হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগের জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ভালো না থাকায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও জনমনে অনেক শঙ্কা ও সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে গতকাল নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের আগে ও ভোটগ্রহণের দিন বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও মোটা দাগে সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচন।
ভোটারদের অংশগ্রহণও ছিল সন্তোষজনক এবং উৎসবমুখর। তা সত্ত্বেও গতকাল বিকেল পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও চোরাগোপ্তা হামলায় একজন আনসার সদস্যসহ প্রাণ গেছে ১৮ জনের। এর মধ্যে ভোটের দিন ও আগের রাতে মারা গেছেন ১২ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। নিহতদের মধ্যে ১৫ জনই আওয়ামী লীগ বা এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী বলে দাবি করা হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যেকোনো নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা থাকেই। বরং বলা যায়, অতীতের যেকোনো সাধারণ নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনে হতাহতের ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তা সত্ত্বেও এই মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।
সব দল অংশ নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও এবারের নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাও জমে উঠেছিল। ভোটকেন্দ্র গুলোতে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতিও ছিল। তা সত্ত্বেও বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রচুর অভিযোগ করা হয়েছে। প্রথম থেকেই তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার অভিযোগ করেছে। ভোটের দিন কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া, ভোট প্রদানে বাধা প্রদানসহ আরো অনেক অভিযোগ করেছে।
কোনো কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ থেকেও এমন অভিযোগ করা হয়েছে। কিছু প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণাও দিয়েছেন। আবার নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। অনেক নির্বাচন পর্যবেক্ষকও মনে করছেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া মোটা দাগে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সন্তুষ্টির অভাব ছিল। এবারের নির্বাচনও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমরা আশা করি, এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ভাবমূর্তির সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে।
নব্বই সালের পর বাংলাদেশে এবারই প্রথম দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তা ছাড়া এবারই প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছে। সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া ইভিএমে ভোট দিয়ে মানুষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সাফল্য-ব্যর্থতার বিবেচনায় ভবিষ্যতেও হয়তো একই ধারা চলমান থাকবে।
৩০০ আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও একজন প্রার্থীর মৃত্যুতে একটি আসনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। রাতের মধ্যেই ২৯৯ আসনের বেসরকারি ফলাফল আমরা পেয়ে যাব এবং বলতে পারব কোন দল বা জোট আগামী পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হচ্ছে। যে দলই ক্ষমতায় আসুক, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, দেশে শান্তি বিরাজমান থাকুক, নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে সহিংসতায় যেন জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি না হয় এবং দেশে উন্নয়নের যে ধারা সূচিত হয়েছে, তা অব্যাহত রাখা হোক।