ঢাকা ১২:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজব এক সাইকেল চালিয়ে পদ্মা পাড়ি দিলেন সাইফুল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০০:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ নভেম্বর ২০১৮
  • ৪৫০ বার

সাইকেল নিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দেয়ার স্বপ্ন সাইফুলের বহু দিনের। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নিজের তৈরি সাইকেল চালিয়ে পদ্ম নদী পাড়ি দিলেন সাইফুল।

সাইফুলের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সৌর শক্তি আলোর সালথা উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক তিনি।

সদর উপজেলার ধলা মোড় এলাকায় পদ্মা নদীর একটি ক্যানেলে গত ২৮ মে বেলা ১১টার দিকে সাইফুল ইসলামকে সাইকেলটি চালাতে দেখা যায়। সেখানে ঘণ্টাখানেক তিনি সাইকেল চালান। ২০০ মিটার ক্যানেল অতিক্রম করেন তিনি। এ সময় তাকে দেখতে নদীর পাড়ে অনেক মানুষ ভিড় করেন। সাইকেল চালিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে স্থলপথে বাড়ি ফিরেন সাইফুল।দীর্ঘ ছয় মাস চেষ্টা চালিয়ে সৌরবিদ্যুৎ চালিত এ সাইকেলটি তৈরি করেন সাইফুল ইসলাম। এটি জল-স্থলে চলতে পারে। বলা যায়, উভচরে চলে সাইফুলের সৌরবিদ্যুৎ চালিত সাইকেল।

তবে তার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পুরোপুরি পূরণ করতে আরও আধুনিকায়ন করতে চান সাইকেলটি। স্বপ্ন দেখেন এমন একটি সাইকেল তৈরি করবেন, যা দিয়ে আকাশে ওড়া যাবে।

কিন্তু স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা অনেক। এই কাজ করতে গেলে যে টাকার প্রয়োজন তার সামর্থ্য নেই সাইফুলের। এর জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন বলে জানান সাইফুল।

সাইফুলের তৈরি সাইকেলের হ্যান্ডেল ও ক্যারিয়ারে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। দুই চাকার দুই পাশে চারটি গোলাকার টিউব। টিউবের সাহায্যে সাইকেলটি পানিতে ভেসে থাকে। সাইকেল চালাতে প্যাডেল ব্যবহার করতে হয় না। কারণ, এটি সৌরবিদ্যুতে চলে। শুধু পানিতে নয়, স্থলপথেও সাইকেলটি চালানো যায়। তখন টিউব চারটি চাকার দুই পাশে আটকে রাখা হয়।

এমন সাইকেল আবিষ্কারের বিষয়ে কথা হয় সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাস করেন। পরের বছর ‘শক্তি সৌর আলো’তে যোগ দেন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন যন্ত্রের প্রতি তার আগ্রহ ছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় পাটখড়ি, কাচ, কাগজ দিয়ে তিন হাত লম্বা ও এক হাত চওড়া একটি বাস তৈরি করেছিলাম।

সাইফুল ইসলাম বলেন, সাইকেলটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো। সময় লেগেছে ছয় মাস। বর্তমানে সৌরবিদ্যুৎ চালিত ধান কাটার যন্ত্র ও রিকশা চালানোর যন্ত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ১৫ জন ধারণক্ষমতার সৌরচালিত স্পিডবোট বানানোর চেষ্টা করছি। যা জলের পাশাপাশি ডাঙায়ও চলবে। এমন একটি সাইকেল বানাতে চাই, যা দিয়ে আকাশে ওড়া যাবে। এছাড়া এমন এক জোড়া জুতা তৈরি করতে চাই, যা দিয়ে অনায়াসে পানির ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে।

সাইফুল বলেন, স্বপ্নপূরণের পথে বাধাও অনেক। এই কাজে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার সামর্থ্য তেমন নেই। এর জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। তবে আমার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, জানি না।

স্থানীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হাসিবুল হাসান বলেন, সাইফুলের উদ্ভাবনটি বেশ সাড়া ফেলেছে। তবে বাহনটিকে আরও জনপ্রিয় করতে এটির ওজন আরও কমিয়ে আনতে হবে। নির্মাণব্যয় সাধারণের নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। চরাঞ্চলের মানুষের জন্য এ সাইকেল বেশ কাজে লাগবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

