ঢাকা ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাপলার বিল হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩৪:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ অক্টোবর ২০১৮
  • ৩৬৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বরিশালে আগেও কয়েকবার গিয়েছি, কেউ কোনোদিন বলেননি শাপলার বিল দেখার কথা। এবার ঘটলো ব্যতিক্রম। ১৮ অক্টোবর স্বল্প সময়ের জন্য বরিশাল গিয়েছিলাম। বেশ কয়েকজন বললেন, আর কিছু দেখেন না দেখেন, শাপলার বিল দেখতে ভুলবেন না। মনে পড়লো, মাত্র কদিন আগেই সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত ফেসবুকে সস্ত্রীক শাপলার বিল থেকে একটি ছবি পোস্ট দিয়েছেন, যেটা আমার নজর কেড়েছিল। বরিশাল গিয়ে তাই শাপলার বিল দেখার আগ্রহ দমন করতে পারিনি। আমার সঙ্গে ছিলেন কলকাতা থেকে আসা আমার কয়েকজন আত্মীয় এবং আমার বুয়েট পড়ুয়া পুত্র।

১৯ অক্টোবর সকালে বরিশাল শহর থেকে রওয়ানা দেই শাপলার বিল দেখতে। বিলটি উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামে। পাকা সড়ক লাগোয়া এতো সুন্দর একটি বিল কেন এতোদিন সেভাবে কারো মনোযোগ কাড়েনি, বুঝতে পারিনি। কোনো সংবাদপত্রে এই বিল নিয়ে আগে কখনো কোনো লেখা ছাপা হয়েছে বলেও মনে করতে পারছি না। বরিশাল শহর থেকে খুব দূরেও নয়। ৬০ কিলোমিটার। বড়জোড় ঘণ্টা দেড়েকের মতো সময় লাগে। যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো। তাহলে প্রকৃতির এক পরম সৌন্দর্য ছড়ানো এই বিলটি কেন উপেক্ষিত থেকেছে? এ প্রশ্নের জবাব সম্ভবত কারো কাছেই নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণেই হয়তো এই বিলের কথা অনেকেই জানছেন।

ঘর থেকে দু’পা বাড়িয়ে চোখ মেলে আমরা যে আমাদের দেশটিকে এখনও দেখে উঠতে পারিনি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দেশে অফুরন্ত সম্পদ নেই। আবার প্রকৃতি ছড়িয়েছিটিয়ে যা দিয়েছে তার সবটুকু আমরা কাজে লাগিয়ে একে ‘প্রকৃত’ সম্পদে পরিণত করতে পারছি না বা এখনও পেরে উঠিনি। সরকার একটু নজর দিলেই সাতলার বিল, যেটা এখন শাপলা বিল হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে, হয়ে উঠতে পারে একটি মৌসুমী পর্যটন কেন্দ্র। যদি যথাযথভাবে প্রচারণা চালানো যায়, তাহলে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করাও কঠিন হবে না। অতি প্রত্যুষে যখন লাল শাপলা ফুটে থাকে বিলময়, কি যে সুন্দর লাগে দেখতে সেটা ভাষায় বর্ণনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। পানির ওপর ভেসে আছে সবুজ পাতা তার ওপর মাথার মুকুটের মতো শোভা পাচ্ছে প্রস্ফূটিত লাল শাপলা। চোখ জুড়ানো, মন ভরানো এই রূপমনোহর না দেখলে উপলব্ধিতে আসবে না কিছুই। সঙ্গীতের সুরলহরি যেমন নিজের কানে শুনতে হয়, লাল শাপলার অপরূপ শোভাও নিজের চোখেই দেখতে হবে।

বিলের মোট আয়তন কত সেটা জানানোর মতো কাউকে পাইনি। তবে এটা জেনেছি যে, লাল শাপলা দেখা যায় ১২ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে। বিল বিস্তৃত আরো বেশি এলাকা জুড়ে। বিলটা কিছুটা গোলাকৃতির। তিন রঙের শাপলা ফুটলেও লালটাই সবার নজরে পড়ে। সাদা এবং বেগুনি রঙের শাপলাও আছে। সাদা শাপলা বিক্রি হয়। মানুষ সবজি হিসেবে খায়। আবার বিলের মাছেদেরও প্রিয় খাবার সাদা শাপলা। লাল শাপলা মাছেও খায় না, মানুষেও না। তাই বিলে সাদা ও বেগুনি শাপলার অংশটা আমরা গিয়ে ফাঁকা পেলেও অন্য অংশজুড়ে ফুটে থাকতে দেখি থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলার মতো লাল শাপলা। দেখে দেখে আঁখি না ফেরে।

