ঢাকা ১১:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরঞ্জ নিকলী কবরস্থানে ঝাঁকে-ঝাঁকে অতিথি পাখির মায়াবী ডানায় মানুষের মিতালি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:০৭:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জানুয়ারী ২০১৯
  • ৩৯৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীত মৌসুমে অতিথি পাখির এক মিলন মেলায় পরণিত হয়। ঝাঁকে-ঝাঁকে অতিথি পাখি উড়ে নয়নাভিরাম সৌর্ন্দয বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে নিকলীর নয়াহাটি ও পুকুরপাড় দুই গ্রামের মাঝে অবস্থিত পশ্চিম কবরস্থান। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত সেখানে থাকে অতিথি পাখির কলতান। গোধূলির রক্তিম রঙ ডানায় মেখে কলকাকলি করে নীড়ে ফিরছে পানকৌড়ি ও বক। দিনের ক্লান্তি শেষে দল বেঁধে ফেরে কিশোরঞ্জের নিকলী পশ্চিম কবরস্থানে।

সন্ধ্যা থেকে ভোর অবধি গ্রাম দু’টি পাখির কলতানে মুখর থাকে। মানুষ আর পাখপাখালির এমন মিলেমিশে বসবাস সচরাচর চোখে পড়ে না। নিজেদের কিছু অসুবিধা মেনে নিয়ে এলাকার লোকজন মিলে গড়ে তুলেছেন পাখিদের এই অভয়াশ্রম। নিকলীতে পাখিদের সুখের এই আবাস গড়ে উঠেছে একযুগ আগে। এক সময় আর দশটা গ্রামের মতোই দুই-একটা পাখি আসত এখানে। কিন্তু হঠাৎ কেন জানি পাখিদের মনে ধরে গেল এই জায়গাটি।

কথা হয় পুকুরপাড় গ্রামের মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি কবরস্থান ও মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি জানান, বছর দশ-বার বছর আগে এই কবরস্থানের কয়েকটি কড়ইগাছে কিছু পানকৌড়ি ও সাদা বক এসে বসে। এরা সেই গাছে বাসা বানায়। সেই যে পাখিরা এলো, আর গাছ ছেড়ে যায়নি। দিনে দিনে পাখির সংখ্যা বেড়েছে।বিশেষ করে শীতে বাড়ে বহুগুণ। এখন অবশ্য এখানে পাখির বৈচিত্র্যের অভাব নেই। পানকৌড়ি, সাদা বক ছাড়াও শামুকভাঙা, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, চড়ুই, টুনটুনিসহ অচেনা অনেক পাখি এখন আসে। তবে ছোট পাখিগুলোকে পাতার আড়ালে কোনো রকমে গা বাঁচিয়ে থাকতে হয়। কারণ, দাপট সেই পানকৌড়ি ও বকেরই। কবরস্থানের আটটি কড়ইগাছে পাখিদের স্থান সংকুলান হয় না। তাই আশপাশের বিভিন্ন বাড়ির আম, জাম, নারকেল গাছেও ছড়িয়ে পড়েছে পাখিরা।

নয়াহাটি গ্রামের শাহাবউদ্দিন জানান, শুধু গাছে নয়, ঝড়-তুফান হলে পাখিগুলো বসতঘরে ঢুকে পড়ে। চৌকির ওপর-নিচও তারা দখল করে নেয়। তাড়িয়ে দিলে আবার ফিরে আসে। দামপাড়া কারার মাহতাব উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন জানান, নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারী মাসে পাখি বেশি থাকে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে শীত বেশি হয়। তখন বকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে এত পাখি! না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। গ্রাম দু’টি থেকে অল্প দূরেই হাওড়। হাওড়ের জলাশয়গুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়, তাই এখানে হাজার হাজার পাখির দেখা মেলে। কেউ বিরক্ত না করায় পাখির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কবরস্থান ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আসমত আলী বলেন, এখানে পাখিকে কেউ অত্যাচার করলে বা শিকার করলে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে বলে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছামৎ শাহিনা আক্তার বলেন, এলাকার লোকজনের মধ্যে পাখির জন্য মমতার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে এলাকায় পাখি শিকার নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ এই মর্মে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হবে। পাখি শিকার প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধিদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। শীতরে অতিথি পাখির নৈঃর্স্বগকি সৌর্ন্দযে আপ্লুত এখানকার স্থানীয়রা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

