হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইয়েমেনের ছোট্ট শিশু আমাল হোসেন মারা গেছে শহরের একটি হাসপাতালে। সেখানে আমাল হোসেনের মতো আরও অনেক শিশু অনাহারে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। তারা জানে না এই নিষ্ঠুরতার জন্য কারা দায়ী? দেশে দেশে শিশুরা সহিংসতার শিকার হচ্ছে। কিছুদিন আগে এই সহিংসতার হার ৮২ শতাংশ বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ওয়ার্ল্ড ভিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়-বাংলাদেশে ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ৮২ শতাংশ শিশু বিভিন্ন সহিংসতার শিকার। ১৪ বছরের আগে ৭৭.১ শতাংশ শিশু বিদ্যালয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। ৫৭ শতাংশ শিশু কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন মতে ৫৪.৪ শতাংশ শিশু পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৪২ থেকে ৬৪ শতাংশ শিশু যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার।
এছাড়া একই সময়ে ‘সেইভ দ্য চিলড্রেন’ বিশ্বের শিশুদের উপর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিশ্বের প্রতি ছয় শিশুর একজন এখন সংঘাত কবলিত এলাকায় বাস করছে বলে সেখানে নতুন এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গত দুই দশকের মধ্যে এখনই যুদ্ধপ্রবণ এলাকাগুলোর শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সংঘাত কবলিত এলাকাগুলোতে এখন প্রায় ৩৫ কোটি ৭০ লাখ শিশু বসবাস করছে, ১৯৯৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ২০ কোটি। ১৯৯৫ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত যুদ্ধ আক্রান্ত এলাকায় বসবাস করা শিশুর সংখ্যা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে বলে জানানো হয়েছে। সংখ্যার বিচারে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকবলিত এলাকার প্রতি পাঁচ শিশুর দুজন যুদ্ধ বা আক্রমণস্থল এলাকার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করছে। যুদ্ধ বিধস্ত এলাকায় শিশুরা যে ছয়টি ঝুঁকিতে আছে সেগুলো হলো- হত্যা ও অঙ্গহানি, শিশুদের সৈন্য হিসেবে নিয়োগ ও যুদ্ধে ব্যবহার, যৌন নিপীড়ন, অপহরণ, স্কুল ও হাসপাতালে হামলা এবং মানবিক সহায়তা সরবরাহে অস্বীকৃতি। এ প্রতিবেদন তৈরিতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গবেষণার নথি ব্যবহার করেছে। অনেক দেশ শিশুদের হাতে মারণাস্ত্র তুলে দিচ্ছে। অথচ সেইসব শিশুদের অস্ত্র কি সেটাই বোঝার বয়স হয়নি! যুদ্ধের মাঝেই জন্ম হচ্ছে বহু শিশুর, আবার যুদ্ধে মারাও যাচ্ছে অনেকে।
শিশুরা ফুলের মতো পবিত্র। ফুল যেমন সবাইকে আনন্দ দান করে, শিশুও তেমনি সমাজের মানুষগুলোকে আনন্দ প্রদান করে। শিশুদের খেলাধুলা, হাস্যজ্জ্বল মুখ-সবকিছু একটি সুখী সমাজের প্রতিচ্ছবির প্রতিনিধিত্ব করে।একটি দেশ কতটা শান্তিতে আছে, কতটা উন্নত বা অর্থনৈতিক সাফল্য কতটুকু পরিমাপ করার জন্য পরিসংখ্যান দেখার দরকার হয় না। সেই সমাজের আশপাশে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পৃথিবীতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এই শিশুরা। অথচ এইসব শিশুদের কারো বোঝার ক্ষমতা নেই যে, ঠিক কী কারণে তাদের কোনো স্থায়ী নিবাস নেই। উদাহরণস্বরূপ মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের কথাই বলি। তারা জন্মভূমি থেকে জীবন বাঁচানোর তাগিদে এদেশে পালিয়ে এসেছে। অথচ তারা জানেই না তাদের পালাতে হচ্ছে কেন? কেন পৃথিবীতে তাদের জন্য নিরাপদ কোনো স্থান নেই। তারা কেবল জানে তাদের বাঁচতে হবে। তাই তারা পালাচ্ছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশগুলোতে দেখা যায় শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। ক্ষেত্র বিশেষে তারা বেশিরভাগই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এ কাজ করছে। এর প্রধান কারণ দারিদ্র্য। দারিদ্র্যই আমাদের দেশের বহু শিশুর মতো বিশ্বে শিশুদের পরিশ্রমে বাধ্য করছে। শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশুরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আমাদের দেশে শ্রমক্ষেত্রে প্রায়ই শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিকৃতমনা কিছু মানুষ শিশুদের ওপর যথেচ্ছ নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। বাড়ির গৃহকর্মী থেকে শুরু করে রাস্তার পাশে ওয়েল্ডিং কারখানায় কাজ করতে গিয়ে শিশু সব জায়গায় নির্যাতিত হচ্ছে। এর কারণ মনে হয় শিশুর অসহায়ত্ব এবং শারীরিক দুর্বলতা। কারণ যে শিশু শারীরিক শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করে সে বাধ্য হয়েই কাজ করে। আমাদের দেশে শিশুরা দিন শেষে সামান্য মজুরি নিয়ে হয়তো তার পরিবারকে সাহায্য করে। ওদের চোখেও স্বপ্ন থাকে। ওরা বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যেতে চায়। ওদের পরিবার থাকে। বাবা মায়ের আদর থাকে। তবুও ওরা সকাল হলেই কেউ হাতুরি তুলে নেয়, কেউ চায়ের কেটলি, কেউ বা রিকশার হাতল বা অন্য কোনো কাজ। এসবই কিন্তু ওরা করে বাধ্য হয়ে। ওরা যদি সুযোগ পেত কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যেত। শিশুদের সমাজে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিবেশ। সেই পরিবেশ সৃষ্টির দায়িত্ব আমাদের বড়দের। কবি সুকান্তের ভাষায়, এ পৃথিবী শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার। আর এ কাজে সবাইকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।