শাপলা সাধারণত ফোটে রাতে। সকাল নয়টা-দশটা পর্যন্ত ফোটা শাপলা দেখা যায়। তারপর আবার বুজে যায় বা কলি হয়ে যায়। একেবারে সূর্যোদয় থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত শাপলা বিল দেখার উপযুক্ত সময়। এরপর গেলে দেখা যাবে কলি। মনে রাখতে হবে, ফোটা শাপলার সৌন্দর্যই আলাদা।

শাপলার বিলে আনুমানিক ছয় মাস পানি থাকে। ছয় মাস থাকে না। তখন বিলজুড়ে ধান চাষ হয়। ধানের ফলনও হয় ভালো। ধানের কাঁচা এবং পাকা দুই সময়ের সৌন্দর্য দুই রকম। প্রথম পর্যায়ে সবুজের সমারোহ, যেন সবুজ শাড়ি ও সবুজ টিপ পরা গ্রাম্য নারীর মুচকি হাসি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবার যেন গায়েগতরে সোনালী গহনা জড়ানো খিলখিল হাসি। তখনও বিল যেন সেজে থাকে অতিথি বরণের ডালা সাজিয়ে।

বর্ষায় যখন বিলে পানি আসতে শুরু করে তখন থেকেই আরম্ভ শাপলার মৌসুম। নভেম্বর মাস পর্যন্ত শাপলা থাকে। বিলে লাল শাপলা পর্যন্ত যেতে হলে নৌকা নিতে হবে। কিছু কিছু মানুষ বিল দেখতে যাচ্ছেন। তাদের সুবিধার জন্য স্থানীয় ব্যক্তিরা বেশ কয়েকটি নৌকার ব্যবস্থাও করেছেন। ভাড়া নিতে হয়। ভাড়ার পরিমাণটা একটু বেশি। প্রতি নৌকায় চার-পাঁচ জন যাওয়া যায়। ভাড়া দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। পুরো বিলটি নৌকায় ঘুরে দেখতে ঘণ্টা খানেক সময় লাগে। দিনদিন দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে।

সরকারের উচিত শাপলার বিল এলাকায় একটি মৌসুমী পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা । এজন্য বিশাল অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন নেই। বিল এলাকায় পর্যটকদের রাতে থাকার জন্য কিছু কটেজ, রিসোর্ট তৈরি করা। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা এবং কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে নৌকা ভাড়া পাওয়ার ব্যবস্থা করা। বিদেশিদের আকৃষ্ট করার জন্য কিছু প্রচারণার ব্যবস্থা করা। আমরা আশা করবো, পর্যটন মন্ত্রণালয় অন্তত বিষয়টি ভেবে দেখবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

শাপলার বিল হতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন

আপডেট টাইম : ০৪:৩৪:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ অক্টোবর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বরিশালে আগেও কয়েকবার গিয়েছি, কেউ কোনোদিন বলেননি শাপলার বিল দেখার কথা। এবার ঘটলো ব্যতিক্রম। ১৮ অক্টোবর স্বল্প সময়ের জন্য বরিশাল গিয়েছিলাম। বেশ কয়েকজন বললেন, আর কিছু দেখেন না দেখেন, শাপলার বিল দেখতে ভুলবেন না। মনে পড়লো, মাত্র কদিন আগেই সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত ফেসবুকে সস্ত্রীক শাপলার বিল থেকে একটি ছবি পোস্ট দিয়েছেন, যেটা আমার নজর কেড়েছিল। বরিশাল গিয়ে তাই শাপলার বিল দেখার আগ্রহ দমন করতে পারিনি। আমার সঙ্গে ছিলেন কলকাতা থেকে আসা আমার কয়েকজন আত্মীয় এবং আমার বুয়েট পড়ুয়া পুত্র।

১৯ অক্টোবর সকালে বরিশাল শহর থেকে রওয়ানা দেই শাপলার বিল দেখতে। বিলটি উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামে। পাকা সড়ক লাগোয়া এতো সুন্দর একটি বিল কেন এতোদিন সেভাবে কারো মনোযোগ কাড়েনি, বুঝতে পারিনি। কোনো সংবাদপত্রে এই বিল নিয়ে আগে কখনো কোনো লেখা ছাপা হয়েছে বলেও মনে করতে পারছি না। বরিশাল শহর থেকে খুব দূরেও নয়। ৬০ কিলোমিটার। বড়জোড় ঘণ্টা দেড়েকের মতো সময় লাগে। যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো। তাহলে প্রকৃতির এক পরম সৌন্দর্য ছড়ানো এই বিলটি কেন উপেক্ষিত থেকেছে? এ প্রশ্নের জবাব সম্ভবত কারো কাছেই নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণেই হয়তো এই বিলের কথা অনেকেই জানছেন।