কিশোরঞ্জ নিকলী কবরস্থানে ঝাঁকে-ঝাঁকে অতিথি পাখির মায়াবী ডানায় মানুষের মিতালি

আপডেট টাইম : ০৩:০৭:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জানুয়ারী ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীত মৌসুমে অতিথি পাখির এক মিলন মেলায় পরণিত হয়। ঝাঁকে-ঝাঁকে অতিথি পাখি উড়ে নয়নাভিরাম সৌর্ন্দয বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে নিকলীর নয়াহাটি ও পুকুরপাড় দুই গ্রামের মাঝে অবস্থিত পশ্চিম কবরস্থান। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত সেখানে থাকে অতিথি পাখির কলতান। গোধূলির রক্তিম রঙ ডানায় মেখে কলকাকলি করে নীড়ে ফিরছে পানকৌড়ি ও বক। দিনের ক্লান্তি শেষে দল বেঁধে ফেরে কিশোরঞ্জের নিকলী পশ্চিম কবরস্থানে।

সন্ধ্যা থেকে ভোর অবধি গ্রাম দু’টি পাখির কলতানে মুখর থাকে। মানুষ আর পাখপাখালির এমন মিলেমিশে বসবাস সচরাচর চোখে পড়ে না। নিজেদের কিছু অসুবিধা মেনে নিয়ে এলাকার লোকজন মিলে গড়ে তুলেছেন পাখিদের এই অভয়াশ্রম। নিকলীতে পাখিদের সুখের এই আবাস গড়ে উঠেছে একযুগ আগে। এক সময় আর দশটা গ্রামের মতোই দুই-একটা পাখি আসত এখানে। কিন্তু হঠাৎ কেন জানি পাখিদের মনে ধরে গেল এই জায়গাটি।

কথা হয় পুকুরপাড় গ্রামের মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি কবরস্থান ও মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি জানান, বছর দশ-বার বছর আগে এই কবরস্থানের কয়েকটি কড়ইগাছে কিছু পানকৌড়ি ও সাদা বক এসে বসে। এরা সেই গাছে বাসা বানায়। সেই যে পাখিরা এলো, আর গাছ ছেড়ে যায়নি। দিনে দিনে পাখির সংখ্যা বেড়েছে।বিশেষ করে শীতে বাড়ে বহুগুণ। এখন অবশ্য এখানে পাখির বৈচিত্র্যের অভাব নেই। পানকৌড়ি, সাদা বক ছাড়াও শামুকভাঙা, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, চড়ুই, টুনটুনিসহ অচেনা অনেক পাখি এখন আসে। তবে ছোট পাখিগুলোকে পাতার আড়ালে কোনো রকমে গা বাঁচিয়ে থাকতে হয়। কারণ, দাপট সেই পানকৌড়ি ও বকেরই। কবরস্থানের আটটি কড়ইগাছে পাখিদের স্থান সংকুলান হয় না। তাই আশপাশের বিভিন্ন বাড়ির আম, জাম, নারকেল গাছেও ছড়িয়ে পড়েছে পাখিরা।

নয়াহাটি গ্রামের শাহাবউদ্দিন জানান, শুধু গাছে নয়, ঝড়-তুফান হলে পাখিগুলো বসতঘরে ঢুকে পড়ে। চৌকির ওপর-নিচও তারা দখল করে নেয়। তাড়িয়ে দিলে আবার ফিরে আসে। দামপাড়া কারার মাহতাব উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন জানান, নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারী মাসে পাখি বেশি থাকে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে শীত বেশি হয়। তখন বকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে এত পাখি! না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। গ্রাম দু’টি থেকে অল্প দূরেই হাওড়। হাওড়ের জলাশয়গুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়, তাই এখানে হাজার হাজার পাখির দেখা মেলে। কেউ বিরক্ত না করায় পাখির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কবরস্থান ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. আসমত আলী বলেন, এখানে পাখিকে কেউ অত্যাচার করলে বা শিকার করলে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হবে বলে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছামৎ শাহিনা আক্তার বলেন, এলাকার লোকজনের মধ্যে পাখির জন্য মমতার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে এলাকায় পাখি শিকার নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ এই মর্মে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হবে। পাখি শিকার প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধিদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। শীতরে অতিথি পাখির নৈঃর্স্বগকি সৌর্ন্দযে আপ্লুত এখানকার স্থানীয়রা।