হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফুটবলে ব্যক্তিগত পুরস্কার মানেই মেসি-রোনালদোর দ্বৈরথ। গত এক দশক ধরেই এটাই যেন নিয়ম হয়ে গিয়েছিল। গত ১০ বছরে বিশ্ব ফুটবলের সব ব্যক্তিগত বড় পুরস্কারই ভাগাভাগি করেছেন তারা দুজনে। এই দুই তারকার যৌথ রাজত্বে কে এসে হানা দিবে? অনেক দিন ধরেই চলছিল এরকম আলোচনা। সম্ভাব্য তারকা হিসেবে নাম উঠে এসেছিল নেইমার, কিলিয়ান এমবাপে, আঁতোয়া গ্রিজমানদের নাম।
বাদ যায়নি মোহামেদ সালাহর নামও। কিন্তু একা কেউ নন, মেসি-রোনালদোর সাম্রাজ্যে হানা দিয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার উদ্বাস্তু শিবির থেকে উঠে আসা এক ফুটবলার। নাম লুকা মদ্রিচ। রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা চলতি বছর একে একে বগলদাবা করলেন ফুটবলের ব্যক্তিগত সব পুরস্কার। সর্বশেষ সোমবার ব্যালন ডি’অরেও মেসি-রোনালদোর যুগের শেষ টেনে দিলেন ৩৩ বছর বয়সী রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা। জিতে নিলেন ফরাসী সাময়িকীর দেওয়া সম্মানজনক এই পুরস্কার।
গেল মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়ে রাশিয়ার বিশ্বকাপে গিয়েছিলেন মদ্রিচ। বিশ্বকাপে তার দল ক্রোয়েশিরার সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল সেমি ফাইনাল পর্যন্ত। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো ফ্রান্স বিশ্বকাপে অংশ নিয়েই সেমি ফাইনালে উঠেছিল ক্রোয়েশিয়া। এবার মদ্রিচরা সেই সাফল্য অতিক্রমের প্রত্যয় নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন। দারুণ লড়াকু ফুটবলে দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। যদিও শিরোপা জেতা হয়নি। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন মদ্রিচরা। টুর্নামেন্ট জুড়ে অসামান্য পারফর্মেন্সের কারণে রিয়ালের এই ডিফেন্ডার জিতেছেন গোল্ডেন বল।
ক্লাব ক্যারিয়ারে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছেন ৪ বার। জিতেছেন লিগ, স্প্যানিশ সুপার কাপ, উয়েফা সুপার কাপ, বিশ্ব ক্লাব বিশ্বকাপ- সবকিছুই।
মদ্রিচের জন্ম ১৯৮৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। ক্রোয়টদের রীতি-গ্রাম বা পরিবারের পূর্বসূরিদের নামানুসারে রাখা হয় নাম। লুকার ক্ষেত্রে দুটো রীতিই মানা হয়েছে। তার দাদার নাম ছিল লুকা, গ্রামের নাম মদ্রিচি। দুটো মিলিয়েই তিনি লুকা মদ্রিচ। জন্মের কয়েক বছর পরই যাকে আশ্রয় নিতে হয় উদ্বাস্তু শিবিরে, ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নের চারা লাগাতে গিয়ে শুরুতেই খেতে হয় অমানবিক ধাক্কা, শারীরিক আকৃতির কারণে যাকে দলে নিতে অস্বীকৃতি জানায় ক্লাব, সময়ের পথ বেয়ে সেই লুকা মদ্রিচ এখন বিশ্বসেরা। ফুটবল বিশ্বের দুই দানবিক প্রতিভা মেসি ও রোনালদো যুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন যুগের সূচনা করলেন তিনি।