ঘর থেকে দু’পা বাড়িয়ে চোখ মেলে আমরা যে আমাদের দেশটিকে এখনও দেখে উঠতে পারিনি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দেশে অফুরন্ত সম্পদ নেই। আবার প্রকৃতি ছড়িয়েছিটিয়ে যা দিয়েছে তার সবটুকু আমরা কাজে লাগিয়ে একে ‘প্রকৃত’ সম্পদে পরিণত করতে পারছি না বা এখনও পেরে উঠিনি। সরকার একটু নজর দিলেই সাতলার বিল, যেটা এখন শাপলা বিল হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে, হয়ে উঠতে পারে একটি মৌসুমী পর্যটন কেন্দ্র। যদি যথাযথভাবে প্রচারণা চালানো যায়, তাহলে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করাও কঠিন হবে না। অতি প্রত্যুষে যখন লাল শাপলা ফুটে থাকে বিলময়, কি যে সুন্দর লাগে দেখতে সেটা ভাষায় বর্ণনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। পানির ওপর ভেসে আছে সবুজ পাতা তার ওপর মাথার মুকুটের মতো শোভা পাচ্ছে প্রস্ফূটিত লাল শাপলা। চোখ জুড়ানো, মন ভরানো এই রূপমনোহর না দেখলে উপলব্ধিতে আসবে না কিছুই। সঙ্গীতের সুরলহরি যেমন নিজের কানে শুনতে হয়, লাল শাপলার অপরূপ শোভাও নিজের চোখেই দেখতে হবে।

বিলের মোট আয়তন কত সেটা জানানোর মতো কাউকে পাইনি। তবে এটা জেনেছি যে, লাল শাপলা দেখা যায় ১২ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে। বিল বিস্তৃত আরো বেশি এলাকা জুড়ে। বিলটা কিছুটা গোলাকৃতির। তিন রঙের শাপলা ফুটলেও লালটাই সবার নজরে পড়ে। সাদা এবং বেগুনি রঙের শাপলাও আছে। সাদা শাপলা বিক্রি হয়। মানুষ সবজি হিসেবে খায়। আবার বিলের মাছেদেরও প্রিয় খাবার সাদা শাপলা। লাল শাপলা মাছেও খায় না, মানুষেও না। তাই বিলে সাদা ও বেগুনি শাপলার অংশটা আমরা গিয়ে ফাঁকা পেলেও অন্য অংশজুড়ে ফুটে থাকতে দেখি থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলার মতো লাল শাপলা। দেখে দেখে আঁখি না ফেরে।

শাপলা সাধারণত ফোটে রাতে। সকাল নয়টা-দশটা পর্যন্ত ফোটা শাপলা দেখা যায়। তারপর আবার বুজে যায় বা কলি হয়ে যায়। একেবারে সূর্যোদয় থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত শাপলা বিল দেখার উপযুক্ত সময়। এরপর গেলে দেখা যাবে কলি। মনে রাখতে হবে, ফোটা শাপলার সৌন্দর্যই আলাদা।

শাপলার বিলে আনুমানিক ছয় মাস পানি থাকে। ছয় মাস থাকে না। তখন বিলজুড়ে ধান চাষ হয়। ধানের ফলনও হয় ভালো। ধানের কাঁচা এবং পাকা দুই সময়ের সৌন্দর্য দুই রকম। প্রথম পর্যায়ে সবুজের সমারোহ, যেন সবুজ শাড়ি ও সবুজ টিপ পরা গ্রাম্য নারীর মুচকি হাসি। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবার যেন গায়েগতরে সোনালী গহনা জড়ানো খিলখিল হাসি। তখনও বিল যেন সেজে থাকে অতিথি বরণের ডালা সাজিয়ে।

বর্ষায় যখন বিলে পানি আসতে শুরু করে তখন থেকেই আরম্ভ শাপলার মৌসুম। নভেম্বর মাস পর্যন্ত শাপলা থাকে। বিলে লাল শাপলা পর্যন্ত যেতে হলে নৌকা নিতে হবে। কিছু কিছু মানুষ বিল দেখতে যাচ্ছেন। তাদের সুবিধার জন্য স্থানীয় ব্যক্তিরা বেশ কয়েকটি নৌকার ব্যবস্থাও করেছেন। ভাড়া নিতে হয়। ভাড়ার পরিমাণটা একটু বেশি। প্রতি নৌকায় চার-পাঁচ জন যাওয়া যায়। ভাড়া দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। পুরো বিলটি নৌকায় ঘুরে দেখতে ঘণ্টা খানেক সময় লাগে। দিনদিন দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে।

সরকারের উচিত শাপলার বিল এলাকায় একটি মৌসুমী পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা । এজন্য বিশাল অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন নেই। বিল এলাকায় পর্যটকদের রাতে থাকার জন্য কিছু কটেজ, রিসোর্ট তৈরি করা। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা এবং কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে নৌকা ভাড়া পাওয়ার ব্যবস্থা করা। বিদেশিদের আকৃষ্ট করার জন্য কিছু প্রচারণার ব্যবস্থা করা। আমরা আশা করবো, পর্যটন মন্ত্রণালয় অন্তত বিষয়টি ভেবে দেখবে।