ঢাকা ০৪:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জুমার খুতবা চলাকালীন চুপ থাকা ফরয

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:২৯:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮
  • ৩১৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রশ্ন: আলেমগণ থেকে জেনেছি জুমআর খুতবা শোনা ওয়াজিব। কিন্তু অনেক মুসল্লীকে দেখা যায়, তারা প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে থাকেন অথবা খুতবা শোনায় মনোযোগী না হয়ে মোবাইল ঘাটাঘাটি বা অন্য কিছু করতে থাকেন। এটা কি জায়েয? জায়েয না হলে খুতবা তাদেরকে সতর্ক করা যাবে কি?

উত্তরজুমার নামাযে উপস্থিত ব্যক্তিদের উপর নীরবতা পালন করে ইমামের খুতবা শুনা ফরয। অন্যের সাথে কথা বলা নাজায়েয। এমনকি সে কথা যদি অন্যকে চুপ করানোর জন্যে হয় সে কথাও। যে ব্যক্তি এমন কিছু করল সে অনর্থক কাজ করল। আর যে ব্যক্তি অনর্থক কাজ করল তার জুমা নেই।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেননবী কারীম (সা.) বলেছেন: “জুমার দিন ইমাম খুতবা প্রদানকালে তুমি যদি পাশের কাউকে বল:‘চুপ থাকো’ তাহলে তুমি জুমার সওয়াব নষ্ট করে দিলে।” (সহিহ বুখারি: ৮৯২; সহিহ মুসলিম: ৮৫১)

এই নিষেধাজ্ঞা দুনিয়াবি কথোপকথনকে তো অন্তর্ভুক্ত করবেই; ধর্মীয় বিষয়ে কেউ প্রশ্ন করলে তার উত্তর প্রদানকেও অন্তর্ভুক্ত করবে।

আবুদ দারদা (রা.) বলেন: নবীজি (সা.) মিম্বারে বসে মানুষের উদ্দেশ্যে খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন। আমার পাশে ছিল উবাই ইবনে কাব। আমি তাঁকে বললাম: উবাই; এ আয়াতটি কখন নাযিল হয়েছে? তিনি আমার সাথে কোন সাড়া দিলেন না। আমি এরপরেও তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তারপরেও তিনি কোন সাড়া দিলেন না। এক পর্যায়ে রাসূল (সা.) যখন মিম্বার থেকে নামলেন তখন উবাই আমাকে বললেন: তুমি যে অনর্থক কথা বলেছ সেটা ছাড়া তুমি জুমার কোন সওয়াব পাবে না। অতঃপর রাসূল (সা.) যখন নামায শেষ করলেন তখন আমি তাঁর কাছে এসে বিষয়টি জানালাম: তখন তিনি বললেন, উবাই ঠিক বলেছে। যখন ইমাম কথা বলা শুরু করে তখন ইমাম কথা শেষ করা পর্যন্ত চুপ থাকবে”। (মুসনাদে আহমাদ : ২০৭৮০; সুনানে ইবনে মাজাহ:১১১১। আল-বুসিরি হদিসটিকে সহিহ বলেছেন, অনুরূপভাবে আলবানীও ‘তামামুল মিল্লাহ’ গ্রন্থে (৩৩৮) সহিহ বলেছেন)

এ হাদিসটি প্রমাণ করে যে, জুমার দিন ইমামের খুতবাকালে নিরবতা পালন করা ফরয এবং কথা বলা নাজায়েয।

ইবনে আব্দুল বার (রহ.) বলেন: ফিকাহবিদদের মাঝে এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই যে, যে ব্যক্তির কানে খুতবার শব্দ পৌঁছে তার উপর চুপ থাকা ফরয।[আল-ইসতিযকার (৫/৪৩)]

সারকথা: জুমাতে উপস্থিত মুসল্লিদের উপর চুপ থেকে ইমামের খুতবা শুনা ফরয। ইমাম খুতবা প্রদানকালে কথা বলা নাজায়েয। তবে দলিলের ভিত্তিতে যে কয়টি বিষয় এ বিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে না সেগুলো ছাড়া; যেমন- খতিবের সাথে কথা বলা, কিংবা খতিবের কথা জবাব দেয়া, কিংবা কোন অন্ধকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার মত জরুরী কোন বিষয় ঘটলে।

এছাড়া, কোন কল্যাণের স্বার্থ ছাড়া ইমাম সাহেবেরও অন্য কোন কথা বলা নাজায়েয। কথা বললে সেটা নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কল্যাণের স্বার্থে কিংবা যে বিষয়ে তখন কথা বলাটা ভাল এমন কিছু হতে হবে। এমন কোন কল্যাণের বিষয় না হলে ইমামের কথা বলা নাজায়েয।

আর কোন প্রয়োজনের স্বার্থে কথা বলা আরও অধিকতর যুক্তিযুক্ত। প্রয়োজনের মধ্যে পড়বে-শ্রোতা খুতবার কোন একটি বাক্য বুঝতে না পারলে জিজ্ঞাসা করা। কিংবা খতিব কোন একটি আয়াতে এমন ভুল করলেন যা অর্থকে বিকৃত করে দেয় এক্ষেত্রে খতিবকে স্মরণ করিয়ে দেয়া।

কল্যাণের মর্যাদা প্রয়োজনের নিচে। কল্যাণের মধ্যে পড়বে-মাইক্রোফোনে যদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ইমাম ইঞ্জিনিয়ারকে বলতে পারেন: ‘দেখুন তো মাইকে সমস্যা কি?’ (শাইখ উছাইমীন রচিত ‘শারহুল মুমতি’: ৫/১৪০)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জুমার খুতবা চলাকালীন চুপ থাকা ফরয

আপডেট টাইম : ০৩:২৯:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রশ্ন: আলেমগণ থেকে জেনেছি জুমআর খুতবা শোনা ওয়াজিব। কিন্তু অনেক মুসল্লীকে দেখা যায়, তারা প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে থাকেন অথবা খুতবা শোনায় মনোযোগী না হয়ে মোবাইল ঘাটাঘাটি বা অন্য কিছু করতে থাকেন। এটা কি জায়েয? জায়েয না হলে খুতবা তাদেরকে সতর্ক করা যাবে কি?

