ঢাকা ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

ইসলামে দাওয়াত ইলাল্লাহ’র গুরুত্ব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৭:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮
  • ৩২৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ মুসলিমই দাওয়াহ তথা ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত নেই। সাধারনভাবে তারা চিন্তা করে, দাওয়াহ’র কাজের জন্য তাদের প্রচুর জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং পাশাপাশি তাদের বক্তব্য দেওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। এককথায়, দাওয়াহ’র কাজটি শুধু জ্ঞানী ও বাগ্মী লোকের কাজই বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। অনেকে এটিও চিন্তা করে, ইসলাম প্রচারের জন্য তাদের কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, তাফসীর সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর অনেক পুস্তক মুখস্ত করে রাখতে হবে।

নিশ্চিতভাবে, দাওয়াহ তথা ইসলাম প্রচারের জন্য ইসলামে এরকম কোন পূর্বশর্ত প্রদান করা হয়নি। জ্ঞান অবশ্যই ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে উত্তম সহায়ক এবং জ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিগণ ইসলামকে সকলের কাছে উত্তমভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, তবে ইসলাম প্রচারের জন্য সকলেরই যে সব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে ফেলতে হবে, এরূপ শর্ত কখনোই নির্ধারণ করা হয়নি।

গ্রন্থগত বিদ্যার চেয়েও ইসলাম অধিক গভীর এবং জীবনঘনিষ্ঠ জ্ঞান। ব্যক্তিগত জীবনে কুরআন ও হাদীসের জ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমেই মানুষ ইসলাম সম্পর্কে অধিক কার্যকর জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

ইসলামের প্রতিটি সদস্যের জন্যই উম্মাহর প্রতি এটি তার অন্যতম দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনের জন্য আমাদের তাফসীর, শরীয়াহ, মাসআলা-মাসায়েলের পুংখানুপুংখ জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। একজন ডাক্তার, ব্যবসায়ী, ছাত্র প্রভৃতি হওয়ার পাশাপাশি একজন মুসলিম দাওয়াহ তথা ইসলাম প্রচারের এই দায়িত্ব পালন করতে পারে। এর জন্য শুধু তার নিয়ত বা ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট।

দুনিয়ার পথভ্রষ্ট ব্যক্তিকে পথপ্রদর্শন করা আমাদের দায়িত্ব। তাদের অনেকেরই জন্য আমরা ইসলাম সম্পর্কে জানার একমাত্র উৎস। ইসলাম প্রচারের জন্য সবসময়ই যে ইসলাম সম্পর্কে কথা বলতে হবে, তার কোন প্রয়োজন নেই। রাসূল (সা.) এর মত উত্তম চরিত্র গঠনের মাধ্যমে আমরা মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে ধারণা প্রদান করতে পারি। কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী যদি আমরা আমাদের জীবন ও চরিত্রকে গঠন করতে পারি, তবে আমাদের এই চরিত্র শত কথার থেকেও ইসলাম সম্পর্কে অধিক বক্তব্য প্রদান করবে এবং মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি। মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার রাস্তায় হাঁটতে বের হয়ে দেখেন, এক বুড়ি অনেক বোঝা একত্রে নিয়ে মক্কা ছেড়ে অন্যত্র যাচ্ছে। এত বোঝা একত্রে নিয়ে বুড়ির পথ চলতে কষ্ট হওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করে রাসূল (সা.) তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তার কি সাহায্যের প্রয়োজন আছে কিনা। বুড়ি তখন তাকে উত্তর দিল, সে মক্কা ত্যাগ করে চলে যাচ্ছে, রাসূল (সা.) তার সাথে এই বোঝাগুলো বহন করে তার লোকদের কাছে তাকে পৌছে দেওয়ার মাধ্যমে তাকে সাহায্য করতে পারেন। রাসূল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করেন, কেন বুড়ি মক্কা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বুড়ি তখন তাকে উত্তর দিল, “তুমি কি মুহাম্মদের কথা শুননি? সে সকলের ধর্ম পরিবর্তন করে দিচ্ছে। নিজের ধর্ম রক্ষার জন্য তাই আমি মক্কা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।”

রাসূল (সা.) যখন বুড়িকে তার সাথীদের কাছে পৌছে দিলেন, তখন বুড়ির সাথীরা বুড়ির সাথে রাসূল (সা.) কে সনাক্ত করার পর বিস্মিত হল। বুড়িও তার সাথীদের কাছ থেকে রাসূল (সা.) কে চিনতে পেরে অবাক হল। তারা চিন্তা করলো, যার ভয়ে তারা পালিয়ে যাচ্ছিল, কতটা উন্নত চরিত্রের হলে তিনি তাদের সাহায্য করতে পারেন। তারা তখন সকলেই রাসূল (সা.) এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করলো।

রাসূল (সা.) এর উন্নত চরিত্রের কারনে এখানে একদল লোক ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেছে। রাসূল (সা.) তাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে একটি কথাও বলেননি। শুধু তাদের দিকে তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তার এই সহযোগিতাই তার প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ একদল লোককে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছে।

আমরা প্রত্যেকেই একেকজন ইসলামের পরিচয়বাহী দূত। আমরা যাই বলি বা করি না কেন, কোন কোন লোকের কাছে সেটাই ইসলামের রূপ। আমরা শুধু সামান্য সাহায্য বা হালকা সম্ভাষণ জানাতে পারি, কিন্তু এটির গভীরতর প্রভাব পড়তে পারে। আল্লাহ কিভাবে কাকে হেদায়ত করবেন, তা আমরা কখনোই জানতে পারি না।

আমাদের উচিত, কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমাদের জীবনকে গঠন ও পরিচালনা করা। কেননা, আমাদের বাস্তব জীবনের প্রেক্ষিতেই হয়তো একজন দিকভ্রান্ত লোক পথের নিশানা পেতে পারে। যা আমাদের জন্যও সৌভাগ্যকর একটি বিষয়।

রাসূল (সা.) এর ভাষ্যানুযায়ী, “যদি তোমার কারনে আল্লাহ একজন মানুষকে পথের সন্ধান পেতে সক্ষম করেন, তবে পৃথিবী ও তার মধ্যকার সকল সম্পদের তুলনায় তোমার জন্য এটি উত্তম।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একসাথে সাকিব-তামিম

ইসলামে দাওয়াত ইলাল্লাহ’র গুরুত্ব

আপডেট টাইম : ০৪:৪৭:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ মুসলিমই দাওয়াহ তথা ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত নেই। সাধারনভাবে তারা চিন্তা করে, দাওয়াহ’র কাজের জন্য তাদের প্রচুর জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং পাশাপাশি তাদের বক্তব্য দেওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। এককথায়, দাওয়াহ’র কাজটি শুধু জ্ঞানী ও বাগ্মী লোকের কাজই বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। অনেকে এটিও চিন্তা করে, ইসলাম প্রচারের জন্য তাদের কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, তাফসীর সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর অনেক পুস্তক মুখস্ত করে রাখতে হবে।

নিশ্চিতভাবে, দাওয়াহ তথা ইসলাম প্রচারের জন্য ইসলামে এরকম কোন পূর্বশর্ত প্রদান করা হয়নি। জ্ঞান অবশ্যই ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে উত্তম সহায়ক এবং জ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিগণ ইসলামকে সকলের কাছে উত্তমভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, তবে ইসলাম প্রচারের জন্য সকলেরই যে সব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে ফেলতে হবে, এরূপ শর্ত কখনোই নির্ধারণ করা হয়নি।

গ্রন্থগত বিদ্যার চেয়েও ইসলাম অধিক গভীর এবং জীবনঘনিষ্ঠ জ্ঞান। ব্যক্তিগত জীবনে কুরআন ও হাদীসের জ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমেই মানুষ ইসলাম সম্পর্কে অধিক কার্যকর জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

ইসলামের প্রতিটি সদস্যের জন্যই উম্মাহর প্রতি এটি তার অন্যতম দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনের জন্য আমাদের তাফসীর, শরীয়াহ, মাসআলা-মাসায়েলের পুংখানুপুংখ জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। একজন ডাক্তার, ব্যবসায়ী, ছাত্র প্রভৃতি হওয়ার পাশাপাশি একজন মুসলিম দাওয়াহ তথা ইসলাম প্রচারের এই দায়িত্ব পালন করতে পারে। এর জন্য শুধু তার নিয়ত বা ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট।

দুনিয়ার পথভ্রষ্ট ব্যক্তিকে পথপ্রদর্শন করা আমাদের দায়িত্ব। তাদের অনেকেরই জন্য আমরা ইসলাম সম্পর্কে জানার একমাত্র উৎস। ইসলাম প্রচারের জন্য সবসময়ই যে ইসলাম সম্পর্কে কথা বলতে হবে, তার কোন প্রয়োজন নেই। রাসূল (সা.) এর মত উত্তম চরিত্র গঠনের মাধ্যমে আমরা মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে ধারণা প্রদান করতে পারি। কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী যদি আমরা আমাদের জীবন ও চরিত্রকে গঠন করতে পারি, তবে আমাদের এই চরিত্র শত কথার থেকেও ইসলাম সম্পর্কে অধিক বক্তব্য প্রদান করবে এবং মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করছি। মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার রাস্তায় হাঁটতে বের হয়ে দেখেন, এক বুড়ি অনেক বোঝা একত্রে নিয়ে মক্কা ছেড়ে অন্যত্র যাচ্ছে। এত বোঝা একত্রে নিয়ে বুড়ির পথ চলতে কষ্ট হওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করে রাসূল (সা.) তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তার কি সাহায্যের প্রয়োজন আছে কিনা। বুড়ি তখন তাকে উত্তর দিল, সে মক্কা ত্যাগ করে চলে যাচ্ছে, রাসূল (সা.) তার সাথে এই বোঝাগুলো বহন করে তার লোকদের কাছে তাকে পৌছে দেওয়ার মাধ্যমে তাকে সাহায্য করতে পারেন। রাসূল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করেন, কেন বুড়ি মক্কা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বুড়ি তখন তাকে উত্তর দিল, “তুমি কি মুহাম্মদের কথা শুননি? সে সকলের ধর্ম পরিবর্তন করে দিচ্ছে। নিজের ধর্ম রক্ষার জন্য তাই আমি মক্কা ছেড়ে চলে যাচ্ছি।”

রাসূল (সা.) যখন বুড়িকে তার সাথীদের কাছে পৌছে দিলেন, তখন বুড়ির সাথীরা বুড়ির সাথে রাসূল (সা.) কে সনাক্ত করার পর বিস্মিত হল। বুড়িও তার সাথীদের কাছ থেকে রাসূল (সা.) কে চিনতে পেরে অবাক হল। তারা চিন্তা করলো, যার ভয়ে তারা পালিয়ে যাচ্ছিল, কতটা উন্নত চরিত্রের হলে তিনি তাদের সাহায্য করতে পারেন। তারা তখন সকলেই রাসূল (সা.) এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করলো।

রাসূল (সা.) এর উন্নত চরিত্রের কারনে এখানে একদল লোক ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেছে। রাসূল (সা.) তাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে একটি কথাও বলেননি। শুধু তাদের দিকে তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তার এই সহযোগিতাই তার প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ একদল লোককে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছে।

আমরা প্রত্যেকেই একেকজন ইসলামের পরিচয়বাহী দূত। আমরা যাই বলি বা করি না কেন, কোন কোন লোকের কাছে সেটাই ইসলামের রূপ। আমরা শুধু সামান্য সাহায্য বা হালকা সম্ভাষণ জানাতে পারি, কিন্তু এটির গভীরতর প্রভাব পড়তে পারে। আল্লাহ কিভাবে কাকে হেদায়ত করবেন, তা আমরা কখনোই জানতে পারি না।

আমাদের উচিত, কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমাদের জীবনকে গঠন ও পরিচালনা করা। কেননা, আমাদের বাস্তব জীবনের প্রেক্ষিতেই হয়তো একজন দিকভ্রান্ত লোক পথের নিশানা পেতে পারে। যা আমাদের জন্যও সৌভাগ্যকর একটি বিষয়।

রাসূল (সা.) এর ভাষ্যানুযায়ী, “যদি তোমার কারনে আল্লাহ একজন মানুষকে পথের সন্ধান পেতে সক্ষম করেন, তবে পৃথিবী ও তার মধ্যকার সকল সম্পদের তুলনায় তোমার জন্য এটি উত্তম।”