ঢাকা ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্লভ দর্শন বড় সুইচোরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:২১:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৮
  • ৩৮৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুর্লভ আবাসিক পাখি। স্লিম গড়ন। সুদর্শনও বটে। চাহনি রুক্ষ হলেও স্বভাবে হিংস নয়। যত্রতত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। মাঝে মধ্যে দেখা মেলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আর্দ্র পাতাঝরা ও চিরসবুজ অরণ্যের স্রোতধারায় বা আবাদযোগ্য জমির আশপাশে। বিশেষ করে অরণ্যের ভেতর ফাঁকা স্থানে বা জলাশয়ের কিনারে গাছের ওপর একাকী বসে থাকে শিকারের প্রতিক্ষায়। তবে যেখানেই বসুক না কেন, আশপাশটা ঝোপ, জঙ্গল, লতাপাতা কিংবা ঘন ডালপালাবিহীন মুক্তাঞ্চল হওয়া চাই।

যাতে করে কিছু সময় পর পর উড়তে সুবিধা হয়। সব ধরনের সুইচোরা পাখি উড়ন্ত অবস্থায়ই পতঙ্গ শিকার করে। এদের ক্ষেত্রেও তা লক্ষ্য করা যায়। দৃষ্টিসীমার মধ্যে যে কোনো ধরনের কীটপতঙ্গ আঁটকে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ছোঁ মেরে পাকড়ে ফেলে। আবার জলপানেও রয়েছে বৈচিত্রতা। জলের ওপর উড়ে উড়ে ছোঁ মেরে জলপান করে। স্থিরতা এদের মাঝে খুবই কম। কোথাও একদণ্ড বসে থাকার ফুরসৎ নেই যেন। বিরক্ত হলে ‘কর-র-র..কর-রর..’ কণ্ঠে আওয়াজ করে।

বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে বিশ্বে বিপদমুক্ত ঘোষণা করলেও বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত।

পাখির বাংলা নাম: ‘বড় সুইচোরা’, ইংরেজি নাম: ‘ব্লু-বিয়ার্ডেড বি-ইটার’ (Blue-bearded Bee-eater), বৈজ্ঞানিক নাম: Nyctyornis athertoni। এরা ‘নীলদাড়ি সুইচোর’ বা ‘পাহাড়ি সুইচোরা’ নামেও পরিচিত।

প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য লম্বায় ৩৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তফাৎ নেই। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কপাল নীল। ঘাড়, পিঠ ও লেজ সবুজ। লেজের নিচের দিক হলুদাভ। লেজের ডগা ভোঁতা। ডানার নিচের পালক হলুদাভ-পীতাভ। গলায় রয়েছে দাড়ি সাদৃশ্য নীল রঙের পালক। যা বুকের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। বুক কালচে নীল। পেট হলুদাভ-পীতাভ ডোরা। বাঁকানো ঠোঁট শিঙ-বাদামি রঙের। নিচের ঠোঁটের গোড়া ধূসর। চোখ উজ্জ্বল সোনালি-কমলা। পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে সবুজ। অপ্রাপ্তবয়স্কদের নীলদাড়ি থাকে না।

প্রধান খাবার: মৌমাছি, ফড়িং, বোলতা, গোবরেপোকা ইত্যাদি। ফুলের মধুর প্রতি যথেষ্ট আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট। বন-জঙ্গল বেষ্টিত জলাধারের খাড়া কিনারে অথবা পাহাড়ের গায়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ফুটতে সময় লাগে ২০-২১ দিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

দুর্লভ দর্শন বড় সুইচোরা

আপডেট টাইম : ০৪:২১:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দুর্লভ আবাসিক পাখি। স্লিম গড়ন। সুদর্শনও বটে। চাহনি রুক্ষ হলেও স্বভাবে হিংস নয়। যত্রতত্র দেখা যাওয়ার নজির নেই। মাঝে মধ্যে দেখা মেলে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আর্দ্র পাতাঝরা ও চিরসবুজ অরণ্যের স্রোতধারায় বা আবাদযোগ্য জমির আশপাশে। বিশেষ করে অরণ্যের ভেতর ফাঁকা স্থানে বা জলাশয়ের কিনারে গাছের ওপর একাকী বসে থাকে শিকারের প্রতিক্ষায়। তবে যেখানেই বসুক না কেন, আশপাশটা ঝোপ, জঙ্গল, লতাপাতা কিংবা ঘন ডালপালাবিহীন মুক্তাঞ্চল হওয়া চাই।

যাতে করে কিছু সময় পর পর উড়তে সুবিধা হয়। সব ধরনের সুইচোরা পাখি উড়ন্ত অবস্থায়ই পতঙ্গ শিকার করে। এদের ক্ষেত্রেও তা লক্ষ্য করা যায়। দৃষ্টিসীমার মধ্যে যে কোনো ধরনের কীটপতঙ্গ আঁটকে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ছোঁ মেরে পাকড়ে ফেলে। আবার জলপানেও রয়েছে বৈচিত্রতা। জলের ওপর উড়ে উড়ে ছোঁ মেরে জলপান করে। স্থিরতা এদের মাঝে খুবই কম। কোথাও একদণ্ড বসে থাকার ফুরসৎ নেই যেন। বিরক্ত হলে ‘কর-র-র..কর-রর..’ কণ্ঠে আওয়াজ করে।

বাংলাদেশ ছাড়া বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত। আইইউসিএন প্রজাতিটিকে বিশ্বে বিপদমুক্ত ঘোষণা করলেও বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণিতে রয়েছে। বাংলদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এরা সংরক্ষিত।

পাখির বাংলা নাম: ‘বড় সুইচোরা’, ইংরেজি নাম: ‘ব্লু-বিয়ার্ডেড বি-ইটার’ (Blue-bearded Bee-eater), বৈজ্ঞানিক নাম: Nyctyornis athertoni। এরা ‘নীলদাড়ি সুইচোর’ বা ‘পাহাড়ি সুইচোরা’ নামেও পরিচিত।

প্রজাতির গড় দৈর্ঘ্য লম্বায় ৩৬ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তফাৎ নেই। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কপাল নীল। ঘাড়, পিঠ ও লেজ সবুজ। লেজের নিচের দিক হলুদাভ। লেজের ডগা ভোঁতা। ডানার নিচের পালক হলুদাভ-পীতাভ। গলায় রয়েছে দাড়ি সাদৃশ্য নীল রঙের পালক। যা বুকের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। বুক কালচে নীল। পেট হলুদাভ-পীতাভ ডোরা। বাঁকানো ঠোঁট শিঙ-বাদামি রঙের। নিচের ঠোঁটের গোড়া ধূসর। চোখ উজ্জ্বল সোনালি-কমলা। পা ও পায়ের পাতা ফ্যাকাসে সবুজ। অপ্রাপ্তবয়স্কদের নীলদাড়ি থাকে না।

প্রধান খাবার: মৌমাছি, ফড়িং, বোলতা, গোবরেপোকা ইত্যাদি। ফুলের মধুর প্রতি যথেষ্ট আসক্তি রয়েছে। প্রজনন মৌসুম ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট। বন-জঙ্গল বেষ্টিত জলাধারের খাড়া কিনারে অথবা পাহাড়ের গায়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩-৬টি। ফুটতে সময় লাগে ২০-২১ দিন।