উত্তরজুমার নামাযে উপস্থিত ব্যক্তিদের উপর নীরবতা পালন করে ইমামের খুতবা শুনা ফরয। অন্যের সাথে কথা বলা নাজায়েয। এমনকি সে কথা যদি অন্যকে চুপ করানোর জন্যে হয় সে কথাও। যে ব্যক্তি এমন কিছু করল সে অনর্থক কাজ করল। আর যে ব্যক্তি অনর্থক কাজ করল তার জুমা নেই।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেননবী কারীম (সা.) বলেছেন: “জুমার দিন ইমাম খুতবা প্রদানকালে তুমি যদি পাশের কাউকে বল:‘চুপ থাকো’ তাহলে তুমি জুমার সওয়াব নষ্ট করে দিলে।” (সহিহ বুখারি: ৮৯২; সহিহ মুসলিম: ৮৫১)

এই নিষেধাজ্ঞা দুনিয়াবি কথোপকথনকে তো অন্তর্ভুক্ত করবেই; ধর্মীয় বিষয়ে কেউ প্রশ্ন করলে তার উত্তর প্রদানকেও অন্তর্ভুক্ত করবে।

আবুদ দারদা (রা.) বলেন: নবীজি (সা.) মিম্বারে বসে মানুষের উদ্দেশ্যে খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি একটি আয়াত তেলাওয়াত করলেন। আমার পাশে ছিল উবাই ইবনে কাব। আমি তাঁকে বললাম: উবাই; এ আয়াতটি কখন নাযিল হয়েছে? তিনি আমার সাথে কোন সাড়া দিলেন না। আমি এরপরেও তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তারপরেও তিনি কোন সাড়া দিলেন না। এক পর্যায়ে রাসূল (সা.) যখন মিম্বার থেকে নামলেন তখন উবাই আমাকে বললেন: তুমি যে অনর্থক কথা বলেছ সেটা ছাড়া তুমি জুমার কোন সওয়াব পাবে না। অতঃপর রাসূল (সা.) যখন নামায শেষ করলেন তখন আমি তাঁর কাছে এসে বিষয়টি জানালাম: তখন তিনি বললেন, উবাই ঠিক বলেছে। যখন ইমাম কথা বলা শুরু করে তখন ইমাম কথা শেষ করা পর্যন্ত চুপ থাকবে”। (মুসনাদে আহমাদ : ২০৭৮০; সুনানে ইবনে মাজাহ:১১১১। আল-বুসিরি হদিসটিকে সহিহ বলেছেন, অনুরূপভাবে আলবানীও ‘তামামুল মিল্লাহ’ গ্রন্থে (৩৩৮) সহিহ বলেছেন)

এ হাদিসটি প্রমাণ করে যে, জুমার দিন ইমামের খুতবাকালে নিরবতা পালন করা ফরয এবং কথা বলা নাজায়েয।

ইবনে আব্দুল বার (রহ.) বলেন: ফিকাহবিদদের মাঝে এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই যে, যে ব্যক্তির কানে খুতবার শব্দ পৌঁছে তার উপর চুপ থাকা ফরয।[আল-ইসতিযকার (৫/৪৩)]

সারকথা: জুমাতে উপস্থিত মুসল্লিদের উপর চুপ থেকে ইমামের খুতবা শুনা ফরয। ইমাম খুতবা প্রদানকালে কথা বলা নাজায়েয। তবে দলিলের ভিত্তিতে যে কয়টি বিষয় এ বিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে না সেগুলো ছাড়া; যেমন- খতিবের সাথে কথা বলা, কিংবা খতিবের কথা জবাব দেয়া, কিংবা কোন অন্ধকে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার মত জরুরী কোন বিষয় ঘটলে।

এছাড়া, কোন কল্যাণের স্বার্থ ছাড়া ইমাম সাহেবেরও অন্য কোন কথা বলা নাজায়েয। কথা বললে সেটা নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন কল্যাণের স্বার্থে কিংবা যে বিষয়ে তখন কথা বলাটা ভাল এমন কিছু হতে হবে। এমন কোন কল্যাণের বিষয় না হলে ইমামের কথা বলা নাজায়েয।

আর কোন প্রয়োজনের স্বার্থে কথা বলা আরও অধিকতর যুক্তিযুক্ত। প্রয়োজনের মধ্যে পড়বে-শ্রোতা খুতবার কোন একটি বাক্য বুঝতে না পারলে জিজ্ঞাসা করা। কিংবা খতিব কোন একটি আয়াতে এমন ভুল করলেন যা অর্থকে বিকৃত করে দেয় এক্ষেত্রে খতিবকে স্মরণ করিয়ে দেয়া।

কল্যাণের মর্যাদা প্রয়োজনের নিচে। কল্যাণের মধ্যে পড়বে-মাইক্রোফোনে যদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ইমাম ইঞ্জিনিয়ারকে বলতে পারেন: ‘দেখুন তো মাইকে সমস্যা কি?’ (শাইখ উছাইমীন রচিত ‘শারহুল মুমতি’: ৫/১৪০)