ঢাকা ১০:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৯ বছর ধরে সাঁতরে স্কুলে যাচ্ছেন শিক্ষক আব্দুল মালিক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৩:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৮
  • ৩২২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রতিদিন সকাল ৯ টায় কোমরে টিউব জড়িয়ে সাঁতরে নদী পার হচ্ছেন একজন মানুষ, হাতে উঁচু করে ধরা একটি ব্যাগে তার কাপড়চোপড় আর জুতা। ভারতের কেরালা রাজ্যের মালাপুরাম গ্রামের কাদালুন্দিপুঝা নদীতে এটা এক পরিচিত দৃশ্য। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে ওই ব্যক্তি একইভাবে একই সময়ে সাঁতরে পার হচ্ছেন নদী। তার নাম আব্দুল মালিক। তিনি কেরালার মুসলিম লোয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অংকের শিক্ষক।

কোমড়ে টিউব জড়িয়ে হাতে  ব্যাগ হাতে শিক্ষক  আব্দুল মালিক

জানা গেছে, চাকরির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত একদিনও আব্দুল মালিক স্কুল বাদ দেননি । দরিদ্র পরিবারের ছেলে মালিক শিক্ষক হিসাবে তার কাজ শুরু করেন ১৯৯৩ সালে। তার বাড়ি থেকে স্কুলের দুরত্ব ১২ কিলোমিটার। বাড়ি থেকে তার স্কুলে যাওয়ার দু’টি রাস্তা রয়েছে। একটি বাড়ি থেকে বেরিয়ে দু’বার বাস বদল করতে হবে। তারপর আবার হাঁটা পথ। আর একটি পথে বাড়ি থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা পথে স্থানীয় কাদালুন্দিপুঝা নদীর পাড়ে যেতে হয়। এর পর সেই নদী সাঁতরে ওপারে উঠে হাঁটতে হয় অল্প কিছু পথ। তাহলে পৌঁছানো যায় কর্মস্থলে। প্রথমদিকে মালিক বাসে করে স্কুলে যেতেন। একদিন তার স্কুলের অন্য এক শিক্ষকের পরামর্শে নদী পথেই কর্মস্থলে যাওয়ার সহজ পথটা বেছে নেন তিনি। আব্দুল জানান, গাড়িতে যেতে হলে বেশির ভাগ দিনই নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছানো যায় না।এতে তার প্রচুর সময়ও ব্যয় হয়।

স্কুলে পৌঁছাতে নদীর পাড়ে এসে প্রথমে তিনি তার পড়নের কাপড় বদলে তোয়ালে পড়েন। আর কাপড়গুলো ভরেন প্লাস্টিকের ব্যাগে। কোমড়ে টিউব জড়িয়ে এক হাতে ধরা থাকে তার জুতা, কাপড় চোপড়ের প্লাস্টিক ব্যাগ আর অন্য হাত দিয়ে সাঁতার কাটেন তিনি।

১৯ বছর ধরে এই নিয়মই চলে আসছে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অন্য কোনও পেশা বা অন্য কোনও স্কুলে যাওয়ার চেষ্টাও করেননি আব্দুল। তিনি জানান, শিক্ষকতা করে তিনি যে বেতন পান তা নিয়েই তিনি খুশী। এত বছর পর অনেকেই মালিককে বলেন, আপনি এখন আর যুবক নন। তাহলে কেন এত কষ্ট করে এভাবে প্রতিদিন সাঁতার কেটে নদী পার হচ্ছেন? এ বিষয়ে মালিকের উত্তর হল, ‘প্রতিদিন সাঁতার কাটলে নিজেকে অনেক ঝরঝরে এবং শক্তিশালী মনে হয়। আমি ঠিক করেছি, অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবেই প্রতিদিন সাঁতার কাটব’।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

১৯ বছর ধরে সাঁতরে স্কুলে যাচ্ছেন শিক্ষক আব্দুল মালিক

আপডেট টাইম : ০৪:৪৩:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রতিদিন সকাল ৯ টায় কোমরে টিউব জড়িয়ে সাঁতরে নদী পার হচ্ছেন একজন মানুষ, হাতে উঁচু করে ধরা একটি ব্যাগে তার কাপড়চোপড় আর জুতা। ভারতের কেরালা রাজ্যের মালাপুরাম গ্রামের কাদালুন্দিপুঝা নদীতে এটা এক পরিচিত দৃশ্য। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে ওই ব্যক্তি একইভাবে একই সময়ে সাঁতরে পার হচ্ছেন নদী। তার নাম আব্দুল মালিক। তিনি কেরালার মুসলিম লোয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অংকের শিক্ষক।

কোমড়ে টিউব জড়িয়ে হাতে  ব্যাগ হাতে শিক্ষক  আব্দুল মালিক

জানা গেছে, চাকরির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত একদিনও আব্দুল মালিক স্কুল বাদ দেননি । দরিদ্র পরিবারের ছেলে মালিক শিক্ষক হিসাবে তার কাজ শুরু করেন ১৯৯৩ সালে। তার বাড়ি থেকে স্কুলের দুরত্ব ১২ কিলোমিটার। বাড়ি থেকে তার স্কুলে যাওয়ার দু’টি রাস্তা রয়েছে। একটি বাড়ি থেকে বেরিয়ে দু’বার বাস বদল করতে হবে। তারপর আবার হাঁটা পথ। আর একটি পথে বাড়ি থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা পথে স্থানীয় কাদালুন্দিপুঝা নদীর পাড়ে যেতে হয়। এর পর সেই নদী সাঁতরে ওপারে উঠে হাঁটতে হয় অল্প কিছু পথ। তাহলে পৌঁছানো যায় কর্মস্থলে। প্রথমদিকে মালিক বাসে করে স্কুলে যেতেন। একদিন তার স্কুলের অন্য এক শিক্ষকের পরামর্শে নদী পথেই কর্মস্থলে যাওয়ার সহজ পথটা বেছে নেন তিনি। আব্দুল জানান, গাড়িতে যেতে হলে বেশির ভাগ দিনই নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছানো যায় না।এতে তার প্রচুর সময়ও ব্যয় হয়।

স্কুলে পৌঁছাতে নদীর পাড়ে এসে প্রথমে তিনি তার পড়নের কাপড় বদলে তোয়ালে পড়েন। আর কাপড়গুলো ভরেন প্লাস্টিকের ব্যাগে। কোমড়ে টিউব জড়িয়ে এক হাতে ধরা থাকে তার জুতা, কাপড় চোপড়ের প্লাস্টিক ব্যাগ আর অন্য হাত দিয়ে সাঁতার কাটেন তিনি।

১৯ বছর ধরে এই নিয়মই চলে আসছে। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অন্য কোনও পেশা বা অন্য কোনও স্কুলে যাওয়ার চেষ্টাও করেননি আব্দুল। তিনি জানান, শিক্ষকতা করে তিনি যে বেতন পান তা নিয়েই তিনি খুশী। এত বছর পর অনেকেই মালিককে বলেন, আপনি এখন আর যুবক নন। তাহলে কেন এত কষ্ট করে এভাবে প্রতিদিন সাঁতার কেটে নদী পার হচ্ছেন? এ বিষয়ে মালিকের উত্তর হল, ‘প্রতিদিন সাঁতার কাটলে নিজেকে অনেক ঝরঝরে এবং শক্তিশালী মনে হয়। আমি ঠিক করেছি, অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত এভাবেই প্রতিদিন সাঁতার কাটব’।