবার জমিতে ফুলকপি চাষ করছেন।

শাজাহানপুরের মাদলা এলাকার কৃষক আমিরুল হোসেন তাঁর জমিতে বেগুনের চারা উৎপাদন করেছেন। জমিতে বিশেষভাবে ছাউনি দিয়ে তিনি এ চারা জন্মান। তিনি জানান, শীতকালে যাঁরা আগাম বেগুন উৎপাদন করতে চান, তাঁরা তাঁর কাছ থেকে এ চারা কিনে নেবেন।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার ১২ উপজেলায় প্রায় সারা বছরই সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় সদর, সারিয়াকান্দি, ধুনট, সোনাতলা, আদমদীঘি, শেরপুর ও শাহজাহানপুরে। বর্তমানে জেলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৮ টন ধরে প্রায় এক লাখ টন সবজি উৎপাদনের আশা করছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তারা। বগুড়ার শেরপুরের আব্দুল বারেক নামের এক কৃষক জানান, উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়। এখানে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে। শিম, মুলা, পালং শাক চাষ হয়েছে। তিনি আরো জানান, শেরপুরের হাটবাজারে পালং শাক বিক্রি শুরু হয়েছে। ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে পালং শাক পাওয়া যাচ্ছে। মুলা শাক বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকায়।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক চণ্ডিদাস কুণ্ডু বলেন, জেলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে। দিন যাচ্ছে আর আগাম জাতের সবজি চাষ বাড়ছে। প্রতি হেক্টরে ১৮ টন ফলন ধরা হয়েছে। গত বছর সবজি আবাদে রেকর্ড করেছিল বগুড়ার চাষিরা। ভালো ফলনের আশায় এবারও সবজি চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

মাঠে মাঠে সবুজ হাসি
রাজশাহীর মোহনপুরের নন্দনপুরের চাষিরা উৎপাদিত মুলা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত। ছবি : কালের কণ্ঠ

রাজশাহী

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী

শীতের সবজিতে মেতেছেন রাজশাহীর কৃষকরা। এরই মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতের প্রায় সব ধরনের আগাম সবজি। এর মধ্যে রয়েছে মুলা, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, ওলকপি, বরবটি, গাজরসহ নানা ধরনের সবজি। বাজারে নতুন এসব সবজির দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্র মতে, এবার এরই মধ্যে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে শীতের আগাম সবজি চাষ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার ১৩-১৪ হাজার হেক্টর জমিতে শীতের সবজি চাষ হবে। গত বছরও প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে শীতের সবজি চাষ করা হয়েছিল।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছরই রাজশাহীতে আগাম সবজি চাষ করা হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আবার দাম ভালো পাওয়ায় সবজি চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন।

পবার বড়গাছী গ্রামের সবজি চাষি আজমুল হোসেন জানান, তিনি প্রায় চার বিঘা জমিতে এবার মুলা, শিম ও ফুলকপির চাষ করেছেন।

১৫ দিন ধরে এসব সবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি ৫০ কেজি মুলার একটি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৮-১৯ শ টাকা দরে। সেই হিসাবে প্রতি কেজি মুলার দাম কৃষকরাই পাচ্ছেন অন্তত ৩৬ টাকা করে। বাজারে সেই মুলা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা দরে। প্রতি মণ শিম বিক্রি করেন কৃষকরা ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে। আবার সেই শিম বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে।

দুর্গাপুরের কানপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুস সোবহান জানান, তিনি প্রায় দুই বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। এরই মধ্যে ফুলকপি উঠতে শুরু করেছে। প্রতি মণ ফুলকপি তিনি পাইকারি বিক্রি করে দাম পাচ্ছেন অন্তত ১৫ শ টাকা করে। উপজেলার ব্রহ্মপুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন।

কপিগুলো এখনো বড় আকার লাভ করেনি। তবে ছোট আকারের (২৫০ গ্রাম) একটি কপিই বাজারে অন্তত ১০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে লাগানো ওই কপিগুলো বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন তিনি।

অন্যদিকে জেলার গোদাগাড়ীতে এবারও আগাম টমেটো চাষ করেছেন কয়েক শ কৃষক। স্বাভাবিক সময়ের টমেটো চাষের পাশাপাশি এ উপজেলার কিছু কৃষক প্রতিবারই আগাম টমেটো চাষ করে থাকেন। তাঁদের টমেটোগুলো এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে। বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা দরে। সেটি খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে।

গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ি এলাকার টমেটো চাষি মানিক মোহাম্মদ বলেন, আগাম টমেটো চাষ করলে লাভবান হওয়া যায়। তবে টমেটোর চারা রোপণের সময় পুরোদমে বর্ষা থাকে বলে ওই সময় অনেকটা ঝুঁকি থাকে। সেই ঝুঁকি পার করতে পারলে আগাম টমেটো চাষ করে ভালো আয় করা যায়। তিনি প্রায় চার বিঘা জমিতে শীতের আগাম টমেটো চাষ করেছেন। এগুলো বিক্রি করে অন্তত তিন লাখ টাকা আয় হবে বলেও আশা করেন তিনি। তবে আর কয়েক দিন পর থেকেই বাজারে স্বাভাবিক সময়ের টমেটো উঠতে শুরু করলে তখন দামও কমে যাবে। এর আগেই আগাম টমেটো চাষিরা লাভবান হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন আরেক কৃষক মনিরুল ইসলাম।

অন্যদিকে জেলার পবা, দুর্গাপুর, বাগমারা, মোহনপুর, পুঠিয়াসহ অন্যান্য উপজেলায়ও শীতের সবজি গাজর, ওলকপি, বরবটির চাষ হয়েছে অনেক। বাজারে বর্তমানে বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে। কয়েক দিন আগেও এ বরবটি ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আর এক কেজি ওলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে। সে ক্ষেত্রে এসব ফসল চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।