গোমতী নদীতে ভেসে ভেসে দেখে আসুন ‘ছবিমুড়া’

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেবতামুড়া বা দেওতামুড়া পাহাড়শ্রেণি বিস্তৃত রয়েছে উদয়পুর ও অমরপুরের মধ্যে (দুটি জায়গার মধ্যে দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার)। গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত এই দেবতামুড়া পাহাড়ের একাংশে পাহাড়ের গায়ে খোদাই করে সৃষ্টি করা হয়েছে হিন্দু দেবদেবীর প্রচুর মূর্তি। নদীর পাড় থেকে উঠে যাওয়া, কোথাও ৬০-৭০ ডিগ্রি, কোথাও বা ৯০ ডিগ্রি কোণে খাড়া উঠে যাওয়া পাহাড়ের দেওয়ালে সুনিপুণ দক্ষতায় তৈরি এই সব শিল্পকর্ম এক্কেবারে যেন ছবির মতোই। আর তাই বোধ হয়, দেবতামুড়া পাহাড়ের এই অংশের নামও হয়েছে ছবিমুড়া।

প্রামাণ্য তথ্য অনুযায়ী, ১৫-১৬শো শতাব্দীর সময়কালেই নির্মাণ হয়েছিল এই সব শিল্পকর্ম। এখানকার বিশেষত্ব যেটা, গোমতী নদীর জলে নৌকা বা মোটরবোটে ভেসেই দেখতে হবে এই সব অনুপম সৃষ্টি। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, গণেশ, কার্তিক, বিশ্বকর্মাসহ আরও অজস্র দেবদেবী ও পশুপাখির মূর্তি খোদাই করা রয়েছে পাহাড়ের উঁচু প্রাচীরে। মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া গোমতী নদীর পানিতে এই নৌকাযাত্রা (আধ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে এক দিকে যেতে) উপভোগ্য হবে প্রতিটি মুহূর্তে। আমাজনের ঘন জঙ্গলে ঢাকা পরিবেশে নদীতে নৌকা ভ্রমণের অসাধারণ দৃশ্যের সঙ্গে অনেকটাই সাদৃশ্য আছে ছবিমুড়ার এই জলযাত্রার। নিঃস্তব্ধ পরিবেশে বিচিত্র পাখির বৈচিত্র্যপূর্ণ সমাগমও দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

তবে এই জলযাত্রায় সব চেয়ে বেশি যেটা নজর কাড়বে তা হল দশভুজা দুর্গার মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তিটি। প্রায় ২০ ফুট উঁচু বিশাল এই দেবীমূর্তিকে স্থানীয় উপজাতিরা অবশ্য ‘চক্রাকমা’ নামেই মানে। দেবীমূর্তির চুলের জায়গায় জড়ানো আছে অসংখ্য সাপ, আর পদতলে মহিষাসুরের পাশে রয়েছেন রুদ্রভৈরব। অসম্ভব সুন্দর, অনবদ্য এই প্রাচীন মূর্তিটি যেভাবে খাড়া পাহাড়ের প্যানেলে খোদিত হয়েছে, সেই দৃশ্য পর্যটককে অভিভূত করবে।

এই জলযাত্রায় দু’টি জায়গায় নামা যায় (বর্ষাকালে অবশ্যই নয়) পানি কম থাকলে। এক জায়গায় ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ৪০০-৪৫০ মিটার দুর্গম পথে, হাঁটুজল মাড়িয়ে পায়ে হেঁটে গেলে দেখা মিলবে ‘ছড়া’ দেবতার। স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইটের সংমিশ্রণে তৈরি হওয়া চমৎকার এক প্রাকৃতিক স্থাপত্য এখানে উপজাতিদের কাছে পূজিত হন ‘ছড়া’ দেবতা রূপে। আর এক জায়গায় বোট থেকে নেমে দুর্গম হাঁটাপথে দেখে নেওয়া যায় এক ঝর্না ও গুহাও। পায়ে হাঁটা পুরো পথটাই গেছে ঝরনার পানিতে সিক্ত পাথরের উপর দিয়ে। ছবিমুড়া ঘাট থেকেই বিভিন্ন মোটরবোট (ছোট-বড়) বা নৌকা ছাড়ে এই সব ঘুরিয়ে দেখানোর জন্যে। মোটামুটি ভাবে এক ঘণ্টার এই জলযাত্রার জন্য ভাড়া ৭০০ টাকা ৫ জন সওয়ারির ছোট নৌকার ক্ষেত্রে। আর ১২, ১৮ কিংবা ২০ জনের মোটরবোটের খরচ পড়বে ১০০ টাকা মাথাপিছু।

ছবিমুড়া ঘাটে জলখাবারের দোকান রয়েছে, সেখানেও পর্যটকেরা খাওয়াদাওয়া সারতে পারেন। পাশেই রয়েছে একটি ‘ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার’, যেখানে ছবিসহ এখানকার বিভিন্ন দ্রষ্টব্য বর্ণিত আছে।

উদয়পুর থেকে অমরপুরের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার, অমরপুর থেকে ছবিমুড়ার দূরত্ব ৮ কিলোমিটার, আর আগরতলা থেকে দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার। পৌষ-সংক্রান্তির সময় প্রতি বছর ‘ছবিমুড়া উৎসব’ হয় এখানে। উপজাতিদের নাচ-গান সমৃদ্ধ সেই রংবাহারি উৎসব স্থানীয় কৃষ্টি, ঐতিহ্য ইত্যাদি সম্পর্কে একটা আকর্ষণীয় ছবি তুলে ধরে পর্যটকদের সামনে।

যেখানে থাকবেন:
ছবিমুড়া দেখতে হলে মেলাঘরে ‘সাগরমহল ট্যুরিস্ট লজ’ (এসি দ্বিশয্যা ঘর ৭৫০-৯০০ টাকা), কিংবা উদয়পুরে ‘গোমতী যাত্রী নিবাস’-এ (এসি দ্বিশয্যা ঘর ৬০০-৮০০ টাকা) থেকেও দেখে নিতে পারেন। আর কাছাকাছি থাকতে চাইলে অমরপুরে ‘সাগরিকা পর্যটন নিবাস’ (নন এসি দ্বিশয্যা ঘর ৪০০ টাকা, এসি দ্বিশয্যা ঘর ৫০০ টাকা)।

যেভাবে যাবেন:

আগরতলা থেকে গাড়ি ভাড়া করেই ঘুরে নিতে হবে এই সব জায়গা। ছবিমুড়া দেখে ডুম্বুর-ঊনকোটি-জম্পুই এই ক্রমানুসারে দেখে নিতে পারেন পর্যটন কেন্দ্রগুলো। প্রতিদিন গাড়িভাড়া পড়বে ছোট গাড়ির ক্ষেত্রে (ইন্ডিকা, ওয়াগন আর, ইকো ইত্যাদি) ২২০০-২৫০০ টাকা। আর বড় গাড়ির ক্ষেত্রে (স্করপিও, বোলেরো, জাইলো ইত্যাদি) ৩০০০-৩৫০০ টাকা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর