ঢাকা ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাবিতে অতিথি পাখির মিলনমেলা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৪:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮
  • ৩৯৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঋতুর পালাক্রমে শীত ঘনিয়ে আসছে। এরই মধ্যে একটু-আধটু কুয়াশার চাদর পরে শীত নামতে শুরু করেছে। প্রকৃতির যখন এই অবস্থা, তখনই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাজছে নতুন রূপে। সকালের বিন্দু বিন্দু শিশির ভেজা ঘাস আর সূর্য্যরে উঁকি দেওয়ার মুহূর্তে ঘাসের ওপর শিশিরের ফোঁটা যে কাউকেই মোহনীয় করে তোলে।

নৈস্বর্গিক শোভামতি ও শিক্ষার্থীদের কলরব এবং পাখির কলতানে মুখোরিত প্রকৃতির এক সবুজ ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ষড়ঋতুর এই দেশে শীত উৎসবটা অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে জাবি ক্যাম্পাসে একটু বেশিই। কারণ, শীতের সময়ে যেখানে পাখির কিচির-মিচির আওয়াজের সঙ্গে বসবাসের দুর্লভ সুযোগ মেলে ক্যাম্পাসবাসীর। লাল শাপলার মাঝে দূর থেকে আসা বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির বাহারি খেলায় মেতে ওঠার দৃশ্যে লেকগুলো এখন জানান দিচ্ছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা সেই মনোরম পরিবেশ।

Image result for অতিথি পাখির মিলনমেলার ছবিশহরের ব্যস্ত জীবনের যান্ত্রিকতা আর ধুলাবালি থেকে মুক্ত এই ক্যাম্পাসটিতে পাখির ছোঁয়া পেতে প্রতিদিন শত-শত পাখিপ্রেমীরা ভিড় জমান। হাজারো অতিথি পাখির কলকাকলি, জলকেলী, খুনসুটি, পুরো ক্যাম্পাসের আকাশে মনের সুখে দলবেঁধে উড়ে বেড়ানো। এর সৌন্দর্য নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। লাল শাপলার মাঝে ধূসর রঙের হরেক প্রজাতির পাখি মেলে ধরেছে জাবি ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে।

সাধারণত হিমালয়ের উত্তরের দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপালে এই সময়টায় প্রচুর তুষারপাতের কারণে পাখিরা বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে আসা নাম না জানা এসব পাখিকে স্বাগত জানায় জাবি ক্যাম্পাস। শীত চলে গেলে তারাও চলে যায় তাদের আপন ঠিকানায়। তাই এসব অতিথিকে স্বাগত জানাতে নতুনরূপে সেজেছে লেকগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি লেক থাকলেও পাখি আসে মূলত চারটি লেকে। এ বছর এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রার ভবনের সামনের লেক ও ট্রান্সপোর্ট সংলগ্ন লেকেই দেশীয় সরালি নামের হাঁসজাতীয় পাখির দেখা মিলেছে। বাকি লেকগুলোতে এখনো পাখি আসতে শুরু করেনি। এ ছাড়া বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের লেকেও দেখতে পাবেন খুন সুটিতে ব্যস্ত অতিথি পাখিরা।

Image result for অতিথি পাখির মিলনমেলার ছবিজাবির এই আঙিনায় অতিথি পাখিদের মধ্যে অন্যতম হলো, সরাল, পিচার্ড, গার্গেনি, মুরগ্যাধি, মানিকজোড়, কলাই, নাকতা, জলপিপি, ফ্লাইপেচার, কোম্বডাক, পাতারি, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি ইত্যাদি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম এখানে অতিথি পাখি আসে। তখন ক্যাম্পাসে ৯৮ প্রজাতির পাখি দেখা যেত। বর্তমানে ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে ১২৬টি দেশীয় প্রজাতির এবং ৬৯টি বিদেশি। এদের বেশির ভাগই হাঁস জাতীয় পাখি। এ ক্যাম্পাসে যে সব পাখি আসে সেসবের মধ্যে ৯৮ শতাংশই ছোট সরালি। আর বাকি ২ শতাংশ অন্য প্রজাতির পাখি।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পাখি গবেষক মো. কামরুল ইসলামের মতে, এই ক্যাম্পাস পাখিদের জন্য সবচেয়ে ভালো অবাসস্থল। এই আবাসস্থল টিকিয়ে রাখতে প্রতি বছর পাখি মেলার আয়োজন করাসহ নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু ক্যাম্পাসের পরিবেশ বিপর্যয়, খাদ্য সংকট সহ দর্শনার্থীদের অসচেতনাতাকে বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন এই গবেষক। আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভবিষ্যতে পাখির আবাস্থল হিসেবে জাবির টিকে থাকা নিয়ে।

দৃষ্টিনন্দন লেকে নানা জাতের শাপলা আর তার মাঝে অতিথি পাখির বাহারি রূপের খুনসুটি দেখতে আগামী ১১ জানুয়ারি ‘পাখিমেলা- ২০১৯’- এ আপনিও আসতে পারেন আর হারিয়ে যেতে পারেন কিছুক্ষণের জন্য। উপভোগ করতে পারেন রক্তকমল শাপলা শোভিত লেকের মাঝে অতিথি পাখির এক অনন্য প্রকৃতির ছোঁয়া।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জাবিতে অতিথি পাখির মিলনমেলা

আপডেট টাইম : ১২:৪৪:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঋতুর পালাক্রমে শীত ঘনিয়ে আসছে। এরই মধ্যে একটু-আধটু কুয়াশার চাদর পরে শীত নামতে শুরু করেছে। প্রকৃতির যখন এই অবস্থা, তখনই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাজছে নতুন রূপে। সকালের বিন্দু বিন্দু শিশির ভেজা ঘাস আর সূর্য্যরে উঁকি দেওয়ার মুহূর্তে ঘাসের ওপর শিশিরের ফোঁটা যে কাউকেই মোহনীয় করে তোলে।

নৈস্বর্গিক শোভামতি ও শিক্ষার্থীদের কলরব এবং পাখির কলতানে মুখোরিত প্রকৃতির এক সবুজ ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ষড়ঋতুর এই দেশে শীত উৎসবটা অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে জাবি ক্যাম্পাসে একটু বেশিই। কারণ, শীতের সময়ে যেখানে পাখির কিচির-মিচির আওয়াজের সঙ্গে বসবাসের দুর্লভ সুযোগ মেলে ক্যাম্পাসবাসীর। লাল শাপলার মাঝে দূর থেকে আসা বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির বাহারি খেলায় মেতে ওঠার দৃশ্যে লেকগুলো এখন জানান দিচ্ছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা সেই মনোরম পরিবেশ।

Image result for অতিথি পাখির মিলনমেলার ছবিশহরের ব্যস্ত জীবনের যান্ত্রিকতা আর ধুলাবালি থেকে মুক্ত এই ক্যাম্পাসটিতে পাখির ছোঁয়া পেতে প্রতিদিন শত-শত পাখিপ্রেমীরা ভিড় জমান। হাজারো অতিথি পাখির কলকাকলি, জলকেলী, খুনসুটি, পুরো ক্যাম্পাসের আকাশে মনের সুখে দলবেঁধে উড়ে বেড়ানো। এর সৌন্দর্য নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। লাল শাপলার মাঝে ধূসর রঙের হরেক প্রজাতির পাখি মেলে ধরেছে জাবি ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে।

সাধারণত হিমালয়ের উত্তরের দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপালে এই সময়টায় প্রচুর তুষারপাতের কারণে পাখিরা বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে আসা নাম না জানা এসব পাখিকে স্বাগত জানায় জাবি ক্যাম্পাস। শীত চলে গেলে তারাও চলে যায় তাদের আপন ঠিকানায়। তাই এসব অতিথিকে স্বাগত জানাতে নতুনরূপে সেজেছে লেকগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি লেক থাকলেও পাখি আসে মূলত চারটি লেকে। এ বছর এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রার ভবনের সামনের লেক ও ট্রান্সপোর্ট সংলগ্ন লেকেই দেশীয় সরালি নামের হাঁসজাতীয় পাখির দেখা মিলেছে। বাকি লেকগুলোতে এখনো পাখি আসতে শুরু করেনি। এ ছাড়া বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের লেকেও দেখতে পাবেন খুন সুটিতে ব্যস্ত অতিথি পাখিরা।

Image result for অতিথি পাখির মিলনমেলার ছবিজাবির এই আঙিনায় অতিথি পাখিদের মধ্যে অন্যতম হলো, সরাল, পিচার্ড, গার্গেনি, মুরগ্যাধি, মানিকজোড়, কলাই, নাকতা, জলপিপি, ফ্লাইপেচার, কোম্বডাক, পাতারি, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি ইত্যাদি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম এখানে অতিথি পাখি আসে। তখন ক্যাম্পাসে ৯৮ প্রজাতির পাখি দেখা যেত। বর্তমানে ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে ১২৬টি দেশীয় প্রজাতির এবং ৬৯টি বিদেশি। এদের বেশির ভাগই হাঁস জাতীয় পাখি। এ ক্যাম্পাসে যে সব পাখি আসে সেসবের মধ্যে ৯৮ শতাংশই ছোট সরালি। আর বাকি ২ শতাংশ অন্য প্রজাতির পাখি।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও পাখি গবেষক মো. কামরুল ইসলামের মতে, এই ক্যাম্পাস পাখিদের জন্য সবচেয়ে ভালো অবাসস্থল। এই আবাসস্থল টিকিয়ে রাখতে প্রতি বছর পাখি মেলার আয়োজন করাসহ নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু ক্যাম্পাসের পরিবেশ বিপর্যয়, খাদ্য সংকট সহ দর্শনার্থীদের অসচেতনাতাকে বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন এই গবেষক। আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভবিষ্যতে পাখির আবাস্থল হিসেবে জাবির টিকে থাকা নিয়ে।

দৃষ্টিনন্দন লেকে নানা জাতের শাপলা আর তার মাঝে অতিথি পাখির বাহারি রূপের খুনসুটি দেখতে আগামী ১১ জানুয়ারি ‘পাখিমেলা- ২০১৯’- এ আপনিও আসতে পারেন আর হারিয়ে যেতে পারেন কিছুক্ষণের জন্য। উপভোগ করতে পারেন রক্তকমল শাপলা শোভিত লেকের মাঝে অতিথি পাখির এক অনন্য প্রকৃতির ছোঁয়া।