মালয়েশিয়ায় স্থগিত শ্রমবাজার চালু হচ্ছে কবে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় ও অনিয়মের অভিযোগে গত প্রায় এক মাস ধরে শ্রমিক নেওয়া স্থগিত রেখেছে মালয়েশিয়া। জিটুজি প্লাস চুক্তির আলোকে এসপিপিএ সিস্টেম বাতিল ঘোষণার পর নতুন সিস্টেমে কর্মী নেওয়ার ঘোষণা রয়েছে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন সেদেশের নতুন সরকারের। নতুন সিস্টেমে কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া ঠিক করতে আজ বুধবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য মালয়েশিয়ার হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রণালয়ের পলিসি বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি এমডি এম. বেট্টি হাসানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছেন গতকাল।

বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রৌনক জাহান নেতৃত্ব দেবেন। এছাড়া প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বিএমইটির ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেবেন। এছাড়া মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহ. শহীদুল ইসলাম এবং শ্রম কাউন্সিলর (অতিরিক্ত সচিব) মো. সায়েদুল ইসলামও উপস্থিত থাকবেন বৈঠকে। রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় এ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। এ সভায় স্থগিত থাকা মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার চালুসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি গুরুত্ব পাবে বলে প্রবাসী মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠকে শ্রমবাজার নিয়ে কী কী আলোচনা হবে, মালয়েশিয়া থেকে কী ধরনের প্রস্তাব আসতে পারে এবং সে প্রস্তাবে বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভারপ্রাপ্ত সচিব রৌনক জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দল প্রথমে প্রবাসীকল্যাণ সচিবের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। এরপর প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সঙ্গেও বৈঠকে মিলিত হবেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বড় পরিসরে কর্মী নিতে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জিটুজি প্লাস চুক্তি স্বাক্ষরের পরের দিনই তা স্থগিত ঘোষণা করে মালয়েশিয়া সরকার।

পরবর্তীতে অনেক আলোচনার পর ২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে দেশটিতে কর্মী যাওয়া শুরু করে। ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ার দায়িত্ব পায়। অনলাইন পদ্ধতিতে এখন পর্যন্ত দুই লক্ষাধিক কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছে। তবে মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মী পাঠানোর একচেটিয়া ব্যবসায় অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া ও নানা অনিমের অভিযোগ ওঠে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশীয় কোম্পানি সিনারফ্ল্যাক্সের অনলাইন সিস্টেম ‘এসপিপিএ’ বাতিল ঘোষণা করে মালয়েশিয়া। তবে এই প্রক্রিয়ায় ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাদের ভিসা ও অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে তারা মালয়েশিয়া যেতে পারবে বলে জানায় দেশটি।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বায়রা সূত্রে জানা যায়, আজকের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিংয়ে কীভাবে স্থগিত থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হবে সেটিই প্রধান আলোচ্য বিষয়। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক ড. সেলিম রেজা গতকাল এ প্রতিবেদককে জানান, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণ নিয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে। অনলাইন সিস্টেম ‘এসপিপিএ’ বাতিল হওয়ায় এ বৈঠকে তারা (মালয়েশিয়া) বিকল্প কী ধরনের প্রস্তাব দেয় তার ওপর আলোচনা হবে। রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান এ প্রতিবেদককে বলেন, কালকের (আজ) মিটিংয়ে শ্রমবাজার উন্মুক্ত নিয়ে আলোচনা হবে।

আমরা আশা করবো নতুন অনলাইন সিস্টেমে হোক আর আপাতত ম্যানুয়েল সিস্টেমে হোক যেকোনোভাবে যেন বাজারটা উন্মুক্ত হয় (স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার)। আমরা এও আশা করবো আমাদের সবাই (সব রিক্রুটিং এজেন্সি) যেন সেখানে ব্যবসা করতে পারে। বায়রার পক্ষ থেকে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে গতকাল এবং পরশুদিন মিটিং হয়েছে। সেখানে কী ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে বায়রা মহাসচিব বলেন, আমরা আমাদের বিভিন্ন সুপারিশ ও প্রস্তাব তাদের কাছে দিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে মিনিমাম অভিবাসন ব্যয় (এক লাখ ৬০ হাজার টাকা) এবং যেসব কর্মী যাবে তাদের নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত করা হয়। সূত্রে জানা যায়, জিটুজি থেকে বিটুবি এবং পরে জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে চুক্তির প্রক্রিয়া চলাকালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত দুজন শীর্ষ ব্যবসায়ী দাতো আমিন নূর ও দাতো হানিফ অনলাইন সিস্টেম নিজেদের আয়ত্তে নিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।

শেষ পর্যন্ত জিটুজি প্লাস চুক্তির আলোকে ‘এসপিপিএ’ অনলাইন সিস্টেমের দায়িত্ব পায় দাতো আমিন নূরের প্রতিষ্ঠান সিনারফ্ল্যাক্স। তবে এটি বাতিল হওয়ার পর ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেন দাতো হানিফ। ইতোমধ্যে তিনি প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ও বায়রাসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে একাধিক বৈঠকও করেছেন। সূত্র জানায়, এসপিপিএ সিস্টেমে চালু মেডিকেল সেন্টারগুলো নতুন সিস্টেম চালু হওয়ার পর বহাল থাকবে নাকি বাতিল হবে তা এখন চূড়ান্ত হয়নি। দাতো হানিফ নতুন সিস্টেমে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল সেন্টার স্থাপনের দায়িত্ব নিতে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের প্রভাবশালী মহলের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। অসমর্থিত একটি সূত্র জানায়, শুধু মেডিকেল সেন্টার নয়, নতুন সিস্টেমে বড় পরিসরে আরেকটি সিডিকেশন করার জন্যও একটি মহল দৌড়ঝাঁপ করছেন। সেক্ষেত্রে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি রেখে এতে আরও ৫০-৬০ রিক্রুটিং এজেন্সি যুক্ত করতে চাচ্ছে।

যুক্তি দেওয়া হচ্ছে দেশে এক হাজারেরও বেশি রিক্রুটিং এজেন্সি। সবাই কাজ করার সুযোগ পেলে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের মতো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে। সেক্ষেত্রে ‘ক্লিন ইমেজ’র রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে দায়িত্ব দিলে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানো সহজ হবে। এ যুক্তি সরকারের উপর মহলেও পৌঁছানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে, কোন প্রক্রিয়ায় কবে নাগাদ স্থগিত হওয়া মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে শ্রমকি পাঠানো শুরু করা যাবে তা আজকের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় চূড়ান্ত হবে। বাংলাদেশের প্রত্যাশা অনলাইন হোক আর ম্যানুয়েলেই হোক দ্রুততম সময়ে যেন জটিলতা দূরিভূত হয়ে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো সম্ভব হয়। শেষ পর্যন্ত কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসছে সেজন্য আজকের বৈঠকের পরই জানা যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর