ঢাকা ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্লভ আবাসিক পাখি ‘বড় আকারের মাছরাঙা’

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৪:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ অক্টোবর ২০১৮
  • ৪৪০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মেঘলা আকাশ। ইতোমধ্যে নিম্নচাপের একটা দখল চলছে দেশব্যাপী। মেঘযুক্ত আকাশে ভাজে ভাজে জমা শরৎবৃষ্টির পূর্বাভাস। গ্রামের পথে চলতে হঠাৎ কোনো বিরল মুহূর্তে একটি পাখি যেন আপন মনে বলছে- ‘মেঘহও, মেঘহও।’ আসলেই কি তখন তা চমকে উঠার মতো! মেঘ মানে বৃষ্টি, বলছে বৃষ্টি নামো। তবে আসলে কি তাই? তার ডাকের প্রকাশভঙ্গি বা স্বরের প্রক্ষেপণই আসলে এমন। শুনলে মনে হয়- মেঘ হওয়ার জন্য যেন বলছে।

এটি বড় আকারের মাছরাঙা। দেখতে আমাদের শালিকদের মতো। দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার। দেহ বাদামি। তবে ডানা ও লেজ নীল। মাথা ও ঘাড় বাদামি। এদের ছোরার মতো রক্তলাল ঠোঁট রয়েছে। তবে ঠোঁটের অগ্রভাগ কালচে। এরা আমাদের দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। অর্থাৎ খুব কম তাদের দেখা যায়।

Image result for মাছরাঙা’ পাখির ছবি
এক গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে যাওয়ার সময় ডাকে ‘ক্যা-ক্যা-ক্যা’ স্বরে।’ আর প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখিটি সঙ্গিনীর উদ্দেশ্যে ‘পীউ-পীউ পীউ-পীউ পীউ-পীউ’ সুরেলা স্বরে অবিরাম ডেকে চলে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

বন্যপ্রাণী বিষয়ক লেখক, গবেষক এবং পরিবেশবিদ আলম শাইন বাংলানিউজকে বলেন, আপনি গ্রামের পথে চলতে গিয়ে হঠাৎ হয়তো কানে ভেসে আসবে ‘মেঘহও মেঘহও’ ধ্বনি। স্বভাবতই তখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- কার মেঘের প্রয়োজন? আসলে বিষয়টা হলো- যার কণ্ঠ থেকে এমন স্বর বেরুচ্ছে সেটা যে সে বুঝেশুনে বলছে তা কিন্তু কখনোই নয়। কারণ একটি পাখির কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত ধ্বনিই প্রায় এমন। এটি কিন্তু ধারণানির্ভর বা অনুমানভিত্তিক।

Related image
তিনি আরও বলেন, এই মেঘহও মাছরাঙার ইংরেজি নাম ‘স্টর্ক বিলর্ড কিংফিশার’ (Stork-billed Kingfisher) এবং বৈজ্ঞানিক নাম Halcyon Capensis। তবে একে কিন্তু ‘মিস্ট্রি বার্ড’ কিংবা ‘মিসলিডিং বার্ড’ও বলা হয়। এর বাংলা তর্জমা হলো ‘রহস্যময়’ কিংবা ‘বিভ্রান্তিকর’। কেন এমন শব্দে তাকে বলা হয় এর কারণ অজানা।

উল্লেখযোগ্য একটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা কিন্তু অন্য মাছরাঙাদের মতো এক্কেবারে মাছের উপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল পাখি নয়। মাছের পাশাপাশি অন্য ছোট ছোট প্রাণীও খেয়ে থাকে। যেমন- ইঁদুর, ব্যাঙ প্রভৃতি। বৃষ্টি হলে তো ব্যাঙের আবির্ভাব হয়, তাই ব্যাঙের লোভেই এরা মেঘহও মেঘহও বলে ডাকে কি না–তা কেই বা বলতে পারে!

এ পাখি জলাশয়ের আশপাশে বেশিরভাগ সময় বিচরণ করে। শিকারের আশায় চুপচাপ বসে থাকে। তবে জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করলেও পাশাপাশি বসে না বলে জানান বন্যপ্রাণি বিষয়ক লেখক, গবেষক এবং পরিবেশবিদ আলম শাইন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

দুর্লভ আবাসিক পাখি ‘বড় আকারের মাছরাঙা’

আপডেট টাইম : ১২:০৪:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ অক্টোবর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মেঘলা আকাশ। ইতোমধ্যে নিম্নচাপের একটা দখল চলছে দেশব্যাপী। মেঘযুক্ত আকাশে ভাজে ভাজে জমা শরৎবৃষ্টির পূর্বাভাস। গ্রামের পথে চলতে হঠাৎ কোনো বিরল মুহূর্তে একটি পাখি যেন আপন মনে বলছে- ‘মেঘহও, মেঘহও।’ আসলেই কি তখন তা চমকে উঠার মতো! মেঘ মানে বৃষ্টি, বলছে বৃষ্টি নামো। তবে আসলে কি তাই? তার ডাকের প্রকাশভঙ্গি বা স্বরের প্রক্ষেপণই আসলে এমন। শুনলে মনে হয়- মেঘ হওয়ার জন্য যেন বলছে।

এটি বড় আকারের মাছরাঙা। দেখতে আমাদের শালিকদের মতো। দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার। দেহ বাদামি। তবে ডানা ও লেজ নীল। মাথা ও ঘাড় বাদামি। এদের ছোরার মতো রক্তলাল ঠোঁট রয়েছে। তবে ঠোঁটের অগ্রভাগ কালচে। এরা আমাদের দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। অর্থাৎ খুব কম তাদের দেখা যায়।

Image result for মাছরাঙা’ পাখির ছবি
এক গাছ থেকে অন্য গাছে উড়ে যাওয়ার সময় ডাকে ‘ক্যা-ক্যা-ক্যা’ স্বরে।’ আর প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখিটি সঙ্গিনীর উদ্দেশ্যে ‘পীউ-পীউ পীউ-পীউ পীউ-পীউ’ সুরেলা স্বরে অবিরাম ডেকে চলে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

বন্যপ্রাণী বিষয়ক লেখক, গবেষক এবং পরিবেশবিদ আলম শাইন বাংলানিউজকে বলেন, আপনি গ্রামের পথে চলতে গিয়ে হঠাৎ হয়তো কানে ভেসে আসবে ‘মেঘহও মেঘহও’ ধ্বনি। স্বভাবতই তখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- কার মেঘের প্রয়োজন? আসলে বিষয়টা হলো- যার কণ্ঠ থেকে এমন স্বর বেরুচ্ছে সেটা যে সে বুঝেশুনে বলছে তা কিন্তু কখনোই নয়। কারণ একটি পাখির কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত ধ্বনিই প্রায় এমন। এটি কিন্তু ধারণানির্ভর বা অনুমানভিত্তিক।

Related image
তিনি আরও বলেন, এই মেঘহও মাছরাঙার ইংরেজি নাম ‘স্টর্ক বিলর্ড কিংফিশার’ (Stork-billed Kingfisher) এবং বৈজ্ঞানিক নাম Halcyon Capensis। তবে একে কিন্তু ‘মিস্ট্রি বার্ড’ কিংবা ‘মিসলিডিং বার্ড’ও বলা হয়। এর বাংলা তর্জমা হলো ‘রহস্যময়’ কিংবা ‘বিভ্রান্তিকর’। কেন এমন শব্দে তাকে বলা হয় এর কারণ অজানা।

উল্লেখযোগ্য একটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা কিন্তু অন্য মাছরাঙাদের মতো এক্কেবারে মাছের উপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল পাখি নয়। মাছের পাশাপাশি অন্য ছোট ছোট প্রাণীও খেয়ে থাকে। যেমন- ইঁদুর, ব্যাঙ প্রভৃতি। বৃষ্টি হলে তো ব্যাঙের আবির্ভাব হয়, তাই ব্যাঙের লোভেই এরা মেঘহও মেঘহও বলে ডাকে কি না–তা কেই বা বলতে পারে!

এ পাখি জলাশয়ের আশপাশে বেশিরভাগ সময় বিচরণ করে। শিকারের আশায় চুপচাপ বসে থাকে। তবে জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করলেও পাশাপাশি বসে না বলে জানান বন্যপ্রাণি বিষয়ক লেখক, গবেষক এবং পরিবেশবিদ আলম শাইন।