ঢাকা ০২:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য রেখে দেশের উন্নয়ন গড়তে চায় বাংলাদেশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৮
  • ২৭৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র তার ‘ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল’ সুস্পষ্ট করে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি দেশ তাদের ভিন্ন দুটি উদ্যোগে পাশে চায় বাংলাদেশকে। এদিকে এই দুটি উদ্যোগের মধ্যে একটি ভারসাম্য রেখে দেশের উন্নয়ন ঘটাতে চায় ঢাকা। এ ব্যাপারে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেকে ইন্দো প্যাসিফিক কৌশলকে মনে করে চীনকে বেঁধে রাখার একটি পরিকল্পনা। আবার অনেকে মনে করে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যেগের মাধ্যমে চীন বিশ্বের এক নম্বর দেশ হতে চায়।’

তবে এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং এর জাতীয় স্বার্থ পূরণে যেকোনও ধরনের অর্থনৈতিক উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। বড় দুটি দেশের এই উদ্যোগের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিকভাবে কীভাবে লাভবান হওয়া যায়, এটিই বাংলাদেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

জানা যায়, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক গত মাসে চীন সফরের সময়ে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে ইন্দো প্যাসিফিক বিষয়টি উত্থাপন করলে ওই উদ্যোগের বিষয়টি উল্লেখ না করে ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়- বাংলাদেশের উন্নতির জন্য সহায়ক যেকোনও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উদ্যোগকে স্বাগত জানায় সরকার।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ২০১৬ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যেগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয় এবং অন্যদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের বিষয়ে বাংলাদেশের আপত্তি নেই।

বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ কী?

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ ধারনাটি প্রথম জনসমক্ষে প্রকাশ করেন কাজাখস্থানে। এখন পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি দেশ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এমনকি ২০১৭ সালে চীনে আয়োজিত বেল্ট অ্যান্ড রোড সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করে।

২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময়ে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এই উদ্যোগে যোগ দেয় এবং এটিকে যৌথভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে।

এ ব্যাপারে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগ দরকার এবং চীন এটির জোগান দিতে সক্ষম। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলি টানেল ও চীনের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাংলাদেশের বেইজিং এর কয়েকটি বড় উদ্যোগ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রতিটি প্রকল্প বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং সমাজে অবদান রাখবে, যা আমরা অবহেলা করতে পারি না।’

এই প্রকল্পগুলি বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা চলছিল।’

ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল কী?

উন্মুক্ত ও স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক কীভাবে অর্জন করা যায় সেই কৌশল প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, এটাই ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল নামে পরিচিত। চলাচলে স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণভাবে ও আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে সুমদ্রসীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি, অবকাঠামো নির্মানে স্বচ্ছতা, দায়িত্বপূর্ণ ঋণ গ্রহণ, সার্বভৌমতাকে সম্মান জানানো এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে এই কৌশলের মৌলিক উপাদান।

এ ব্যাপারে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তার কৌশল জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াসহ অনেককে জানিয়েছে এবং ওই দেশগুলি তাদের নিজস্ব কৌশল তৈরি করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকেও এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র অবহিত করেছে এবং বাংলাদেশ বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছে। এই বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের একাধিকবার কথা হয়েছে।’ এর যে মৌলিক উপাদান তার সঙ্গে বাংলাদেশ একমত বলেও তিনি জানান।

এ কৌশলের প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থানের ব্যাপারে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এর কোনও উপাদান নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে ও আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সুমদ্রসীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক দুই উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রসঙ্গে এই সরকারি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রেখে আমাদের জাতীয় স্বার্থ বজায় রাখবো। কারণ এছাড়া আমাদের আর কোনও বিকল্প নেই।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য রেখে দেশের উন্নয়ন গড়তে চায় বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ১০:০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র তার ‘ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল’ সুস্পষ্ট করে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি দেশ তাদের ভিন্ন দুটি উদ্যোগে পাশে চায় বাংলাদেশকে। এদিকে এই দুটি উদ্যোগের মধ্যে একটি ভারসাম্য রেখে দেশের উন্নয়ন ঘটাতে চায় ঢাকা। এ ব্যাপারে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেকে ইন্দো প্যাসিফিক কৌশলকে মনে করে চীনকে বেঁধে রাখার একটি পরিকল্পনা। আবার অনেকে মনে করে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যেগের মাধ্যমে চীন বিশ্বের এক নম্বর দেশ হতে চায়।’

তবে এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং এর জাতীয় স্বার্থ পূরণে যেকোনও ধরনের অর্থনৈতিক উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। বড় দুটি দেশের এই উদ্যোগের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিকভাবে কীভাবে লাভবান হওয়া যায়, এটিই বাংলাদেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’

জানা যায়, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক গত মাসে চীন সফরের সময়ে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে ইন্দো প্যাসিফিক বিষয়টি উত্থাপন করলে ওই উদ্যোগের বিষয়টি উল্লেখ না করে ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হয়- বাংলাদেশের উন্নতির জন্য সহায়ক যেকোনও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উদ্যোগকে স্বাগত জানায় সরকার।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ২০১৬ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যেগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয় এবং অন্যদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের বিষয়ে বাংলাদেশের আপত্তি নেই।

বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ কী?

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ ধারনাটি প্রথম জনসমক্ষে প্রকাশ করেন কাজাখস্থানে। এখন পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি দেশ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এমনকি ২০১৭ সালে চীনে আয়োজিত বেল্ট অ্যান্ড রোড সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করে।

২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময়ে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এই উদ্যোগে যোগ দেয় এবং এটিকে যৌথভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে।

এ ব্যাপারে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের বিনিয়োগ দরকার এবং চীন এটির জোগান দিতে সক্ষম। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলি টানেল ও চীনের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাংলাদেশের বেইজিং এর কয়েকটি বড় উদ্যোগ।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রতিটি প্রকল্প বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং সমাজে অবদান রাখবে, যা আমরা অবহেলা করতে পারি না।’

এই প্রকল্পগুলি বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকে প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা চলছিল।’

ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল কী?

উন্মুক্ত ও স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক কীভাবে অর্জন করা যায় সেই কৌশল প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, এটাই ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল নামে পরিচিত। চলাচলে স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণভাবে ও আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে সুমদ্রসীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি, অবকাঠামো নির্মানে স্বচ্ছতা, দায়িত্বপূর্ণ ঋণ গ্রহণ, সার্বভৌমতাকে সম্মান জানানো এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে এই কৌশলের মৌলিক উপাদান।

এ ব্যাপারে একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তার কৌশল জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াসহ অনেককে জানিয়েছে এবং ওই দেশগুলি তাদের নিজস্ব কৌশল তৈরি করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকেও এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র অবহিত করেছে এবং বাংলাদেশ বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছে। এই বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের একাধিকবার কথা হয়েছে।’ এর যে মৌলিক উপাদান তার সঙ্গে বাংলাদেশ একমত বলেও তিনি জানান।

এ কৌশলের প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থানের ব্যাপারে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এর কোনও উপাদান নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে ও আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সুমদ্রসীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক দুই উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রসঙ্গে এই সরকারি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রেখে আমাদের জাতীয় স্বার্থ বজায় রাখবো। কারণ এছাড়া আমাদের আর কোনও বিকল্প নেই।’