আজব এক সাইকেল চালিয়ে পদ্মা পাড়ি দিলেন সাইফুল

আপডেট টাইম : ১২:০০:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ নভেম্বর ২০১৮

সাইকেল নিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দেয়ার স্বপ্ন সাইফুলের বহু দিনের। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। নিজের তৈরি সাইকেল চালিয়ে পদ্ম নদী পাড়ি দিলেন সাইফুল।

সাইফুলের বাড়ি ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সৌর শক্তি আলোর সালথা উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপক তিনি।

সদর উপজেলার ধলা মোড় এলাকায় পদ্মা নদীর একটি ক্যানেলে গত ২৮ মে বেলা ১১টার দিকে সাইফুল ইসলামকে সাইকেলটি চালাতে দেখা যায়। সেখানে ঘণ্টাখানেক তিনি সাইকেল চালান। ২০০ মিটার ক্যানেল অতিক্রম করেন তিনি। এ সময় তাকে দেখতে নদীর পাড়ে অনেক মানুষ ভিড় করেন। সাইকেল চালিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে স্থলপথে বাড়ি ফিরেন সাইফুল।দীর্ঘ ছয় মাস চেষ্টা চালিয়ে সৌরবিদ্যুৎ চালিত এ সাইকেলটি তৈরি করেন সাইফুল ইসলাম। এটি জল-স্থলে চলতে পারে। বলা যায়, উভচরে চলে সাইফুলের সৌরবিদ্যুৎ চালিত সাইকেল।

তবে তার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পুরোপুরি পূরণ করতে আরও আধুনিকায়ন করতে চান সাইকেলটি। স্বপ্ন দেখেন এমন একটি সাইকেল তৈরি করবেন, যা দিয়ে আকাশে ওড়া যাবে।

কিন্তু স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা অনেক। এই কাজ করতে গেলে যে টাকার প্রয়োজন তার সামর্থ্য নেই সাইফুলের। এর জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন বলে জানান সাইফুল।

সাইফুলের তৈরি সাইকেলের হ্যান্ডেল ও ক্যারিয়ারে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। দুই চাকার দুই পাশে চারটি গোলাকার টিউব। টিউবের সাহায্যে সাইকেলটি পানিতে ভেসে থাকে। সাইকেল চালাতে প্যাডেল ব্যবহার করতে হয় না। কারণ, এটি সৌরবিদ্যুতে চলে। শুধু পানিতে নয়, স্থলপথেও সাইকেলটি চালানো যায়। তখন টিউব চারটি চাকার দুই পাশে আটকে রাখা হয়।

এমন সাইকেল আবিষ্কারের বিষয়ে কথা হয় সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাস করেন। পরের বছর ‘শক্তি সৌর আলো’তে যোগ দেন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন যন্ত্রের প্রতি তার আগ্রহ ছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় পাটখড়ি, কাচ, কাগজ দিয়ে তিন হাত লম্বা ও এক হাত চওড়া একটি বাস তৈরি করেছিলাম।

সাইফুল ইসলাম বলেন, সাইকেলটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো। সময় লেগেছে ছয় মাস। বর্তমানে সৌরবিদ্যুৎ চালিত ধান কাটার যন্ত্র ও রিকশা চালানোর যন্ত্র আবিষ্কারের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ১৫ জন ধারণক্ষমতার সৌরচালিত স্পিডবোট বানানোর চেষ্টা করছি। যা জলের পাশাপাশি ডাঙায়ও চলবে। এমন একটি সাইকেল বানাতে চাই, যা দিয়ে আকাশে ওড়া যাবে। এছাড়া এমন এক জোড়া জুতা তৈরি করতে চাই, যা দিয়ে অনায়াসে পানির ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে।

সাইফুল বলেন, স্বপ্নপূরণের পথে বাধাও অনেক। এই কাজে অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার সামর্থ্য তেমন নেই। এর জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। তবে আমার স্বপ্ন পূরণ হবে কি না, জানি না।

স্থানীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হাসিবুল হাসান বলেন, সাইফুলের উদ্ভাবনটি বেশ সাড়া ফেলেছে। তবে বাহনটিকে আরও জনপ্রিয় করতে এটির ওজন আরও কমিয়ে আনতে হবে। নির্মাণব্যয় সাধারণের নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। চরাঞ্চলের মানুষের জন্য এ সাইকেল বেশ কাজে লাগবে।