হাওর বার্তা ডেস্কঃ নব্বইজুড়ে ছিল তাদের শাসন। তাদের অভিনীত ছবি সিনেমা হলে পায়রা উড়িয়েছে। তাদের মুখরোচক সংবাদে সিনেম্যাগাজিনগুলোর কাটতি বেড়েছে। বিতর্কের আগুনে বারবার ঘি হয়েছেন তারাই। মৌসুমী, শাবনূর ও পপি-দুই দশকের বেশি সময় ধরে রেখেছেন দর্শকদের মনোযোগ। এখনো সিনেমাপ্রেমীদের আগ্রহের সবচেয়ে নরম জায়গায় তাদের অবস্থান। তাদের প্রতিপত্তির সেই নব্বই দশক বিস্মৃতিতে হারালেও এখনো তারা দর্শকদের প্রিয় মুখ।
দর্শক পছন্দের তালিকায় থাকলেও বয়স তাদের নায়িকাদের ইঁদুর দৌড় থেকে মুক্তি দিয়েছে। তারা এখন প্রতিযোগিতার মূলমঞ্চ থেকে দূরে। কিন্তু কখনোই তারা পাপদপ্রদীপের আলো থেকে সরে যাননি। এখনো তাদের নিয়ে আলোচনা ওঠে ফিল্মের আড্ডায়। নির্মাতাদের চিত্রনাট্য দাবি করে তাদের মতো শক্তিমান অভিনেত্রীদের উপস্থিতি। সিনেমার উৎসব আয়োজন এখনো তাদের ছাড়া অপূর্ণ।
নানা অনুষ্ঠানে তিন নায়িকার দাপুটে পদচারণা থাকলেও রুপালি পর্দায় তাদের সেই তেজোদীপ্ত উপস্থাপনা নেই। বিগত ২০১৮ সালের কথাই বলা যাক। শাবনূর ও পপিকে সিনেমা হলের পর্দায় দেখতে পাননি দর্শকরা। দুজনের অভিনীত কোন ছবি মুক্তি পায়নি। শাবনূর একেবারেই ক্যামেরার সামনে দাঁড়াচ্ছেন না। একটা সময় যে শাবনূরের ঘর-বাহির বলতে ছিল একটাই জায়গা- এফডিসি, সেই প্রিয় প্রাঙ্গণেও শাবনূরের কাজের প্রয়োজনে পা পড়ে না।
পপি টুকটাক অভিনয় করছেন। গত বছর টিকেটঘরে তার জন্য দর্শকরা দাঁড়াতে পারেননি ঠিকই, কিন্তু পপি এফডিসিতে দর্শকদের জন্যই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। ‘সাহসী যোদ্ধা’ এবং ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ নামে দুটি ছবির কাজ করেছেন পপি। ছবিগুলো চলতি বছর দর্শকদের আনন্দ দিতে আসতে পারে পর্দায়। আরো কিছু ছবিতেও তার কাজ করার কথা শোনা যাচ্ছে। যার মধ্যে বুলবুল বিশ্বাস পরিচালিত ‘কাটপিস’ উল্লেখযোগ্য।
শাবনূর ও পপির তুলনায় মৌসুমী অনেকটা ব্যস্ত। অনলাইন পোর্টাল খুলেছেন। বিজ্ঞাপনে কাজ করছেন। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। তবে তার আসল জায়গা, বড় পর্দা, সেখানে তার উপস্থিতি স্বল্প। গত বছর তার অভিনীত ‘লিডার’ ছবিটি সীমিত পরিসরে মুক্তি পেয়েছে। শুটিং অসমাপ্ত অবস্থায় ছবিটি মুক্তি পেয়েছে, এই অভিযোগ তুলে মৌসুমী ও তার স্বামী ওমর সানী ছবিটিকে বয়কট করেন মুক্তির আগে। যা মৌসুমীর ভক্তদের বিব্রত করেছে। মৌসুমী অভিনীত আরো একটি ছবি ‘রাত্রীর যাত্রী’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ডিসেম্বরে। কিন্তু ছবিটি পিছিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চলে গেছে। ‘লিডার’ কিংবা ‘রাত্রির যাত্রী’ দুটি ছবিতেই মৌসুমী নাম ভ‚মিকায় অভিনয় করেছেন। ক্যারিয়ারের এই প্রান্তে এসে এখনো নির্মাতাদের আস্তার পুরনো জায়গায় মৌসুমী একটি নির্ভরযোগ্য নাম, সেটা তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
সিনেমায় চলছে মন্দা সময়। বিনিয়োগ কমে গেছে। ছবি নির্মাণের সংখ্যা কমে গেছে। মৌসুমী, শাবনূর ও পপির কাছেও এখন আগের মতো গণ্ডায় গণ্ডায় ছবির প্রস্তাব যাচ্ছে না। নিজেদের অভিনেত্রী সত্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে মৌসুমী ও পপি নাটক-টেলিফিল্মে অভিনয় করছেন। পপি তো গত বছর ওয়েব সিরিজেও নাম লিখিয়েছেন। শাবনূর এখনো ছোটপর্দায় মুখ না দেখানোর সিদ্ধান্তে অনড় আছেন।
তিন নায়িকার ব্যস্ততা যেমনই হোক না কেন, কাজের পরিমাণ হোক কম বা বেশি, এখনো গ্ল্যামার জগতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় নাম মৌসুমী, শাবনূর ও পপি। মুমূর্ষু সিনেমার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হয়ে চিত্রাকাশে জ্বলজ্বল করছেন এই তিন তারকাই!